অগ্নিদগ্ধ সালমা মৃত্যুর কাছে হেরে গেল
সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার :
অবেশেষে মৃত্যুর কাছেই হেরে গেল পার্বত্য খাগড়াছড়ির বড়পিলাকের অগ্নিদগ্ধ সালমা। বেঁচে থাকার প্রাণান্তকর চেষ্টার পর শুক্রবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে তাঁর নিজ ঘরেই মৃতুর স্বাধ গ্রহণ করে ভাগ্যাহত সালমা আক্তার।
২০১৪ সালে ৩০ মার্চ পরিবারের ইচ্ছাতেই রামগড়ের সিন্দুকছড়ি এলাকার এরফান আলীর পুত্র মো: মিজানুর রহমানের সাথে বিয়ে হয় দরিদ্র ঘরের কন্যা সালমার। বিয়ের কয়েক মাস পেরুতেই স্বামী ও শ্বশুর-শ্বাশুড়ি মোটরসাইকেলের জন্য এক লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। যৌতুকের জন্য এক সময় তার উপর শুরু হয় শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন। দিনমজুর পিতার পক্ষে এ দাবি পরিশোধ করা কোনভাবেই সম্ভব হয়ে উঠছেনা।
শেষ পর্যন্ত যৌতুকের দাবিতে গদ ২৭ ডিসেম্বর তিন মাসের অন্ত:স্বত্তা সালমার শরীরে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় পাষণ্ড স্বামী। আর সেই ক্ষত বিক্ষত পোড়া শরীরে শ্বাশুড়ি ঢেলে দেয় লবণযুক্ত পানি। শুরু হয় সালমার বেঁচে থাকার জীবন যুদ্ধ। বাবা-মায়ের এই বাড়িতেই বেড়ে উঠা সালমা দীর্ঘ জীবনযুদ্ধ শেষে এ বাড়িতেই শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করলো শুক্রবার রাতে।
অগ্নিদগ্ধ সালমার আত্মচিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তাকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনদিন চিকিৎসা শেষে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়।
সব চেষ্টা ব্যর্থ করে চিরবিদায় :
সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে চিরবিদায় নিল সালমা আকতার। মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে যখন দরিদ্র পরিবারটি নি:স্ব হয়ে পড়ে তখন সালমার পাশে এসে দাঁড়ায় দেশ বিদেশের অনেকে। সালমাকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে তার পাশে দাঁড়ায় খাগড়াছড়ির একদল তরুণ সাংবাদিকও। কিন্তু কোন চেষ্টাই সালমাকে সুস্থ জীবনের পথে ফিরিয়ে আনতে পারেনি। সব শুভাকাঙ্ক্ষী আর মা-বাবকে ফাঁকি দিয়ে শুক্রবার রাতে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় হতভাগা সালমা আকতার।
শেষ ইচ্ছা :
মৃত্যুর পূর্বে নিজের শেষ ইচ্ছার কথা জানিয়ে গেছে সালমা। বড় বোনের কবরের পাশে কবর দেয়া আর ছোট ভাইকে দিয়ে নামাজের ‘জানাজা’ পড়ানোর শেষ ইচ্ছার কথাও জানিয়ে গেছে সালমা আকতার। এমন তথ্য দিয়েছেন সালমার বাবা এয়াকুব আলী। তিনি বলেন, ‘সালমা মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে বলেছে তাকে যেন তার বড় আপার পাশে দাফন করা হয়। আর ছোট ভাই যেন তার জানাজা পড়ায়।
এদিকে গুইমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পরিবার থেকে সালমার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। যেহেতু এই ঘটনায় থানায় মামলা আছে তাই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।