রাঙামাটির সাজেকে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে উপজাতি নারীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ
সাজেক প্রতিনিধি:
রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলা সাজেকের গঙ্গারাম উজো বাজার এলাকায় রিপা চাকমা(২৩) নামের এক সন্তানের জননীকে পুলিশ সদস্য কর্তৃক ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য বাঘাইহাট পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল সরোয়ার হোসেন(২৫) বলে জানা গেছে।
শুক্রবার বিকাল পাঁচটার দিকে গঙ্গারাম- উজো বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ভিকটিম রিপা চাকমা জানান, বিকালের দিকে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য আমার বাসায় এসে আমার কাছে খাওয়ার জন্য পানি চায়। আমি পানি দিলে এরপর আমাকে সে কু-প্রস্তাব দেয় এবং ধর্ষণের চেষ্টা করে।
এসময় আমি নিজেকে বাঁচাতে চিৎকার করি। আমার চিৎকারে আশেপাশের লোক ছুটে আসলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য দৌড়ে পালিয়ে গিয়ে গঙ্গারাম বাজারের পুলিশ পোস্টে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে পুলিশেরা তাকে বাঘাইহাট পুলিশ ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়।
এদিকে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য সারোয়ার জানান, আমি বিকালের দিকে একটি দরখাস্ত কম্পিউটারে কম্পোজ করতে পুলিশ ক্যাম্প থেকে বাঘাইহাট বাজারে যাই। বাজারে কম্পোজ সুবিধা না থাকায় একজন পাহাড়ীর মোটর সাইকেলে করে গঙ্গারামের উজোবাজারে যাই কম্পোজ করানোর জন্য। গঙ্গারামের উজোবাজার গেলে মোটর সাইকেলের চালক গাড়ী না থামিয়ে বাজার অতিক্রম করে যেতে থাকে।
এসময় আমি চালককে গাড়ী থামানোর জন্য বারবার অনুরোধ করলে চালক গাড়ী না থামিয়ে বাজার থেকে প্রায় ২৫০মিটার পর্যন্ত দূরে নিয়ে গিয়ে আমাকে গাড়ী থেকে নামায়। এরপর চার/পাঁচ জন চাকমা যুবক এসে আমাকে ব্যাপক মারধর করে একটি ঘরের ভিতর নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় অমি তাদের কাছ থেকে দৌড়ে গিয়ে গঙ্গারাম পুলিশ পোস্টে আশ্রয় নিই।
এ ঘটনার সাথে সাথে সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরুপা চাকমা ও সম্পাদক জোছনা রাণী চাকমাসহ নারী সমাজের সদস্য ও এলাকার লোকজন উজোবাজার এলাকায় জড়ো হয়।
খবর পেয়ে সাজেক থানার অফিসার ইনচার্জ নুরুল আনোয়ার দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন এবং সকলের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
সন্ধ্যা ৭.৩০দিকে গঙ্গারামের ১৯ ইসিবি ক্যাম্পে সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে বৈঠক করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাজেক থানার ওসি নুরুল আনোয়ার, বাঘাইহাট পুলিশ ফাঁড়ির আইসি শফিকুল ইসলাম, ১০নং ডিপি পুলিশ ফাঁড়ির আইসি নজরুর ইসলাম, সাজেক নারী সমাজের সভপতি নিরুপা চাকমা, সম্পাদক জোছনা রাণী চাকমা, সাবেক ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার নয়ন চাকমা প্রমুখ।
এসময় বৈঠকে ভিকটিম ও অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ভিকটিমের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান ও এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবী করা হয়। ভিকটিমের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলাও করা হবে বলে জানানো হয়।
বৈঠকে সাজেক থানার ওসি জানান, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে সাজেক থানার অফিসার ইনচার্জ নুরুল আনোয়ার পার্বত্যনিউজকে জানান, ঘটনার খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় এবং বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি।
তিনি আরো জানান, রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপারের নির্দেশে অভিযুক্ত পলিশ সদস্যকে বাঘাইহাট পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ঘটনার সাথে সাথে ক্লোজড করা হয়েছে এবং ভিকটিমের মামলার পর তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।