Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

১০ হাজারের বেশি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পার্বত্য অঞ্চল

অস্থির পাহাড় দিশেহারা মানুষ (২)

ততততত

আবু সালেহ আকন, পার্বত্যাঞ্চল থেকে ফিরে:

জেএসএস ও ইউপিডিএফের ১০ হাজারের বেশি সন্ত্রাসী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তিন পার্বত্য জেলা। পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, এরা সবাই নিজ নিজ সংগঠনের বেতনভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী। একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীতে যেরূপ পদ-পদবি রয়েছে এই সংগঠন দুটোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও তেমনি পদ-পদবি রয়েছে। তাদের বেতন স্কেলও রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের রয়েছে ঝুঁকি ভাতা।

দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কেউ যদি নিহত বা আহত হয় তবে তাদের জন্য রয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ। শুধু পাহাড়ি সন্ত্রাসীরাই নয়, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে আগত কিছু সন্ত্রাসীও জেএসএস ও ইউপিডিএফের হয়ে কাজ করছে।

স্থানীয় সূত্র এবং পুলিশ ও গোয়েন্দা তথ্য মতে তিন পার্বত্য জেলায় ১০ হাজারের ওপরে সশস্ত্র সন্ত্রাসী রয়েছে। এদের হাতে রয়েছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। এদের মধ্যে বান্দরবান উপজেলাতেই রয়েছে পাঁচ হাজারের মতো সন্ত্রাসী। এদের মধ্যে কয়েকজন হলো এস মং ওরফে মেজর আশিষ, মনি চিং মার্মা, কে চিং মার্মা, সিলিপ ত্রিপুরা, ধং চং মার্মা, রাজেন্দ্র ত্রিপুরা, চায়নু মার্মা, হাচিং মার্মা, অঙ্গ মার্মা, কৃষ্ট, রাংকুনু ত্রিপুরা, নিমন্দ্র ত্রিপুরা, ছলেমুল ত্রিপুরা, অতিরাম, র‌্যাংকনো, বিক্রম, জন বাহাদুর, মারুং, সুমন দাস, নিমন্ত্র ত্রিপুরা, হামাজন ত্রিপুরা, লেনছন মেন্ডেলা, অংশৈপ্রু, সরেন্দ্র, নকুল, উইলিয়াম, মনিচিং, চাকনাই মুরং, অং কে জ, জেরী ত্রিপুরা।

কিছু বাঙালি নামের সশস্ত্র সন্ত্রাসীও রয়েছে। নামে বাঙালি হলেও তারা প্রতিবেশী মিয়ানমারের নাগরিক বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে অন্যতম হলো মনছুর রহমান, জাকির হোসেন, শাহ আলম ও আব্বাস উদ্দিন।

চাঁদাবাজী

স্থানীয় সূত্র জানায়, কোথাও কোথাও জেএসএস আবার কোথাও ইউপিডিএফের আধিপত্য পুরো পাহাড়ে। তবে জেএসএস আর ইউপিডিএফ যে-ই হোক তাদের কর্মকাণ্ড সাধারণ পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে চরম আতঙ্কের। বাঙালিদের চেয়েও পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকেরা তাদের কাছে বেশি পণবন্দী।

এর কারণ হিসেবে জানা যায়, বাঙালিরা সাধারণত লোকালয়ে বসবাস করে। শহর কিংবা বাজারের আশপাশে দলবদ্ধ হয়ে এদের বসবাস। আর পাহাড়িরা গহিন অরণ্যে বসবাস করে। অনেক সময় দেখা যায় পাহাড়ের চূড়ায় হয়তো একাকী একটি বাড়িতে বসবাস করছে কোনো পাহাড়ি উপজাতি পরিবার। যে কারণে তাদের সন্ত্রাসীরা সহজেই টার্গেট করতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এদের মূল কাজ হচ্ছে চাঁদাবাজি। বিভিন্ন সেক্টর থেকে এরা চাঁদা আদায় করে থাকে। নিবন্ধিত কোনো দল না হলেও পাহাড়ের জেলা উপজেলায় এই দু’টি সংগঠনের দলীয় কার্যালয় রয়েছে। একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছর শুধু বান্দরবান থেকেই জেএসএস ৩০ কোটি টাকার চাঁদা তুলেছে। এ বছর তাদের টার্গেট হলো ৫০ কোটি টাকা। এই দিয়েই দলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, রেশন, অবসরকালীন ভাতা, ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি দেয়া হয়। এ ছাড়া পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলো চাঁদার এ অর্থ দিয়ে দেশ-বিদেশে বাঙালি বিদ্বেষী প্রচারণা ও তাদের অস্ত্র ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করার কাজ করে থাকে বলে একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়।

গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি কর বা ভ্যাটের ন্যায় এখানে প্রকাশ্যে চলে চাঁদাবাজি। সামান্য কলার ব্যবসা থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যবসা-বাণিজ্য, জেলে, খামার, ঠিকাদারি, উন্নয়নমূলক কাজ সব কিছু থেকে আদায় করা হয় চাঁদা। আর তা না দিলে নির্যাতন, নিপীড়ন থেকে শুরু করে অপহরণ, খুন, ধর্ষণ হওয়ার শঙ্কা ভুক্তভোগীদের। প্রাণভয়ে মুখও খুলতে চান না তারা। স্বয়ং পুলিশ প্রশাসনও তাদের কাছে পণবন্দী বলে অভিযোগ।

রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি থানার ওসি মঞ্জুরুল আলম মোল্লা বলেন, গোপনেও কেউ চাঁদা দেয় কি না তা স্বীকার করে না। শুনি চাঁদা নেয়। কিন্তু কারা দেয় তার খোঁজ পাওয়া যায় না। ভুক্তভোগী কয়েকজন বলেন, চাঁদা যে দিচ্ছে তার হদিস পাওয়া যায় না।

সম্প্রতি পাহাড়ে বিভিন্ন পণ্যের ওপর ‘শান্তি চুক্তি’ সমর্থক জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফের আরোপ করা চাঁদার তালিকা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

চাঁদাবাজি

ওই তালিকা অনুযায়ী, গাছে প্রতি ঘনফুট ও বাঁশে প্রতি শ’ হিসেবে চাঁদা আদায় করা হয়। বর্তমানে প্রতি ঘনফুট সেগুন গোল গাছে জেএসএসকে চাঁদা দিতে হয় বছরে ৪০ টাকা, ইউপিডিএফকে দিতে হয় ৫০ টাকা। এভাবে সেগুন রদ্দা, গামারী গোল-রদ্দা, লালি গোল-রদ্দার ওপর আলাদা আলাদা হারে চাঁদা ধার্য করা হয়েছে।

বর্তমানে প্রতি শ’ বাঁশে বছরে জেএসএস-ইউপিডিএফ উভয়েই চাঁদা আদায় করে ৫০০ টাকা করে। এভাবে বাইজ্জা বাঁশের জন্য রয়েছে আলাদা রেট। প্রথম শ্রেণীর মাছ ব্যবসায়ীদের জেএসএসকে বছরে চাঁদা দিতে হয় ৪০ হাজার, ইউপিডিএফকে ৫০ হাজার। এভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর ব্যবসায়ীদের পৃথক হারে গুনতে হয় চাঁদা।

তালিকা থেকে আরো জানা যায়, বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরার জালের ওপর আলাদা আলাদা হারে বাৎসরিক (নয় মাসে বছর) চাঁদা আদায় করা হয়। কেসকি জাল থেকে জেএসএস আদায় করে ছয় হাজার টাকা, ইউপিডিএফ সাত হাজার। এভাবে ধর্ম জাল, টেংরা জাল, কুত্তা জাল, ভাসা জাল, টেইনা জাল, লুই জাল, নাইট জাল, বড়শির ওপর আলাদা হারে চাঁদা আদায় করে তারা। এ ছাড়া সব ধরনের জেলেদের বছরে চাঁদা দিতে হয় জেএসএসকে ৭০০, ইউপিডিএফকে ৫০০।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত উপজাতি বাসিন্দাদেরও দিতে হয় বাৎসরিক চাঁদা। প্রতি উচ্চবিত্ত পরিবারের জন্য জেএসএস- ইউপিডিএফের ধার্যকৃত চাঁদা ৮০০ টাকা। মধ্যবিত্ত পরিবার প্রতি জেএসএস আদায় করে ৫০০ এবং ইউপিডিএফ ৬০০। নি¤œবিত্ত পরিবার প্রতি জেএসএস ৩০০, ইউপিডিএফ ৪০০ টাকা চাঁদা আদায় করে।

এ চাঁদার আওতায় বাদ পড়েনি কলার কাঁদিও। প্রতি কাঁদি কলার জন্য বর্তমানে জেএসএসকে ছয় টাকা ও ইউপিডিএফকে দিতে হয় ১০ টাকা। এ ছাড়া গরু ও ছাগল বিক্রির ওপর যথাক্রমে জেএসএস ১২ ও ৬ শতাংশ এবং ইউপিডিএফ ২০০ ও ১০০ হারে চাঁদা আদায় করে। দু’টি মুরগি বিক্রি করলে দুই টাকা, চার টাকা চাঁদা দিতে হয়।

বিলাইছড়ির আওয়ামী লীগ নেতা প্রহরকান্তি চাকমা বলেন, চাঁদাবাজি আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে ওই এলাকায় ইউপিডিএফ নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। বান্দরবানের কিউচিং মারমা বলেন, দুর্বৃত্তদের চাঁদাবাজিতে পুরো পাহাড়ি অঞ্চল এখন অস্থির। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই এলাকার বনবিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, চাঁদা না দিয়ে এখানে কারো বাস করা সম্ভব নয়। সাজেকের খ্রিষ্টান ধর্মীয় নেতা ময়তে লুসাই বলেন, অনেকবার তার কাছে চাঁদা চেয়েছে। কিন্তু তিনি দেননি। তিনি বলেন, একবার দিলেই ওরা সুযোগ পেয়ে যাবে। তখন বারবার চাইবে।

বাৎসরিক এ চাঁদা আদায় ছাড়াও বিভিন্ন দিবসকে সামনে রেখে বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে ইউপিডিএফ-জেএসএসসহ আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে চাঁদাবাজির শীর্ষে রয়েছে শান্তিচুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউনাইটেড পিপল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। এর পরের অবস্থানে রয়েছে চুক্তির সমর্থক পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। এদের অঙ্গ সংগঠন যেমন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইম্যান ফেডারেশন বিভিন্নভাবে পাহাড়ে চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ আছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের সংরক্ষিত মহিলা এমপি ফিরোজা বেগম চিনু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তি চুক্তি করে পাহাড়ে অনেক উন্নয়ন করেছেন। কিন্তু কিছু সশস্ত্র গ্রুপ চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ করে পাহাড়কে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। তিনি এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

– সূত্র: নয়াদিগন্ত

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইউপিডিএফ, চাঁদাবাজি, জেএসএস
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন