রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: আবারো হতাশ স্থানীয়রা
মিয়ানমারের পাঠানো তালিকাভুক্তদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর কেউ স্বদেশে ফিরতে রাজি না হওয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আপাতত স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম। তবে সাক্ষাৎকার গ্রহণ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এসময় চীন ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
রোহিঙ্গাদের কারণে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও নিত্য অপদস্ত স্থানীয় বাংলাদেশীরা প্রত্যাশা করে ছিলো এই বোধ হয়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হলো। তারা তাদের জমি জিরাত ফিরে পাবে। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবে। তবে এবারেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়ায় চরম হতাশা দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।
ঘোষিত প্রত্যাবাসনের দিন টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরে সাক্ষ্যৎকার দেওয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনার পর উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের ২৬ নম্বর ইউনিটে বৃহস্পতিবার ২২ আগস্ট বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দেয়া এক প্রেস ব্রিফিং এ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোঃ আবুল কালাম এনডিসি (অতিরিক্ত সচিব) এ কথা জানান।
এর আগে বুধবার শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার জানান, বৃহস্পতিবার থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য সব ধরনের প্রস্তুুতি নেওয়া হয়েছে। মঙ্গল ও বুধবার তারা মোট ২৩৫টি পরিবারের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের অনেকেই মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছিলেন। তাই ১০টি মাইক্রো, পাঁচটি বাস ও তিনটি ট্রাক প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। তবে যারা স্বেচ্ছায় গাড়িতে উঠবে মূলত তাদেরই প্রত্যাবাসন করা হবে, কাউকে জোর করা হবে না।
তিনি আরও জানান, ‘মিয়ানমার সরকারের দেওয়া ছাড়পত্র অনুযায়ী ১ হাজার ৩৭টি পরিবারের মোট ৩ হাজার ৫৪০ জনকে ফেরত নেওয়ার প্রথম তালিকাটি দেওয়া হয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী প্রস্তুুতি নিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে অন্যদের এই প্রক্রিয়ায় আনা হবে। কারণ এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।’
প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি হিসেবে টেকনাফের কেরুণতলী থেকে উখিয়া হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম এলাকা পর্যন্ত নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেখানে পুলিশ, র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়।
উল্লেখ্য, মিয়ানমার সরকারের কাছে বাংলাদেশ সরকারের দেয়া ২২ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর তালিকা থেকে গত ১৫ আগস্ট ৩ হাজার ৪ শ’ ৫০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর বৃহস্পতিবার ২২ আগস্ট মায়ানমারে স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়পত্র দেয়। এ ছাড়পত্রের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ সরকার প্রত্যাবাসনের জন্য সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা ও প্রস্তুতি সম্পন্ন করে।
রোহিঙ্গাদের স্বদেশে যেতে অনীহা
সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা স্বদেশে মিয়ানমারে ফিরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি। বরং সাক্ষাৎকার দেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ৫টি কড়া শর্ত দেয়। শর্তের মধ্যে মিয়ানমারে যাওয়ার আগে তাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেয়া, তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, উচ্ছেদকৃত বাড়িভিটে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের ফিরিয়ে দেয়া, জাতিসংঘের তত্বাবধানে রাখাইনে তাদের রাখা ইত্যাদি।
সাক্ষাৎকারে অনেকে প্রয়োজনে গুলি খাব, তারপরও এসব দাবী বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ফেরত যাবেনা বলে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ইউএনএইচসিআর-কর্তৃপক্ষকে সাফ জানিয়ে দেয়।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত বছরের ১৫ নভেম্বর নির্ধারিত সময়ে রোহিঙ্গাদের প্রতিবাদের মুখে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। ওই সময় উখিয়ার ঘুমধুম ও টেকনাফের নাফ নদীর তীরে কেরুণতলী (নয়াপাড়া) প্রত্যাবাসন ঘাট নির্মাণ করা হয়েছিল।
এরমধ্যে, টেকনাফের প্রত্যাবাসন ঘাটে নির্মাণ করা প্যারাবনের ভেতর দিয়ে লম্বা কাঠের জেটি, ৩৩টি আধাসেমি টিনের থাকার ঘর, চারটি শৌচাগার রয়েছে। সেখানে ১৬ আনসার ক্যাম্পের দায়িত্ব পালন করতো।
সম্প্রতি রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসনের খবর প্রচার হওয়ায় সেই সেট ও অবকাঠামো গুলো পুণরায় সংস্কার ও মেরামত করা হয়।