‘আদিবাসী নাকি নৃগোষ্ঠী’ তা গুরুত্বপূর্ণ নয়, প্রয়োজন সকল জাতিসত্বার অধিকার নিশ্চিতকরণ: ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি

20150810_111921

স্টাফ রিপোর্টার:
‘আদিবাসী’ বিতর্ক প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, ‘সংবিধানে আদিবাসী লেখা রয়েছে নাকি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, তা মূলবিষয় নয়। তাতে কোন যায় আসে না। গুরুত্বপূর্ণ হল- ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ভূমি সমস্যাসহ যে সকল সমস্যা রয়েছে তার সুষ্ঠু সমাধান করতে হবে। সংবিধানে প্রদত্ত অধিকার নিশ্চিত করতে হেব। তাদের শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ সব ক্ষেত্রে এগিয়ে নিতে হবে।’

সোমবার দুপুরে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রহমান মিলনায়তনে ‘সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন: বিশেষ সুপারিশমালা’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এ সেমিনারে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবিন্দ্র নাথ সরেন এর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা এমপি।

এতে উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. তোফায়েল আহমেদ, মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং এবং অ্যাড. তিতাস হিল্লোল।

সেমিনারে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্রগ্রামের ন্যায় সমতলের ‌’আদিবাসী’দের ভূমি অধিকার নিশ্চিতকরণের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন কল্পে ২২টি ধারা সংবলিত একটি খসড়া আইনের প্রস্তাবনা পেশ করা হয়।
পরে ভূমি কমিশনের উপর উত্থাপিত খসড়ানীতিমালার উপর সমালোচনাপূর্বক পরামর্শমূলক বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, ঢাবি অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, নিজেরা করি’র পরিচালক খুশী কবির, ব্লাস্ট এর ব্যারিস্টার সারা হোসেন প্রমুখ। এছাড়া খসড়া নীতিমালার উপর মুক্ত আলোচনায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সমালোচনাপূর্বক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ প্রদান করেন।

সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের প্রসঙ্গে ড. আাব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‌’সমতলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত অঞ্চলে বন ধংস করার ফলে তারা প্রতিনিয়ত জীবন জীবিকা-আবাস স্থল হারানোর পাশাপাশি বঞ্চনার শিকার হচ্ছে।তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাজেটে তাদের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না। অথচ সংবিধানে সকল জাতিসত্বার অধিকার রয়েছে। এজন্য আদিবাসী বিতর্কে না থেকে প্রয়োজন এই সমস্যাগুলো কিভাবে কাটিয়ে উঠা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা। মারমা, গারো, ত্রিপুরাসহ সকল জাতী সত্বার শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ভূমির অধিকার নিশ্চিত করা।’

আওয়ামীলীগ সরকারের নির্বাচনী ইসতেহারে সমতলের ’আদিবাসীদে’র পৃথক ভূমি কমিশনের যে প্রতিশ্রুতি ছিল তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় তিনি দু:খ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকারকে বাধ্য করতে হলে মিডিয়া ও সুশীল সমাজের সমর্থন গড়ে তুলতে হবে।’ এজন্য তিনি উদ্বোগী সংগঠনসমূহের সহযোগিতা কামনা করেন।

আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা এমপি খসড়ানীতিমালা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এমন প্রস্তাবনা করা যাবে না যা দাঁড় করানো যাবে না। পাহাড়ের ও সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য আদিবাসী অধিকার কমিশন নামে একটি সমন্বিত কমিশন গঠন কার যায় কিনা তাও ভেবে দেখা হচ্ছে।’ পার্বত্য চট্রগ্রামের ভূমি কমিশন গঠন হলের তা কার্যকর হয়নি উল্লেখ করে তিনি সমতলের ও পার্বত্য চট্রগ্রামের ভূমি কমিশন একসাথে দ্রুত কাজ শুরু করবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ‘পার্বত্যাঞ্চলের জন্য পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নামে পৃথক মন্ত্রণালয় থাকলেও সমতলের আদিবাসীদের জন্য সেই ধরনের কোন সুবিধা রাখা হয়নি।’ এজন্য তিনি পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধিনে একটি বিশেষ ব্রাঞ্চ খুলে এর মাধ্যমে সমতলের ‘আদিবসীদের’ সমস্যা সমাধানের পরামর্শ প্রদান করেন। সমতলের ‘আদিবাসী’দের আইনী সুরক্ষা না দিতে পারলে ক্রমাগত তারা ভূমি হারাতে থাকবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

খসড়া নীতিমালার উপর আনীত বক্তব্যে মেসবাহ কামাল ও রোবায়েত ফেরদৌস নীতিমালার বিভিন্ন অসঙ্গতি ও ত্রুটি তুলে ধরে তা সংশোধন করার পরামর্শ প্রদান করেন। ব্যারি. সারাহ হোসেন বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নীতিমালায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেন। এছাড়া খুশি কবির পার্বত্য চট্রগ্রাম মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে পাহাড় ও সমতলের ‘আদিবাসী’দের জন্য ‘আদিবাসী মন্ত্রণালয়’ গঠনের পরামর্শ দেন।

সেমিনারে বক্তারা সমতলে ৩৭টিরও বেশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বসবাস রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘রাজনৈতিক নানা অত্যাচার ও আক্রমণ সমতলের আদিবসীদের ধংস করে দিয়েছে। আদিবসীদের উপর শোষণ, বঞ্চনা ও নির্যাতনের অন্যতম কারণ হচ্ছে ভূমি। ক্রমশই তারা ভূমি হারাচ্ছে উল্লেখ করে বক্তারা দ্রুত এ ভূমি কমিশন গঠনের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন