আম বয়ানে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু

fec-image

আজ ফজর নামাজের পর আম বয়ানের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে তাবলীগ জামাতের প্রথম পর্বের ৩ দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা। ঢাকার জিরোপয়েন্ট থেকে ২২ কিলোমিটার উত্তরে টঙ্গী তুরাগ নদীর তীরে আয়োজন করা হয়েছে এ বিশ্ব ইজতেমার।

১৩, ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে আলেমওলেমা গ্রুপের যোবায়ের পন্থীদের বিশ্ব ইজতেমা। রবিবার হবে আখেরী মোনাজাত। ৪ দিন বিরতি দিয়ে আবার ২০, ২১ ও ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে নয়া দিল্লির আদি তাবলীগ জামাতের মুরুব্বি মাওলানা সাদ অনুসারীদের ইজতেমা। ২২ জানুয়ারি রবিবারও থাকছে আখেরী মোনাজাত।

ইজতেমা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন ইজতেমায় সফলতা কামনা করে।

আজ উপমহাদেশের বৃহৎ জুমা নামাজ অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে। ইজতেমায় অবস্থান করা মুসল্লীসহ ঢাকা টঙ্গী উত্তরা গাজীপুর থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান আজকের জুমা নামাজে যোগ দিতে সকাল থেকে রওনা দিয়েছেন টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের দিকে। জুমা নামাজের আগ পর্যন্ত মানুষের এ ঢল অব্যাহত থাকবে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার আলমগীর হোসেন জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, মহাসড়ক শৃঙ্খলায় রাখতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস থেকে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর, টঙ্গী থেকে কালীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের মিরের বাজার থেকে টঙ্গীর স্টেশন রোড পর্যন্ত এবং রাজধানী ঢাকার কামারপাড়া থেকে টঙ্গীর স্টেশন রোডের যানচলাচল বিকল্প পথ বাইপাস দিয়ে চলাচলের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

ইজতেমার ছয় উছুল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বাদ ফজর থেকে।। আল্লাহকে রাজিখুশি রাখতে কি কি আমল করতে হবে তা নিয়ে চলছে আম বয়ান। ইজতেমায় শীর্ষ মুরুব্বিগন মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে বয়ান করছেন। ইজতেমা মাঠের মাঝ বরাবর থাকা মঞ্চ থেকে মাইকের সাহায্য বয়ান প্রচার করা হচ্ছে। মুসল্লীরা মাঠে অবস্থান করে বয়ান শোনছেন মনযোগ দিয়ে এবং তা আমল করছেন নিজ সাথীদের নিয়ে। নিজেদের জান মাল খরচ করে বিশ্ব ইজতেমায় অবস্থান করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

শুক্রবার সকাল থেকে ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মুসল্লীদের ভীড়ে এক বর্গ কিলোমিটারের বিশাল চটের ছাউনির প্যান্ডেলটি কানায় কানায় ভরে গেছে। মাঠের কোথাও তিল ধারনের ঠাই নাই। মুসল্লীরা মাঠে জায়গা না পেয়ে রাস্তার ফুটপাতে অবস্থান নিয়েছেন। এমনকি ৩ তলা টয়লেট বিল্ডিংয়ের ছাদেও ঠাই নিতে শুরু করেছেন অনেকে।

করোনা কারণে দুবছর বিশ্ব ইজতেমা বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হওয়ায় মুসল্লীর সংখ্যা আশাতীত বৃদ্ধি পেয়েছে। টঙ্গীতে মুসল্লীদের ঢল নেমেছে। বাস, ট্রাক, ট্রেন, প্লেনে করে মুসল্লীরা আসছেন ইজতেমা ময়দানে। পায়ে হেঁটেও আসছেন বহু মুসল্লী। বিদেশি মুসল্লীরাও আসছেন দলে দলে।
শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৪০ দেশের দেড় হাজার বিদেশি মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে এসে পৌঁছেছেন।

মুসল্লিদের আল্লাহুআকবর ধ্বনিতে মুখর এখন টঙ্গীর তুরাগ পাড়। বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হকের আম বয়ানের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে ইজতেমায় আনুষ্ঠানিকতা। এবার মুসল্লিদের জমায়েতে আগের সব রেকর্ড ভেঙে যাবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা।

ইজতেমা আয়োজক কমিটির প্রধান সদস্য প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, প্রথম পর্বে আগত মুসল্লিদের জন্য পুরো ময়দানকে ৯১ খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেক খিত্তায় একজন করে জিম্মাদার আছেন। আগত মুসল্লীরা খিত্তার জিম্মাদার থেকে সব ধরনের পরামর্শ ও সেবা নেবেন।

ইজতেমা ময়দানে মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা মুফতি জহির মুসলিম গণমাধ্যমে জানান, আজ সকাল পর্যন্ত বিশ্বের ৮০ টি দেশের প্রায় ৪ হাজার মুসল্লি ময়দানে এসেছেন। আজ শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে জুমা নামাজে ইমামতি করবেন মাওলানা জোবায়ের

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, ইজতেমার নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে পরো টঙ্গী জুড়ে। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। র‍্যাবও ইজতেমা ময়দানে ওয়াচ-টাওয়ার সিসি ক্যামেরা ও কন্ট্রোলরুম স্হাপন করেছে।

স্থানীয় এমপি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ইজতেমা বান্ধব সরকার। ইজতেমায় আসা মুসল্লীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল সেবা নিশ্চিত করেছেন। মন্ত্রী ইজতেমা ময়দানে মুসল্লীদের জন্য কয়েকটি চিকিৎসা সেবার বুথ উদ্বোধন করেছেন।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানান, ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার সরবরাহ নিশ্চিত এবং ছিনতাই-পকেটমারসহ নানা অপরাধ রুখতে ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে।

শহীদ আহ্‌সান উল্লাহ্‌ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম জানান, মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবায় স্বাস্থ্য বিভাগ পাঁচটি ক্যাম্প করেছে। সাতটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল মোতায়েন থাকবে ইজতেমায়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন