আজ পবিত্র আশুরা, যেসব কাজ নিষিদ্ধ

fec-image

পবিত্র আশুরা আজ। মুসলিম বিশ্বে দিনটি ত্যাগ ও গভীর শোকের প্রতীক। পাশাপাশি বিশেষ পবিত্র দিবস হিসেবে ১০ মহররম মুসলিম বিশ্বে দিনটি পালন করা হয়।

কারবালার ‘শোকাবহ এবং হৃদয় বিদারক ঘটনাবহুল’ এই দিনটি বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে ধর্মীয়ভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ত্যাগ ও শোকের প্রতীকের পাশাপাশি বিশেষ পবিত্র দিবস হিসেবে মুসলিম বিশ্বে এ দিনটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশুরার তাৎপর্য তুলে ধরে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে শনিবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে আজ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি গণমাধ্যম এবং স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল এই দিনের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শনিবার দুপুর দেড়টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, পবিত্র আশুরার মহান শিক্ষা আমাদের সকলের জীবনে প্রতিফলিত হোক। কারবালার শোকাবহ ঘটনার স্মৃতিতে ভাস্বর পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী আমাদের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উদ্বুদ্ধ করে, প্রেরণা যোগায় সত্য ও সুন্দরের পথে চলার। পবিত্র আশুরার মহান শিক্ষা আমাদের সকলের জীবনে প্রতিফলিত হোক- এ প্রত্যাশা করি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশুরা উপলক্ষ্যে দেওয়া বাণীতে বলেন, ‘আসুন পবিত্র আশুরার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ সোনার বাংলা তথা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’

আশুরায় যেসব কাজ নিষিদ্ধ:
আশুরাকে কেন্দ্র করে দুই রোজা ও তওবার আমল শরীয়ত সম্মত। এর বাইরে সমাজে কারও কারও মাঝে কিছু আমলের নামে প্রচলন হয়েছে যা ইসলাম বিরোধী। এগুলো থেকে অবশ্যই বিরত থাকা উচিত। এমন কিছু কাজ হলো:

১. তাজিয়া বানানো: অর্থাৎ, হজরত হুসাইন রা.-এর নকল কবর বানানো। এটা বস্তুত এক ধরণের ফাসেকী ও শিরকী কাজ। কারণ, সঠিক ধর্মীয় জ্ঞান নেই এমন মানুষেরা বিশ্বাস করেন যে, হজরত হুসাইন রা. এতে সমাসীন হন’ এই বিশ্বাস নিয়ে তারা এখানে নযর-নিয়ায পেশ করে, এর সামনে হাত জোড় করে দাঁড়ায়, এর দিকে পিঠ প্রদর্শন করাকে বেয়াদবী মনে করে। তাজিয়ার দর্শনকে ‘যিয়ারত’ বলে আখ্যা দেয় এবং এতে নানা রকমের পতাকা ও ব্যানার টাঙ্গিয়ে মিছিল করে; যা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম। এছাড়াও আরো অনেক কুপ্রথা ও গর্হিত কাজের সমষ্টি হচ্ছে এ তাজিয়া। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, ৫/২৯৪,৩৩৫, কিফায়াতুল মুফতী, ৯/৩২, ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়া, ২/৩৪৩)

মনে রাখতে হবে, তাজিয়ার সামনে যে সমস্ত নযর-নিয়ায পেশ করা হয় তা গাইরুল্লাহর (আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে) নামে উৎসর্গ করা হয় বিধায় তা খাওয়া হারাম। (সূরা মাইদাহ, আয়াত, ৩)

২. মর্সিয়া বা শোকগাঁথা পাঠ করা: আশুরার জন্য মজলিস করা এবং তাতে অংশগ্রহণ করা সবই নাজায়িয। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, ৫/২৯৪, কিফায়াতুল মুফতী, ৯/৩২, ৪২)

৩. ‘হায় হুসেন’, ‘হায় আলী’ ইত্যাদি বলে বলে বিলাপ ও মাতম করা এবং ছুরি মেরে নিজের বুক ও পিঠ থেকে রক্ত বের করা। যারা এগুলো করেন, দেখেন এবং শোনেন সবার প্রতি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস, ৩১২, ইবনে মাজাহ, হাদিস, ১৫৮৪)

৪. কারবালার শহীদরা পিপাসার্ত অবস্থায় শাহাদতবরণ করেছেন তাই তাদের পিপাসা নিবারণের জন্য বা অন্য কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে এই দিনে লোকদেরকে পানি ও শরবত পান করানো। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, ৫/২৮৯, কিফায়াতুল মুফতী, ৯/৪০)

৫. হজরত হুসাইন রা. ও তার স্বজনদের উদ্দেশ্যে ঈছালে সাওয়াবের জন্য বিশেষ করে এই দিনে খিচুড়ি পাকিয়ে তা আত্মীয়-স্বজন ও গরীব মিসকীনকে খাওয়ানো ও বিলানো। একে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ যেহেতু নানাবিধ কু-প্রথায় জড়িয়ে পড়েছে তাই তাও নিষিদ্ধ ও না-জায়িয। (কিফায়াতুল মুফতী, ৯/৪০)

৬. হজরত হুসাইন রা.-এর নামে ছোট বাচ্চাদেরকে ভিক্ষুক বানিয়ে ভিক্ষা করানো। এটা করিয়ে মনে করা যে, ওই বাচ্চার দীর্ঘায়ু হবে। এটাও মুহাররম বিষয়ক কু-প্রথা ও বিদয়াত। (ইসলাহুর রুসূম)

৭. তাজিয়ার সঙ্গে ঢাক-ঢোল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজানো হারাম। (সূরায়ে লুকমান, আয়াত, ৬)

৮. আশুরার দিনে শোক পালন করা; চাই তা যে কোন সূরতেই হোক। কারণ শরীয়ত শুধু স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা স্ত্রীর জন্য ৪ মাস ১০ দিন আর বিধবা গর্ভবতীর জন্য সন্তান প্রসব পর্যন্ত এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যুতে সর্বোচ্চ ৩ দিন শোক পালনের অনুমতি দিয়েছে। এই সময়ের পর শোক পালন করা জায়েজ নেই। আর উল্লেখিত শোক পালন এগুলোর কোনটার মধ্যে পড়ে না। (বুখারী, হাদিস, ৫৩৩৪, ৫৩৩৫, ৫৩৩৬, ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়া, ২/৩৪৪)

৯. শোক প্রকাশ করার জন্য কালো ও সবুজ রঙের বিশেষ পোশাক পরিধান করা নিষেধ। (ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়া, ২/৩৪৪)

১০. এই দিনের গুরুত্ব ও ফযিলত বয়ান করার জন্য মিথ্যা ও জাল হাদীস বর্ণনা করা। কারণ হাদীসে মিথ্যা হাদীস বর্ণনাকারীকে জাহান্নামে ঠিকানা বানিয়ে নিতে বলা হয়েছে। (বুখারী, হাদিস, ১০৭)

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন