আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে আলীকদমে কতিপয় শিক্ষক-কর্মচারীর দৌরাত্ম

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করলেও বান্দরবানের আলীকদম অবাধে চলছে কোচিং বাণিজ্য। একইভাবে চলছে সরকারি আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন। উপজেলায় কতিপয় ‘সরকারি শিক্ষক-কর্মচারী আচরণ (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা- ১৯৮৫’ এবং ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা- ২০১২’ এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে এই কর্মকা- চালাচ্ছেন। সরকারি চাকরি করেও স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে সংশ্লিষ্ট মহলকে ম্যানেজ করেই চলছে তাদের কর্মকা-। এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি দায়িত্ব পালনের চেয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগ ও দপ্তরসমূহ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। একটি গোয়েন্দা সূত্রেও এসব তথ্য উঠে এসছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা স্থানীয় নাগরিক হয়ে থাকেন। নিয়োগের পর অন্যকোন উপজেলায় তাদের বদলীও তেমন একটা হয় না। দীর্ঘদিন এলাকায় থাকার কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন স্বাস্থ্য সহকারি নিয়ে সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের দপ্তরী জাহাঙ্গীর আলম সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘরভাড়া নিয়ে প্রকাশ্যে কোচিং বাণিজ্য শুরু করে।

জানা গেছে, উপজেলার মংচিং হেডম্যান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. হোছেনগীর, রোয়াম্ভু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আলমগীর, আলীকদম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুল আলম ও দপ্তরী মো. জাহাঙ্গীর আলম, আলীকদম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আব্দুল হান্নান ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারি লিটন কুমার শীল জোট বেধে ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের জানুয়ারি থেকে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ও কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতি মালা লঙ্ঘন করে ‘অন্বেষা’ নামের একটি কোচিং সেন্টার চালু করে। ‘অন্বেষা’ নামে পাশাপাশি কৌশলে নাম দেওয়া হয় ‘ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষাঙ্গন!’

উপজেলার সদরের চৌমুহুনীতে রীতিমত ঘর ভাড়া নিয়ে সাইনবোর্ড ও ব্যানার টানিয়ে স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এসব কর্মচারী কোচিং বাণিজ্যের এক বছর পার করেছে। স্থানীয় কয়েকজনকে সাইনবোর্ড সর্বস্ব রেখে কোচিং বাণিজ্য চালুর প্রাক্কালে নিজেদের পরিচয় আড়ালে রাখে সুচতুর কর্মচারীরা। কিন্তু স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসনের কোনরূপ নজরদারী না থাকায় এসব কর্মচারীরা এখন প্রকাশ্যে কর্মকা- চালাচ্ছেন। কোচিং বাণিজ্যের প্রচারপত্র ও ব্যানারে যোগাযোগের ঠিকানায় তাদের মোবাইল নাম্বার দেয়াসহ শিক্ষার্থী শিকারে অভিভাবক পর্যায়ে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। সরকারি দায়িত্ব পালন না করে আখের গুছাতে শিক্ষাবাণিজ্যে এসব কর্মচারীরা এখন চষে বেড়াছে বিভিন্ন পাড়া-এলাকা!

সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দপ্তরী মো. জাহাঙ্গীর আলম দেড়যুগেরও বেশি সময় ধরে একই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করছে। চৌমুহুনীতে নিজ নামে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছে। সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে ‘অন্বেষা’ কোচিং সেন্টার চালু করে সেখানকার পরিচালকও বনেছেন! তার এসব কর্মকা- নিয়ে ইতোপূর্বে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জহর কুমার সিংহ তাকে সতর্ক করায় জহর সিংহকে নানাভাবে নাজেহাল করার অভিযোগ রয়েছে এ দপ্তরীর বিরুদ্ধে। করিৎকর্মা দপ্তরী জাহাঙ্গীর অন্বেষা’র পরিচালক হওয়া ছাড়াও টমটম মালিক সমিতির নেতা বলে জানা গেছে।

অপরদিকে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী লিটন কুমার শীল সরকারি চাকুরীর পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে বাণিজ্যিকভিত্তিতে হোস্টেল পরিচালনা, বিদেশী ডোনারদের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক রেখে স্থানীয় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে হোস্টেল পরিচালনার নামে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের ইপিআই ক্যাম্পিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে অনুপস্থিত থাকলেও স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে পারঙ্গমতা দেখান। স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার কারণে স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরাও তার ব্যাপারে মুখ খুলেন না বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য যে, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা- ২০১২’ এর ৯ ধারায় বলা আছে, ‘কোচিং সেন্টারের নামে বাসা ভাড়া নিয়ে কোচিং বাণিজ্য পরিচালনা করা যাবে না’। ১৪(ঙ) উপ-ধারা বলা হয়েছে, ‘সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধি মালা ১৯৮৫ এর অধীনে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’। অপরদিকে, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধি মালা ১৯৮৫ এর ধারা ২(এফ)/(৩) এ উল্লেখ আছে, ‘আইন সংগত কারণ ছাড়া সরকারের কোন আদেশ, পরিপত্র বা নির্দেশের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন’ করাকে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হবে। সরকারের জারীকৃত এসব নীতিমালা ও বিধামালাকে তোয়াক্কা করছেন এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা। অভিযুক্ত কর্মচারীদের বর্তমান কর্মস্থল থেকে অন্য উপজেলায় বদলীর করার জন্য গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

অভিযুক্ত দপ্তরী জাহাঙ্গীর আলম ও হান্নান মাস্টার জানান, আমরা চাকুরীর সময় চাকুরী করছি। পেশা হিসেবে অন্য কিছু বেছে নেয়াতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন