অপহরণের ১৭ দিনেও খোঁজ মেলেনি মং প্রু মারমার: পরিবারের অভিযোগ জেএসএসের দিকে

Mong-Fo
এ এইচ এম ফারুক পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ফিরে।।
সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অপহরণের ১৭ দিনেও (এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) খোঁজ মেলেনি বান্দরবানের আ’লীগ নেতা মংপ্রু মারমা মেম্বারের। এ ঘটনায় অপহৃতের পরিবারের অভিযোগের আঙুল পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন  জনসংহতি সমিতির (জেএসএস)দিকে।

এদিকে থানায় মামলা দায়ের করে অব্যাহত হুমকির মুখে গ্রামছাড়া হয়েছেন মামলার বাদী ও অপহৃতের পরিবার। বান্দরবান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রফিক উল্লাহ অপহরণের মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে পরিবর্তন ডটকমকে জানিয়েছেন ‘মংপ্রু মেম্বারকে উদ্ধারে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযান অব্যাহত আছে। জেএসএস সদর উপজেলা সভাপতি উচো সিং মারমাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

পরিবারের পক্ষ থেকে অপহৃতের স্ত্রী মাছায় মারমা পরিবর্তন ডটকমকে জানান, ১৩ জুন রাত ১১টায় তার স্বামী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা মংপ্রু মারমাকে জেএসএসের ১৫/১৬ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী  অপহরণ করে গভীর জঙ্গলের দিকে নিয়ে গেছে।  অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা মংপ্রুকে নিজ বাড়ি জামছড়ি পাড়া থেকেই ধরে নিয়ে যায়। মংপ্রু মারমা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও একাধিকবার নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার।

অন্যমিডিয়া

ঘটনা উল্লেখ করে বান্দরবান সদর থানায় ১৪ জুন অপহৃতের জামাতা হ্লামংচিং মারমা বাদী হয়ে জেএসএসের জেলা পর্যায়ের শীর্ষ স্থানীয় ৩৬ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং ১৫/১৬ জন অজ্ঞাত অস্ত্রধারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। হ্লামংচিং মারমা পরিবর্তন ডটকমকে জানান, মামলা দায়েরের কারণে হুমকির মুখে পরিবারসহ গ্রামছাড়া হয়ে আছেন তারা। বর্তমানে তারা বান্দরবান জেলা শহরে অজ্ঞাত স্থানে থাকলেও নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন।

হ্লামংচিং মারমা আরো জানান, জামছড়ি পাড়ার কারবারী এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য তাকে মামলা তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন। অপহরণের সময় উপস্থিত থাকা পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, অপহরণের সময় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের পরণে সেনাবাহিনীর আদলে তৈরি পোশাক ছিল। সন্ত্রাসীরা তার শ্বশুরকে হত্যা করতে পারে বলে আশংকা করছেন তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, অপহৃত মংপ্রু মারমাকে উদ্ধারের জন্যে প্রথমে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়, দু’দফায় জেলায় সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচিও পালন করেছি। স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রদায় সম্মিলিতভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন। ঘটনার প্রতিবাদ এবং অপহৃতকে উদ্ধারের দাবিতে প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এসব কর্মসূচি সত্বেও অপহৃত নেতার কোনো সন্ধান মেলেনি।

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ক্যসাপ্রু মারমা বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের শান্তিপ্রিয় সাধারণ পাহাড়ি-বাঙালি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। জনসংহতি সমিতি তথাকথিত অধিকার আদায়ের আন্দোলনের কথা বললেও মূলত তারা সে পথে নেই। তাদের সন্ত্রাসীরা পাহাড়ে সাধারণ জনগণকে  অপহরণ, চাঁদাবাজি এবং নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দিয়ে হয়রানি-নির্যাতন করছে।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র  জানিয়েছেন, বান্দরবানে পার্বত্য চট্টগ্রামের অপর দুই জেলার তুলনায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভালো। কিন্তু জেএসএসের অপতৎপরতা সে সম্প্রীতিতে টানাপোড়েন সৃষ্টি করে। আমাদের তথ্য অনুযায়ী মংপ্রু মারমাকে জেএসএসের পক্ষ থেকেই অপহরণ করা হয়েছে। বারবার স্থান পরিবর্তন করায় তাদের ধরতে বেগ পেতে হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে কোথায় আছে তার সঠিক তথ্য নেই।

তিনি দুর্গম ও ভারি অস্ত্রসজ্জিত সন্ত্রাসীদের বিপরীতে পুলিশের অসহায়ত্বের ইঙ্গিত করে পাহাড়ের নিরাপত্তা জোরদার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন। এদিকে গত ১৭ দিনেও অপহৃত মংপ্রু মারমাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে না পারাকে প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা বলে মত প্রকাশ করেছেন সচেতন নাগরিকরা।

অন্যদিকে মংপ্রু মারমা অপহরণ অভিযোগের বিষয়ে ঘটনার সাথে তাদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে জনসংহতি সমিতি। জেএসএসের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কে এস মং মারমা এবং বান্দরবান জেলার সভাপতি উচো মং মারমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে আত্মগোপনে থাকায় তা সম্ভব হয়নি। তাদের দুজনের মুঠোফোনে কল দিয়েও বন্ধ পাওয়া গেছে।

এই অপহরণ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় যথাক্রমে ১, ২ ও ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে জেএসএসের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কে এস মং মারমা, জেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন ও জেলা সভাপতি উচো মং মারমারকে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সর্বশেষ জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) কেন্দ্রীয় সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) অফিসের পিএবিএক্স ও ব্যক্তিগত ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে পিএবিএক্স অপারেটর চিংকী চাকমা ফোন রিসিভ করে সরাসরি নাম্বারে কল দিতে বলেন। কিন্তু তাতে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

বান্দরবান সদর থানার ওসি মো. রফিক উল্লাহ জানিয়েছেন, এজাহার নামীয় দুইজনসহ পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে জেএসএস সদর উপজেলার সভাপতি উচো সিং মারমাও রয়েছেন। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

জেএসএসের মুখপাত্র কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা বলেন, জেএসএসের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। বান্দরবানে জেএসএসের কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা নেতাদের যেভাবে গণহারে মামলা দেয়া হয়েছে তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমরাও চাই যারা এ অপহরণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হোক।

তিনি আরো বলেন, ঘটনাটি ঘটার সাথে সাথে যেভাবে সেনা-পুলিশ তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে এবং মামলা করা হয়েছে তাতে করে মনে হয় ঘটনাটি আগে থেকে পরিকল্পিত। তবে এ অপহরণের সাথে যারাই জড়িত হোক তা ভালো হয়নি বলে মন্তব্য করেন সজীব চাকমা।

সূত্র: পরিবর্তন ডটকম।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন