অর্ধশতাব্দি পরেও আলোর নীচে অন্ধকারেই মানিকছড়ি’র প্রাচীন জনপদ যোগ্যাছোলা

fec-image

খাগড়াছড়ি জেলার মংরাজ আবাসসস্থল মানিকছড়ি উপজেলার সুবিধাবঞ্চিত প্রাচীন জনপদ যোগ্যাছোলায় স্বাধীনতা পূর্ব ১৯৬৩ সালে ব্রিটিশ কোম্পানীর আবিস্কৃত সেমুতাং গ্যাসক্ষেত্রের অবস্থান। এই গ্যাসক্ষেত্রের গ্যাস দেশের জাতীয় গ্রীডে আলো ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। অথচ সেমুতাং এ গ্যাসক্ষেত্র সংলগ্ন জনপদ জুড়ে রয়েছে এখনো গোর অন্ধকারে! উপজেলার সর্বত্র ডিজিটালের ছোঁয়া পরতে পরতে পৌঁছলেও এখানের মানুষজন এখনো আদিমকালের হারিকেন ও চেরাগ (বাতি) দিয়ে রাত্রীকালের কার্যাদি সম্পন্ন করছে! বিদুতের পরশ না থাকায় হাজারো স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ সুবিধা পায়নি গ্যাস আবিস্কারের অর্ধশতাব্দি পরও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের মংরাজ আবাসস্থল মানিকছড়ি অঞ্চলটি অতি পরিচিত ও প্রাচীন জনপদ। এখানকার যোগ্যাছোলা নামক জনপদে সেই ১৯৬৩ সালে প্রথমে ব্রিটিশ কোম্পানী আবিস্কার করেছে সেমুতাং গ্যাসক্ষেত্র। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে পুরোদমে গ্যাস উত্তোলন করা হতো। পরে ঘটনাচক্রে দীর্ঘকাল গ্যাস উত্তোলন বন্ধ থাকার পর বর্তমান সরকারের আমলে ২০১১ সাল থেকে আবারও গ্যাস উত্তোলন পূর্বক জাতীয় গ্রীডে চলমান রয়েছে। এখানকার প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদে দেশ আলোকিত হলেও জনপদ রয়েছে এখনো অন্ধকারে! বিদ্যুতের নাম-গন্ধ এখনো জনপদে পৌছায়নি! ফলে আলোর নীচে অন্ধকার রয়েই গেল! অথচ “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ” শ্লোগানে দেশের গ্রামে-গঞ্জে বিদ্যুায়িত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শুধু বঞ্চিত পার্বত্য জনপদ য্যোগ্যাছোলার নিরীহ বাঙ্গালী-অবাঙ্গালী অভাগারা!

মংরাজ জনপদ মানিকছড়ি উপজেলার ৩ নং যোগ্যাছোলা ইউনিয়নটি ২১০ নং যোগ্যাছোলা ও ২৩১ নং কালাপানি মৌজার অন্দরে এর আয়তন ৮৩১৭ একর। ভোটার সংখ্যা ৮৮৩৭ জন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে উচ্চ বিদ্যালয় -১টি, জুনিয়র হাইস্কুল ১টি, প্রাথমিক বিদ্যালয়-১১টি, মাদরাসা-৩টি,মসজিদ-২৮টি, মন্দির-৯,কেয়াং-১১টি, গির্জা-৭টি। জনপদের রাস্তা-ঘাট,স্কুল-মাদরাসা,ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সর্বত্রই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। ব্যতিক্রম শুধু বিদ্যুতায়নে। তাই এলাকার খেটে খাওয়া লোকজন, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলেই একবাক্যে জনপদে বিদ্যুতায়ন চায়।

এ প্রসঙ্গে সমাজকর্মী, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি’র পাশাপাশি যোগ্যাছোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সাবেক বৃহত্তর ১নং মানিকছড়ি(যোগ্যাছোলাসহ) ইউনিয়ন পরিষদের তিন, তিনবার নির্বাচিত ও স্বর্ণপদক জয়ী চেয়ারম্যান এম.কে. আজাদ বলেন, আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে এখানকার সাধারণ মানুষ ও ছাত্রছাত্রীরা বঞ্চিত হচ্ছে। ডিজিটালের আওতায় শিক্ষা-দীক্ষা অর্জনে বিদ্যুৎ জরুরি। বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ক্যয়জরী মহাজন বলেন, যে এলাকার সম্পদে (আবিস্কৃত গ্যাস) দেশ আলোকিত হচ্ছে, সেখানকার মানুষ অন্ধকারে! এটা কল্পনা করাও হাস্যকর। কিন্তু বাস্তবে হলেও সত্য যে আমরা যোগ্যাছোলাবাসী র্দূভাগা। স্বাধীনতার পূর্বে আবিস্কৃত গ্যাস নিয়মিত জাতীয় গ্রীডে দিচ্ছি আর আমরা অন্ধাকারে দিনাতিপাত করছি।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এবং যোগ্যাছোলা ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন এ প্রসঙ্গে বলেন, আসলে যোগ্যাছোলা ইউনিয়নবাসী আধুনিক ডিজিটাল ছোঁয়ার নাগান এখনও পায়নি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সকল উন্নয়নে কম-বেশি সুযোগ-সুবিধা জনপদে গেলেও আমরা উপজেলার প্রাচীন এই জনপদে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে পারিনি। আমাদের সুযোগ্য সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা’র ডিও লেটারসহ বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয়ে আবেদন-নিবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সাড়া পাওয়া যায়নি। দ্রুত উপজেলার প্রাচীণ ও জাতীয় গ্রীডে গ্যাস সরবরাহকারী জনপদে বিদ্যুতায়নে সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী, যোগ্যাছোলা, শেখ হাসিনা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন