অনৈতিক কর্মকাণ্ড হাতেনাতে ধরা পড়ায় প্রেমিকার বাসায় ২০ঘণ্টা বন্দি থাকার পর বিয়ে করে মুক্তি

unnamed copy
নিজাম উদ্দিন লাভলু, রামগড়:

অৈনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে রামগড়ে প্রেমিকার বাড়িতে দীর্ঘ ২০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর  বিয়ের মাধ্যমে মুক্তি পেলেও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দোষে শিক্ষকতার চাকরি খুঁইয়েছেন প্রেমিক টুটুল চন্দ্র দেবনাথ(২৮)। গত মঙ্গলবার রাতে রামগড় দক্ষিণ্বেশ্বরী কালীবাড়িতে হিন্দু ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী খৃষ্টধর্মাবলম্বী প্রেমিকা নঈনী হালদার সুমি(২৫)’র বিয়ে সম্পন্ন হয় প্রেমিক টুটুলের সাথে।

জানা যায়, গত সোমবার রাত একটার দিকে রামগড় পৌরসভার মহামুনি গ্রামে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকা অবস্থায় প্রেমিকা নঈনী হালদারের বাসা থেকে আটক হয় প্রেমিক টুটুল। খবর পেয়ে টুটুলের আত্মীয়স্বজন রাতে তাকে ছাড়িয়ে নিতে ব্যর্থ চেষ্টা চালায়।

মঙ্গলবার সকালে প্রেমিকাকে বিয়ে করতে রাজী হলেও মতবিরোধ দেখা দেয় ধর্মান্তরিত হওয়া নিয়ে। প্রেমিকার পরিবারের পক্ষ থেকে খৃষ্ট ধর্ম অনুযায়ী বিয়ে সম্পাদনের জন্য  ডেকে আনা হয় ফেনী ব্যাপটিস্ট চার্চের যাজক মার্টিন তুষার বিশ্বাসকে। প্রেমিকের পরিবার এতে বাধ সাধে। টুটুলের পরিবার থেকে বলা হয়, মেয়েকে হিন্দু ধর্ম মতে বিয়ে বসতে হবে। শুরু হয় বিতর্ক-বিরোধ।

মঙ্গলবার সারাদিন কেটে যায় হিন্দু ও খৃষ্টীয় ধর্মীয় রীতি নির্ধারণ নিয়ে। খবর ছড়িয়ে পড়লে উৎসুক জনতার ভীড় বাড়তে থাকে প্রেমিকার বাড়িতে। লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে বাড়ির আঙ্গিনা। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি প্রতিরোধে সন্ধ্যায় বিজিবি ও পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য হাজির হয় মহামুনি গ্রামের ঐ বাড়িতে। পৌর কাউন্সিলর ফারুক শাহ, বিষ্ণু দে, আনোয়ারা বেগম, কালীবাড়ি পরিচালনা কমিটির সহ সভাপতি শ্যামল রুদ্র, সাধারণ সম্পাদক শুভাশীষ দাসসহ হিন্দু নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিক সামাজিক ব্যক্তিবর্গ, গোয়েন্দা সংস্থা ও মিডিয়াকর্মীরাও উপস্থিত হয় প্রেমিকার বাড়িতে।

দফায় দফায় আলোচনা, শলাপরামর্শ, তর্কবির্তক শেষে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে প্রেমিকা নঈনী হালদার সন্মত হয় হিন্দুরীতিতে বিয়ে করতে। বরফ গলতে শুরু করে দীর্ঘ ২০ ঘণ্টার বিরোধের মীমাংসায়। সিদ্ধান্ত হয়, রামগড় কেন্দ্রীয় কালীবাড়িতে হিন্দু ধর্মীয় রীতি অনুয়ায়ি প্রেমিক প্রেমিকার বিয়ের।

দীর্ঘ প্রায় ২০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর প্রেমিক টুটুল চন্দ্র দেবনাথ মুক্তি পেয়ে প্রেমিকা নঈনী হালদারকে বিয়ে করতে নিয়ে যায় কালীবাড়িতে। শত শত  উৎসুক লোক জড়ো হয় কালীবাড়িতে। প্রেমিক টুটুল দেবনাথের বাবা সুবোধ দেবনাথসহ মা, ভাই, বোন, আত্মীয় স্বজনরাও  গর্জনতলী গ্রাম থেকে আসেন দক্ষিণ্বেশ্বরী কালীবাড়িতে। শুরু হয় হিন্দু শাস্ত্রমতে বিয়ের প্রস্তুতির কাজ।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রেমিক প্রেমিকাকে নিয়ে আসা হয় কালীবাড়ির নাটমন্দিরে। শত উৎসুক জনতার উপস্থিততে কালীবাড়ির পৌরহিত নান্টু চক্রবর্তী যাবতীয় রীতিনীতি পালন করে দু’জনের বিয়ে সম্পাদন করেন। মঙ্গলবার রাতে ধর্মীয় রীতি মতে বিয়ে সম্পন্ন হলেও দু’পক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল বুধবার খাগড়াছড়ি জেলা আদালতে পুনরায় কোর্ট ম্যারেজ করেন তারা।

এদিকে রামগড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক টুটুল চন্দ্র দেবনাথ প্রেমিকার বাসায় অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকা অবস্থায় আটকের খবর পাওয়ার পর স্কুল পরিচালনা কমিটি মঙ্গলবার বিকেলে এক জরুরি সভায় বসেন। সভায় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোস্তফা হোসেন, সদস্য আইয়ুব আলী, মো: মোস্তফা, রফিকুল হোসেন কামাল, স্কুলের প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি চাকমাসহ অন্যান্য শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সর্ব সন্মতিতে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দোষে শিক্ষক টুটুল চন্দ্র দেবনাথকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন