আজ মহালছড়ি যুদ্ধে শহীদ হন বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন কাদের বীরোত্তম

নিজাম উদ্দিন লাভলু, রামগড়:
১৯৭১ এর ২৭ এপ্রিল খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে পাক হানাদার ও তাদের সহযোগী মিজোদের সাথে প্রচণ্ড সন্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন তরুণ বীর সেনা ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের বীরোত্তম। তখনও প্রিয়তমা স্ত্রী এবং তাঁর নিজের হাতের বিয়ের মেহেদির রঙ ম্লান হয়নি।

৭১ এর ২৭ এপ্রিল সকালে মহালছড়িতে অবস্থানকারি মুক্তিযোদ্ধারা শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়। পাকিস্তানি ও তাদের সহযোগী মিজোবাহিনীর শত্রুরা ছিল দলে ভারী। তাদের দলে ছিল পাক সৈন্যদের একটি নিয়মিত কমান্ডো কোম্পানি, আর ছিল দুই ব্রিগেডে ১৫০০ মিজো সৈন্য। যা মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যার চেয়ে দু’ তিন গুণ বেশি। এছাড়া বিমান থেকেও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্ভাব্য ঘাঁটি লক্ষ্য করে একের পর এক বিমান হামলাও চালায় পাকবাহিনী।

এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের পজিশন প্রায় ক্ষেত্রে দুর্বল ছিল। এ সময় ক্যাপ্টেন কাদের ছিলেন রাঙামাটি রেকিতে। রেকী শেষে মেজর শওকতের প্লান অনুযায়ী ক্যাপ্টেন কাদের যোগ দেন মহালছড়ির এ অসম তুমুল যুদ্ধে। প্রচণ্ড যুদ্ধের এক পর্যায়ে শত্রুদের মেশিনগানের একটি গুলি এসে বিঁেধ যুদ্ধরত অসীম সাহসী বীর তরুণ ক্যাপ্টেন কাদের এর বুকে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এসময় সহযোদ্ধা শওকত আলী ও ফজলুর রহমান ফারুক আহত কাদেরকে উদ্ধার করে রামগড়ে নিয়ে আসার পথে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

২৮ এপ্রিল ভোরে রামগড় কবরস্থানে পূর্ণ সামরিক ও ধর্মীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় তাঁকে। সেদিন নিজের প্রাণের বিনিময়ে প্রায় ২০০ মুক্তিসেনার জীবন বাঁচিয়ে ছিলেন তিনি। এ বীর মুক্তিযোদ্ধার অতুলনীয় বীরত্বকে চির স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করেন তাঁকে।

এ বীর শহীদের ৪৪তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে আজ (সোমবার) রামগড়স্থ শহীদ ক্যাপ্টেন কাদের বিদ্যা নিকেতনে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় । এছাড়া সকালে রামগড় কেন্দ্রিয় কবরস্থানে অবস্থিত শহীদের কবর জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

মিলাদ মাহফিলে রামগড় উপজেলা নির্বাহি অফিসার মো:ইকবাল হোসেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মফিজুর রহমান, সাকুল পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি মো: নিজাম উদ্দিন লাভলু, বেলাল হোসাইন, সদস্য মো: মোস্তফাসহ স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।