রামুতে চাঁদা না পেয়ে প্রবাসীর পরিবারকে বাড়ি নির্মাণে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ

রামুতে চাঁদা না দেয়ায় প্রবাসীর পরিবারকে বসত বাড়ি নির্মাণে বাঁধা দেয়ার গুরতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাঁদাবাজ চক্রটি কয়েক বছর পূর্বে পরিবারের সদস্যরা প্রবাসে থাকার সুযোগে ওই বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়। বর্তমানে পুড়ে যাওয়া বাড়িটি পুন:নির্মাণ কাজ শুরু হলে চাঁদার দাবিতে বারবার কাজ চলাকালে হামলা চালায় চক্রটি। এমনকি এ বসত বাড়ি নিয়ে বিজ্ঞ আদালতের রায়কেও অবজ্ঞা করে নির্মাণ কাজে বাধা দেয়া হলে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। অমানবিক এ ঘটনাটি ঘটেছে রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের দেয়াংপাড়া শর্মাপাড়া এলাকায়।
এ নিয়ে হয়রানির শিকার ওই এলাকার মৃত দুলাল শর্মার ছেলে দীপক শর্মা ও সজল শর্মা জানান, ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত জমিতে তারা বংশপরম্পরায় শত বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। তারা বিদেশে থাকার সুযোগে ২০১৯ সালের ৪ মার্চ তাদের দীর্ঘদিনের পুরনো বসত বাড়িটি আগুনে পুড়িয়ে দেয় একই এলাকার মৃত ক্ষিরোদ শর্মার ছেলে সুমন শর্মা, স্বদীপ শর্মা, প্রদীপ শর্মা, মৃত ললিত শর্মার ছেলে সুভাষ শর্মা, সুভাষ শর্মার ছেলে সাগর শর্মা, মৃত অনিল শর্মার ছেলে মিশুক শর্মাসহ একটি সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্র। বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়ার পর পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ে। কিন্তু ওইসময় চক্রটি কৌশলে এ ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে আইনী পদক্ষেপ নিতে দেয়নি। ঘর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় জড়িত এসব ব্যক্তিরা পরবর্তীতে এখানে নতুন ঘর নির্মাণ করতে হলে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলো। কিন্তু নিঃস্ব পরিবারটি তাদের এ চাহিদা পূরণ করতে না পারায় নতুন ঘর নির্মাণে একের পর এক বাঁধা এবং ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে হামলা চালায়।
দীপক শর্মা ও সজল শর্মা আরো জানান, তাদের পৈত্রিক ভিটায় স্বত্ব কম থাকায় ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে তারা বিউটি শর্মা ও মৃদুল শর্মার কাছ থেকে ১০ কড়া জমি ক্রয় করেন। এরই প্রেক্ষিতে দীপক শর্মা, সজল শর্মা ও বিপ্লব শর্মার নামে বর্তমানে এ ১০ কড়া জমি সৃজিত খতিয়ানভুক্ত হয়েছে। যার খতিয়ান নং ৫৪৯৬। কিন্তু এরপরও চাঁদাবাজ চক্রটি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তাদের হয়রানি করতে উঠে-পড়ে লেগেছে।
এনিয়ে রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদ সজল শর্মা গং অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সালিশ বৈঠক শেষে জমি পরিমাপ করে ম্যাপ সহকারে আমার পক্ষে রায় দেন এবং আমাকে বসত বাড়ি করার জন্য অনুমতি দেন। কিন্তু এরপরও বাড়ি নির্মাণকালে বাঁধা ও হয়রানি অব্যাহত থাকলে আমরা নিরুপায় হয়ে কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এমআর মামলা (নং ৬৩৮ ) করি। মামলার প্রেক্ষিতে রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজল শর্মার পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরই প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত গত ২৫ জুলাই এ মামলায় বিরোধীয় জমিতে সজল শর্মা গং এর স্বত্বদখল বিদ্যমান থাকায় ২য় পক্ষ সুমন শর্মা গংকে প্রবেশে বারিত করে রায় দেন। একইদিন এ নিয়ে সুমন শর্মা গং কর্তৃক দায়েরকৃত এমআর মামলা (নং ৬৮২) খারিজ করে দেন।
দীপক শর্মা ও সজল শর্মা আরো জানান, তাদের প্রতিপক্ষ সুমন শর্মা, স্বদীপ শর্মা, সুভাষ শর্মা, মিশুক শর্মা এলাকার প্রভাবশালী ও ভূমিদস্যু প্রকৃতির। স্থানীয় কিছু দালাল শ্রেণির মানুষের সহায়তায় দীর্ঘদিন চক্রটি তাদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছে। এমনকি বিজ্ঞ আদালত, উপজেলা ভূমি অফিস, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ইউনিয়ন পরিষদের ধারাবাহিক রায় এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সালিশ উপেক্ষা করে চক্রটি এখনো তাদের বসত বাড়ি নির্মাণে বাধা দিয়ে আসছে।
এছাড়া বিজ্ঞ আদালত এ জমিতে অভিযুক্তদের প্রবেশে বারিত করলে রামু থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বিষয়টি অবহিত করে। এরপরও তারা পুলিশের নির্দেশ না মেনে নির্মাণকাজে বাঁধা দিয়ে আসছে। এভাবে হয়রানি অব্যাহত থাকলে তারা তাদের বসত বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া শুরু করবেন বলেও জানান সজল শর্মা ও তার পরিবারের সদস্যরা।