আরাকান স্বাধীন করে রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

সম্প্রতি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) এক শীর্ষ নেতার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে দৈনিক আমাদের সময়। নাইক্ষ্যংছড়ির তমরু সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় আরসা নেতা হাকিব সাহেবের স্বাক্ষাৎকারটি নেন সাংবাদিক হাবিব রহমান।

আমাদের সময়ের সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, এই হাকিম সাহেব আরসার অস্ত্র উইং সমন্বয় করেন। তার সঙ্গে ছিলেন আরও একজন সদস্য তিনি মোহাম্মাদ আলম একজন আরসা যোদ্ধা।

স্থানীয়ভাবে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে ‘হারাকাহ আল ইয়াকিন’ বা শুধু ‘ইয়াকিন’ নামে পরিচিত আরসা। বর্তমানে শরণার্থী রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংগঠনটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বেশি দেখা যায়। হাকিম সাহেবের সেই সাক্ষাতকারটির কিছু অংশ পার্বত্যনিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

আরসার সংগঠিত হওয়ার প্রেক্ষাপট ও শুরুটা জানতে চাই।

নিজ দেশে যুগের পর যুগ নির্যাতন-নিগ্রহের শিকার হয়ে আসছে রোহিঙ্গারা। নারী শিশু থেকে শুরু করে যুবক তরুণ কেউই বাদ নেই মিয়ানমার সরকারের নির্যাতন থেকে। তাদের এ নির্যাতন সাম্প্রতিক সময়ে মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল।

এমন প্রেক্ষাপটে ২০১২ সালের শেষ দিকে সৌদি আরবে অবস্থানরত মাওলানা আবুল কালাম হায়দারী ও মাওলানা আবুল হাসান হায়দারী প্রথমে সংগঠন গোছানোর কাজ শুরু করেন। তারা দুজনই রোহিঙ্গা। আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা ছাড়াও তারা একটি সাংগঠনিক কাঠামো তৈরির চেষ্টা করেন। ওই সময় সৌদি আরবে ছিলেন বর্তমান আরসা প্রধান আতাউল্লাহ। সংগঠনে সবাই তাকে হাফেজ আতাউল্লাহ নামেই ডাকেন। ২০১৩ সালে নেতৃত্বে আসা আরসার প্রথম দল মিয়ানমারে প্রবেশ করে। রাখাইনের তংঘুপাহাড় এলাকায় আরসার প্রথমদিকের একটি বৈঠকে অভিযান চালিয়ে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা প্রায় ১০ জনকে হত্যা করে।

আরসার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কিছু বলুন।

কোরআন, হাদিস, দ্বীন ও মাতৃভূমি রক্ষার শপথ প্রতিটি আরসা মুজাহিদের। আরাকান স্বাধীন করে রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠাই মূল লক্ষ্য। আরসা বিশ্বাস করে, একদিন না একদিন আরাকান স্বাধীন হবেই। বর্তমানে সাধারণ রোহিঙ্গাদের জানমাল রক্ষাকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

আরসার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

এটা ঠিক, আরসার অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে সংগঠনটির যোদ্ধারা অপরিসীম সাহসী। এটাই বড় শক্তি ও অস্ত্র। শুরুতে এক হাজার ৮৩২ জন সদস্য ছিল আরসায়। সর্বশেষ অভিযানে অনেকেই মারা গেছেন। তবে অস্ত্র বড় সমস্যা। এত মুজাহিদের জন্য অস্ত্র মাত্র দুই শতাধিক। অস্ত্রের বেশিরভাগই চীন ও ভারতের তৈরি। ভারী অস্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ রয়েছে। কিন্তু ভারী অস্ত্রের তেমন কোনো জোগান নেই। একটি বড় অস্ত্রের চালান ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছি আমরা। এ জন্য ইতোমধ্যে মোটা অঙ্কের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। প্রত্যেক পাড়াভিত্তিক কমিটি গঠন করছি। ১০ গ্রামের দায়িত্ব এক নেতাকে দেওয়া হয়। তাকে জিম্মাদার নামে ডাকেন সবাই। কেউ কেউ দায়িত্বশীলও বলেন। আরসার ২০ ভাগ লোক শিক্ষিত।

আরসার সঙ্গে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের অভিযোগ উঠেছে। আপনার কী মনে হয়?

আমরা কাজ করছি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। এখন একটা সংগঠনে অনেক লোক কাজ করছেন। সম্প্রতি সময়ে কিছু সমস্যা আমাদের এখানেও হয়েছে। আমি মনে করি না নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে দলের কেউ ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে। এমনটা করলে দল ভেঙে যাবে অচিরেই। আমার ছোট ভাই নুরুল হাকিমও এই সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে। সে মারা গেছে গত বছরের ৬ মে। সম্মুখযুদ্ধে। তাকে হাফেজ আতাউল্লাহ খুব স্নেহ করতেন। আতাউল্লাহর ছায়াসঙ্গী ছিল। কিন্তু সংগঠনের একটি গ্রুপের ইচ্ছাকৃত ভুলের জন্য সে মারা যায়। তারপরও আমি ধৈর্য ধরে আছি। আমরা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না। কিন্তু কেউ যদি অন্যকিছু চিন্তা করে তা হলে তার দায় তার ওপরই বর্তাবে। তা ছাড়া এরই মধ্যে আরসা প্রধান আতাউল্লাহর এক ভাইকে পাকিস্তানে অপহরণ করা হয়। তাকে সংগঠনের তহবিল থেকে মুক্তিপণের মাধ্যমে ছাড়িয়ে আনা হয়। এই বিষয়টিও সংগঠনের কেউ কেউ ভালোভাবে দেখেনি। এসব তো চলবেই। তবে দিনশেষে সবাইকে মিলেমিশেই থাকতে হবে। নিজেদের ভালোর জন্যই।

৯ অক্টোবর পর্যন্ত আপনাদের অস্ত্রবিরতি চলছে। এরপর কী হবে?

নিরীহ নারী-শিশুর ওপর মিয়ানমার বাহিনী যে নিপীড়ন শুরু করে আমরা এ কারণে অস্ত্রবিরতিতে যাই। কিন্তু এখন আরাকান প্রায় শূন্য হয়ে যাচ্ছে। সবাই বাংলাদেশে চলে আসছে। আমরা এখন ভিন্ন আঙ্গিকে পরিকল্পনা করছি। মিয়ানমার যে বর্বরতা চালিয়েছে এ জন্য তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে। বড় হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

আপনারা সীমান্ত এলাকায় থাকছেন। দলের প্রধান আতাউল্লাহ কোথায়?

এবারের হামলার পর অনেক মুজাহিদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। তবে হাফেজ আতাউল্লাহ আরাকানেই দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান করছেন। কয়েকদিন পর পর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হচ্ছে আমাদের। আরসা সদস্যরা এখন রাতে ছাড়া চলাফেরা করতে পারে না। এখন তাদের কাছে রাতই হলো দিনের মতো। আমরা লড়াই করছি। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের মারতে পারে। কিন্তু নিরীহ নারী শিশুদের ওপর হামলা কেন? আমরা স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করছি। ভাবিনি আন্দোলনের ফলে তারা সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর এভাবে হামলা চালাবে, গণহত্যা করবে। নারী ও শিশুদের ওপর নৃশংসতা চালাবে। গ্রামের পর গ্রাম আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেবে।

 

সূত্র: কালের কন্ঠ

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন