উখিয়ায় গহীন অরণ্য থেকে মাটি খুঁড়ে যুবকের লাশ উদ্ধার, রহস্যজনক ইদ্রিস
অপহরণের ২৫ দিন পর গহীন অরণ্য থেকে মাটি খুড়ে যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
রবিবার (২৪মে) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালীর গহীন অরণ্যে মাটি খুঁড়ে তার লাশ উদ্ধার করে টেকনাফের হোয়াইক্যং ফাঁড়ি পুলিশ।
অপহৃত ও নিহত যুবক হচ্ছে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মিনাবাজার এলাকার মো. হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ শাহেদ (২৬)।
গত ২৯ এপ্রিল রাতে মিনাবাজারের পাহাড়ি এলাকা থেকে ধান ক্ষেত পাহারা দেয়ার সময় শাহেদ‘সহ ৩জনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় রোহিঙ্গা হাকিম ডাকাতের বাহিনী। এর দুইদিন পর অপহৃত আক্তারুল্লাহ নামে এক যুবককে হত্যা করে হোয়াইক্যংয়ের উনচিপ্রাং এলাকায় পাহাড়ের কাছে লাশ ফেলে দেয় হাকিম বাহিনী।
আক্তারুল্লাহকে হত্যার পর ফোন করে হত্যার কথা স্বীকার করে শাহেদ‘সহ দুইজনের জন্য ২০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবী করতে থাকে হাকিম।
এসময় অপহৃতদের উদ্ধারে মানববন্ধন পালন করে স্থানীয়রা।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন কয়েক দফা পাহাড়ে অভিযান চালালেও অপহৃত কাউকে উদ্ধার কিংবা ডাকাত দলের কাউকে আটক করতে পারেনি।
একপর্যায়ে রবিবার সকালে ইদ্রিস নামে অপহৃতদের একজন পালিয়ে আসে। সে জানায় শাহেদকে হত্যা করে পাহাড়ে পুঁতে ফেলে ডাকাতরা। পরে তার দেখানো পথে অভিযান চালিয়ে রবিবার বিকালে নিহত শাহেদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমান জানান, পালংখালীর গহীন পাহাড়ে কুইচ্ছার জোড়া নামক এলাকা থেকে নিহতে লাশ উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরীর পর নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। চারদিন আগে তাকে গুলি করে হত্যা করে লাশ মাটিতে পুতে ফেলে দস্যূ বাহিনী।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ জানান, হাকিম ডাকাতের আস্তানা থেকে একজন জীবিত ফিরে আসা ও লাশ উদ্ধারসহ সব কিছু নিয়ে পুলিশ হাকিমের অবস্থান চিহ্নিত করতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ডাকাত দলের কাছ থেকে পালিয়ে আসা যুবক ইদ্রিসের পালিয়ে আসা ও হাকিমের রাখাইনের পাড়ি জমানোর বিবরণ অনেকের কাছে সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। তাদের ধারনা ডাকাত দলের সাথে তার যোগসাজস থাকতে পারে। সে দশ বারো বছর পূর্বে মিয়ানমার থেকে আসা পুরোনো রোহিঙ্গা হওয়ায় সন্দেহ আরো বাড়ছে বলে জানান ওই সূত্র।
উল্লেখ্য বিগত ৪-৫ বছর ধরেই টেকনাফ-উখিয়ার গহীন পাহাড়ে আস্তানা গেড়ে অপহরণ, খুন‘সহ নানা অপরাধে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে অত্যাধুনিক অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হাকিম ডাকাত। নিজেকে সে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আল ইয়াকিন দ্বারা পরিচালিত বলে দাবী করে বেশ কয়েকদফা ভিডিও বার্তা ছাড়ে।
এর আগে তাকে গ্রেফতারে পাহাড়ে ড্রোন ও হেলিকপ্টার অভিযান চালিয়েছিল র্যাব।
এছাড়া পুলিশ বিভিন্ন সময় হাকিমের আস্তানায় অভিযান চালাতে গেলে বন্দুকযুদ্ধে হাকিমের দুই ভাই ও স্ত্রী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।
এতো কিছুর পরও সব অভিযান ব্যর্থ করে দিয়ে বহাল তবিয়তে থেকে খুন-অপহরণসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে এই হাকিম ডাকাত।