রামগড়ে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনের শিকার হয়ে দুই গৃহবধূ হাসপাতালে
রামগড় প্রতিনিধি:
খাগড়াছড়ির রামগড়ে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের হাতে নির্যাতিত হয়ে শারমিন আক্তার(২০) ও বৃষ্টি ত্রিপুরা(২৩) নামে দুই গৃহবধূ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের অভিযোগ, যৌতুকের দাবি না মেটানোয় এবং স্বামীকে জায়গা লিখে না দেয়ায় তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়।
রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন বৃষ্টি ত্রিপুরা অভিযোগ করে বলেন, সোমবার রাতে তার স্বামী পিপলু ত্রিপুরা কয়েকজন সঙ্গিকে নিয়ে তার পৈতৃক বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় তারা ঘরবাড়ি ভাংচুর করে এবং তাকে ও তার বৃদ্ধ মা হিমুলতা বৈষ্ণব(৬০)কে মারধর করে। আহত অবস্থায় তাকে সোমবার রাত ১২টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উপজেলার ইসলামপুর বল্টুরামটিলার পার্শবর্তী হকটিলায় তাদের বাড়ি। তিনি ওই গ্রামের অনন্ত ত্রিপুরার কন্যা।
বৃষ্টি আরও অভিযোগ করে বলেন, স্বামী পিপলু মদ্যপ অবস্থায় সোমবার দুপুরে ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। এ ঘটনার পর সন্ধ্যায় থানায় গিয়ে অভিযোগ দেয়ায় সে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে সে সঙ্গীদের সাথে তার পৈতৃক বাসায় হামলা করে। বৃষ্টি জানায়, তিনি চট্টগ্রামে একটি কোম্পানিতে চাকুরি করেন। তার দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, পৈতৃকভাবে পাওয়া তার নামে রেকর্ডীয় জায়গাটি লিখে দিতে দীর্ঘদিন ধরে পিপলু তাকে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু তিনি এতে রাজী না হওয়ায় তার ওপর হামলা ও ঘরে আগুন দিয়েছে সে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অপর নির্যাতিতা অন্তঃস্বত্বা গৃহবধূ শাহানা আক্তারের পিতা মীর হোসেন অভিযোগ করে বলেন, গত প্রায় আট মাস আগে উপজেলার তৈচালাপাড়ার বাসিন্দা মৃত আলা উদ্দিনের ছেলে মুনতাসিরের সাথে তার কন্যা বিয়ে দেন। ঐ সময় তাদের দাবি অনুযায়ি ৪ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ দেড় লক্ষ টাকা ও ২০ হাজার টাকা মূল্যের একটি খাট দেয়া হয়। গত ৩ মাস থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করে স্বামী। এ টাকা দিতে না পারায় স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন দিনরাত তার মেয়ের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সর্বশেষ গত সোমবার রাতে স্বামী মুনতাসির, শাশুড়ি রোকেয়া বেগম, দেবর মো. রাজু, শামিম, ননদ জেসমিনসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার ৬ মাসের অন্তঃসত্বা কন্যাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। তাদের বেদম মারধরে সে অসুস্থ হয়ে পড়লেও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি তারা।
মঙ্গলবার খবর পেয়ে তিনি শ্বশুরবাড়ি থেকে আহত অবস্থা মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান। মীর হোসেন জানান, তার অন্তঃসত্বা মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে রামগড় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ ব্যাপারে রামগড় থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) তারেক মো. আব্দুল হান্নান বলেন, দুই গৃহবধূ নির্যাতনের ঘটনা তিনি অবগত হয়েছেন। তারা থানায় মামলা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।