আমিরাতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বড় জয়
ক্রীড়া ডেস্ক:
ব্যাট হাতে শেষ দিকে সময়োপযোগী এক ইনিংসে বাংলাদেশকে লড়ার মত রান এনে দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ফিল্ডিংয়ে নিলেন দারুণ এক ক্যাচ। বল হাতে ২ উইকেট। তার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে এবারের এশিয়া কাপে বাংলাদেশ পেল প্রথম জয়।
টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথম পরে বোলিং করে প্রতিপক্ষকে অল আউট করল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে কম পুঁজি নিয়ে জয়ও এটিই। ২০১২ সালে বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪৬ রান করে মাশরাফিরা জিতেছিল ১ রানে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। সবচেয়ে ছোট স্কোর আফগানিস্তানের ৭২।
গতি আর বাউন্সে প্রথম ওভারেই আমিরাতের দুই ওপেনারকে কাঁপিয়ে দেন তাসকিন আহমেদ। পরের ওভারেই প্রথম ব্রেক থ্রু, মোহাম্মদ কালিমকে (০) ফেরান আল আমিন হোসাইন।
মুস্তাফিজ আক্রমণে এসে প্রথম ওভারেই দারুণ এক ফিরতি ক্যাচ নিয়েছিলেন রোহান মুস্তাফার। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ টিভি রিপ্লে দেখে সংশয়পূর্ণ সিদ্ধান্তে নট আউট দেন তৃতীয় আম্পায়ারের পাকিস্তানের শোজাব রাজা।
মুস্তাফা অবশ্য ফেরেন পরের ওভারেই। মাশরাফির বলে শর্ট থার্ড ম্যানে ক্যাচ নেন সেই মুস্তাফিজই (১৮)। বাংলাদেশ অধিনায়ক পরের ওভারে ফিরিয়ে দেন আমিরাতের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান শাইমান আনোয়ারকেও (২)। গালিতে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে অসাধারণ রিফ্লেক্স ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ।
ধুঁকতে থাকা আমিরাত ব্যাটিং লাইন আপের টুটি চেপে ধরেন মুস্তাফিজুর রহমান। জাদুকরী দুটি অফ কাটারে টানা দুই বলে নেন উইকেট। হ্যাটট্রিক ডেলিভারিতেও অল্পের জন্য ব্যাটের কানা নেয়নি বল।
বাকি কাজটুকু সেরেছেন মাহমুদউল্লাহ-সাকিবরা। একমাত্র প্রতিরোধ গড়া মোহাম্মদ উসমানের (৩০) স্টাম্প উড়িয়েছেন তাসকিন। ২০ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন সাকিব, ১২ রানে দুটি মাশরাফি, ১৩ রানে দুটি মুস্তাফিজ।
আর মাত্র ৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ।
বোলিংয়ের আগে ব্যাট হাতেও দারুণ গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস খেলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ মিঠুন দলকে এনে দিয়েছিলেন মোটামুটি ভালো শুরু। মাহমুদউল্লাহর সৌজন্যে শেষটাও হয়েছে ভালো। তবু বাংলাদেশের স্কোরের রুগ্ন চেহারা ইনিংসের মাঝপথে পথ হারানোয়।
প্রথম ম্যাচের মতো উইকেট এবার ঘাসে ভরা ছিল না। তবে যথারীতি ছিল ঘাসের ছোঁয়া। টস জিতে তাই বোলিংয়ে আমিরাত। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা জানালেন, টস জিতলে তিনি ব্যাটিংই বেছে নিতেন।
বাংলাদেশের শুরুটা ছিল সতর্ক। প্রথম ৪ ওভারে ২২ রান তোলেন সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ মিঠুন। নিস্তরঙ্গ ম্যাচ প্রাণের ছোঁয়া পায় পঞ্চম ওভারে।
জীবন পান বাংলাদেশের দুই ওপেনারই। টাইমিংয়ের গড়বড়ে বল আকাশে তুলেছিলেন মিঠুন। মিড অফ থেকে শাহজাদ পেছন দিকে ছুটে বল হাতে ছোঁয়ালেও মুঠোয় জমাতে পারেননি তালুতে। এক বল পর আকাশে বল তুলে বেঁচে যান সৌম্যও। থার্ডম্যানে ক্যাচ ছাড়েন সাকলাইন।
যেখানে দুটি উইকেট হারাতে পারত বাংলাদেশ, সেই ওভারেই বাড়ে রানের গতি। ফ্রি হিট লং অনের ওপর দিয়ে উড়িয়ে দন মিঠুন। পরের বলেই দারুণ টাইমিংয়ে চার।
পরের ওভারের প্রথম বলে শাহজাদের মিডিয়াম পেসকে মিড উইকেট গ্যালারিতে পাঠান সৌম্য। কিন্তু আরও একবার সম্ভাবনায় ইনিংসের অপমৃত্যু বাজে শটে, তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন মিড অনে (১৩ বলে ২১)।
শাহজাদের পরের ওভারেই টানা দুটি ছক্কা ও চারে রানের গতিটা ধরে রেখেছিলেন মিঠুন। কিন্তু আরেক প্রান্তে অফ স্পিনার রোহান মুস্তাফাকে প্রথম ওভারেই উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড উইকেট সীমানায় ধরা পড়েন সাব্বির (৪)।
মিঠুন এগিয়ে যাচ্ছিলেন প্রথমবার পঞ্চাশ ছোঁয়ার দিকে। পারলেন না নিজের হাস্যকর ভুলে। মুস্তাফার ঝুলিয়ে দেওয়া বলে ডিফেন্স করেই কী মনে করে ছুট লাগালেন! বল ছিল পাশেই, আমিরাতের কিপার চকিতে বল তুলে ভেঙে দেন বেলস (৪১ বলে ৪৭)।
দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা মোহাম্মদ নাভিদের বলে বাজে এক শটে বিদায় নেন মুশফিকুর রহিমও (৪)। ১ উইকেটে ৭২ থেকে বাংলাদেশ তখন আচমকাই ৪ উইকেটে ৮৩!
জাভেদের লেংথ বলে দারুণ এক পুল শটে ছক্কায় বৃত্ত ভাঙার চেষ্টা করেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। জাভেদের ফুলটসে দৃষ্টিকটু ভাবে বোল্ড সাকিব আল হাসান (১৩)। পরের বলেই লং অনে উড়িয়ে আউট ইমরুল কায়েসের বদলে একাদশে আসা নুরুল হাসান।
রানের খাতা খুলতে পারেননি অধিনায়ক মাশরাফিও। দলের স্কোরকার্ড তখন বিবর্ণ। শেষ ওভারে মুস্তাফাকে এক ছ্ক্কা ও চারে ১৭ রান নেন মাহমুদউল্লাহ। ৩৬ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি ২৭ রানে।
আগের দিন দারুণ শুরু করা শ্রীলঙ্কাকেও ঠিক একই ভাবে ইনিংসের পরের ধাপে বেঁধে ফেলেছিল আমিরাত। ১০ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার রান ছিল ১ উইকেটে ৭২, কিন্তু পরের ১০ ওভারে লঙ্কান করতে পেরেছিল আর মাত্র ৫৭। এবার ১০ ওভারে বাংলাদেশের রান ছিল ২ উইকেটে ৭৪, শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৫৯!
ম্যাচের ফলাফলেও শেষ পর্যন্ত একই নিয়তি। আমিরাতের আরেকটি হার। আর শঙ্কা কাটিয়ে প্রথম জয়ের স্বস্তির হাসি মাশরাফিদের।