নাইক্ষ্যংছড়িতে বিডিআর বিদ্রোহের দিন আজ

25-02-16 Naikhongchari BDR News

মো.আবুল বাশার নয়ন:
আজ ২৬ ফেব্রুয়ারী। বিডিআর বিদ্রোহের নামে ২০০৯ সালের এই দিনে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১৫ রাইফেল ব্যাটালিয়ন সদরে তান্ডব চালায় উচ্ছৃঙ্খল জোয়ানরা। সে সময় তৎকালীন অধিকায় লে: কর্ণেল আবু নাঈমকে লাঞ্চিত ও অস্ত্রাগার লুট করে বিডিআর জোয়ানরা। ঘৃণ্য ঐ ঘটনার পাঁচ বছর পূর্ণ হল আজ।

সে ঘটনার বিচার হয়েছে। কিন্তু আজও সেই দিনের তান্ডব ভুলতে পারেনি মানুষ। ওই ঘটনায় ৩৫জন বিডিআর জোয়ানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।

যা ঘটেছিল সেদিন

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী যখন ঢাকায় পিলখানায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ চলছিল সেদিনও নাইক্ষ্যংছড়ি ১৫ রাইফেলস ব্যাটালিয়ন ছিল শান্ত পূর্ণ। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা সেদিন ঘটেনি এখানে। কিন্তু রাত শেষ হওয়ার সাথে সাথেই কিছু উচ্ছৃঙ্খল বিডিআর জোন সদরের অস্ত্রাগারের তালা ভেঙ্গে লুট করে নেয় সমস্থ অস্ত্র।

সকাল ৮ঘটিকার সময় এসব বিডিআর জোয়ান মুখে গামছা পেছিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি খালের পার্শ্ববর্তী, পাচঁতলা ভবনের উপর, বিডিআর মাঠ, রেষ্ট হাউস এলাকায় সশস্ত্র অবস্থান নেন। এসময় ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর মাসুদ তাঁর পরিবার নিয়ে জোন সদর থেকে বিকল্প পথে পালিয়ে যান।

সকাল আনুমানিক ১১টায় ছুটিতে থাকা জোন কমান্ডার লে: কর্ণেল আবু নাঈম পূনরায় জোন সদরে ফিরে বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান। এক পর্যায়ে কিছু উচ্ছৃঙ্খল বিডিআর জোয়ান তাঁকে জিম্মী করে দুপুর ৩টা পর্যন্ত কোয়াটার গার্ডে বন্দী রাখে এবং কয়েক শত রাউন্ড ফাকা গুলি বর্ষণ করেন।

পরে অধিনায়ককে ছেড়ে দেওয়া হলে নাইক্ষ্যংছড়ি পুরাতন বাস স্টেশন এলাকায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওয়াব আসলাম হাবিব, থানা অফিসার ইনচার্জ স্বপন কুমার নাথ, উপজেলা চেয়ারম্যান তোফাইল আহামদ বিদায় জানান।

এ ঘটনায় ১৩ এপ্রিল নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি ওবাইদুল হক ৩৫জন বিডিআর জোয়ানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করেন। পরের দিনই নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়ন সদর থেকে এসব বিডিআর জোয়ানকে আটক করা হয়।

উক্ত মামলায় ৩৫জন বিডিআর জোয়ানকে ৫ডিসেম্বর ২০১০ইং সাতকানিয়া বাইতুল ইজ্জত রাইফেলস ট্রেনিং সেন্টারে স্থাপিত বিদ্রোহের ১৬নম্বর বিশেষ আদালতে চার্জ গঠন করা হয় এবং ২০১১ সালে ৩ জানুয়ারী সে আদালতে ১৭ জোয়ানকে সর্ব্বোচ্চ ৭বছর, ৪জনকে সর্বনিম্ম ১বছর সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়।
বিভিন্ন মেয়াদের সাজাপ্রাপ্ত বিডিআর জোয়ানরা হচ্ছেন সুবেদার মেজর মোঃ জহিরুর রহমান ৭ বছর,

সুবেদার মেজর এসএম আব্দুস সামাদ ৭ বছর, সুবেদার মেজর মোঃ ইসমাইল হোসেন ৭ বছর, সুবেদার মেজর মনোরঞ্জন দত্ত ৭ বছর, সিপাহী মোঃ রবিউল হাসান ৫ বছর, হাবিলদার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন ৫ বছর, হাবিলদার আমীর হোসেন ৭ হাবিলদার মোঃ সাইফুল আলম ৭ বছর, নায়েক মোঃ শামসুদ্দীন ৫ বছর, নায়েক মোঃ মোস্তাক আহম্মেদ ৪ বছর, নায়েক মোঃ সিরাজুল ইসলাম ৭ বছর, নায়েক জিএম জিয়াদুল ইসলাম ৭ বছর, ল্যান্স নায়েক মোকছেদ আলী ৭ বছর, ল্যান্স নায়েক মোঃ বিল্লাল হোসেন মোল্লা ৪ বছর, ল্যান্স নায়েক আবু জামাল চৌধুরী ৭ বছর, সিপাহী মোঃ হুমায়ুন কবির ৭ বছর, সিপাহী মোঃ জসিম উদ্দিন ৭ বছর, সিপাহী মোঃ মাহাবুব রহমান ৭ বছর, সিপাহী মুন্সী মোঃ আলী বারী ৭ বছর, সিপাহী মোঃ হোসেন শাহ ছোহরাদ্দীন ৭ বছর, সিপাহী কাজী আনিসুর রহমান ৪ বছর, সিপাহী আব্দুল জলিল শেখ ৪ বছর, সিপাহী মোঃ রাশেদুজ্জামান ২ বছার, সিপাহী মোঃ ওমর ফারুক ৪ বছর, সিপাহী মোঃ আবুল বাশার ৫ বছর, সিপাহী ফয়সাল দেওয়ান ১ বছর, সিপাহী মোঃ আব্দুল মজিদ ৭ বছর, সিপাহী কামরুল হাসান ১ বছর, সিপাহী মোঃ নাসিম উদ্দিন ২ বছর, সিপাহী মোঃ খলিলুর রহমান ৩ বছর, সিপাহী মোঃ মহিউদ্দিন ২ বছর, সিপাহী মোঃ কামরুজ্জামান ৩ বছর, সিপাহী সহকারী মোঃ লুৎফর রহমান ১ বছর, সিপাহী লতিফুর রহমান ১ বছর, সিপাহী মোঃ বিল্লাল হোসেন ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও সকলকে একশ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন