উখিয়ায় বন্যহাতির চলাচলের পথ বন্ধ করে চলছে রোহিঙ্গা পারাপার
কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উখিয়া টিভি রিলে কেন্দ্রে সংলগ্ন এলাকা দিয়ে সন্ধ্যার পর থেকে যানবাহন ও জন চলাচলে আতঙ্ক বাধা সৃষ্টি হত। কারণ প্রতি নিয়ত ওই পথ দিয়ে পারাপার করতো বন্য হাতির দল। যার ফলে বনবিভাগ টিভি রিলে কেন্দ্র সংলগ্ন (বর্তমান রোহিঙ্গা ট্রানজিট ক্যাম্প) এলাকায় সাইনবোর্ড দিয়ে জন চলাচলের ক্ষেত্রে সতর্কতা আরোপ করে দেয়। কিন্তু বর্তমানে রোহিঙ্গা বসতির কারণে এই পথ দিয়ে আর বন্যহাতির পারাপার হয়না, চলছে রোহিঙ্গা পারাপার। একই স্থানে এনজিও সংস্থার পক্ষ থেকে পথচারী তথা রোহিঙ্গা চলাচলের সাইনবোর্ড ব্যবহার করা হয়েছে। রোহিঙ্গা বসতির কারণে বন্যহাতির এখন অনেকটা বিলুপ্তির পথে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, উখিয়ার বিস্তীর্ণ সংরক্ষিত পাহাড়ে নির্বিচারে রোহিঙ্গা বসতি স্থাপনের কারণে ধ্বংস হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬হাজারের একর বনভূমি। এতে ওই অঞ্চলে বসবাসরত এশিয়া প্রজাতির বন্যহাতি বিলুপ্তের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এক সময় ওই অঞ্চলে আড়াইশ’র বেশি বন্য হাতির অবস্থান থাকলেও ইতোমধ্যে তারা নিরাপদ বাসস্থান হারিয়ে অন্যত্রে পাড়ি জমিয়েছে।
এক সময় চট্রগামের দোহাজারি ও চুনুতি রেঞ্জে উখিয়ার পাহাড়ি বনভূমিতে ঘুরে বেড়াত এশিয়া প্রজাতির ইন্ডায়া উপপ্রজাতির হাতিগুলো।
বন বিভাগের তথ্যমতে, কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন উখিয়া ও টেকনাফের বনাঞ্চলে দুই বছর ধরে তীব্র খাদ্য ও পানিসংকটে রয়েছে ৬৭টি বন্য হাতি। এর মধ্যে রোহিঙ্গা বসতির কারণে ৪০টি হাতির চলাচলের পথ বন্ধ হওয়ায় সেগুলো সেখানে আটকা পড়েছে। সাড়ে ছয় হাজারের বেশি বনাঞ্চল উজাড়, হাতি চলাচলের অন্তত ১২টি করিডর (রাস্তা) বন্ধ, ২২টির বেশি প্রাকৃতিক জলাধার (খাল, ছড়া) ধ্বংস হওয়ায় হাতিগুলো খাদ্য ও পানির সংকটে পড়েছে। এতে হাতিগুলো আক্রমণাত্মক হয়ে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে।
গত দুই বছরে বন্য হাতির আক্রমণে টেকনাফ ও উখিয়ায় মারা গেছেন অন্তত ২৭ জন। এর মধ্যে ১৩ জনই রোহিঙ্গা। সর্বশেষ গত জুন মাসে হাতির আক্রমণে রামুতে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল। গত দুই বছরে টেকনাফের বাহারছড়া ও উখিয়ার ইনানী বনাঞ্চলে রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গেছে দুটি হাতি। বন বিভাগের দাবি বার্ধক্যজনিত কারণে হাতি দুটোর মৃত্যু হয়েছিল।
সংশ্লিষ্টরা আরো জানায়, উখিয়ার বনভূমিতে রোহিঙ্গারা যত্রতত্র আবাসস্থল গড়ে তুলায় হাতির দল চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়ে অন্যত্রে পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়েছে। দিন দিন বনভূমি উজাড় হওয়ার কারণে বন্যহাতির পাশাপাশি বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯৩১ সালে সরকার টেকনাফ এবং উখিয়ার ৩০ হাজার একর পাহাড়ি বনভূমিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করেছিল।
কিন্তু ১৯৭৮ সাল থেকে এখানে গড়ে উঠেছে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের আবাস। আগে এখানের ৮০০ একর বনভূমি রোহিঙ্গাদের কাছে বেহাত হলেও এখন যোগ হয়েছে আরো অন্তত সাড়ে ৬হাজার একর পাহাড়ি বনভূমি।
টিভি রিলে কেন্দ্র এলাকার বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ নেতা জহিরুল ইসলাম সোনালী বলেন, আজ থেকে ২ বছর পুর্বে বন্যহাতির ভয়ে এই এলাকায় কোন সাধারণ মানুষ রাতে বাড়ীতে ঘুমাতে পারতনা। সড়কের উপর বন্যহাতির দল দাঁড়িয়ে থাকার কারণে রাতে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হত। কিন্তু তা এখন আর চোখে পড়েনা। রোহিঙ্গা বসতির কারণে বন্যপ্রাণী সম্পূর্ণ বিলুপ্তির পথে।
উখিয়ার রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, মূলত উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালি, পালংখালী শফিউল্লাহকাটা, জামতলী, বাঘঘোনা, টেকনাফের কারাংতলি, উনসিংপ্রাং এলাকা বন্য হাতির মূল বিচরণের ক্ষেত্র ছিল। বর্তমানে সেখানে রোহিঙ্গা বসতি গড়ে উঠার কারণে বন্যহাতির দল আবাসস্থল হারিয়ে অন্যত্রে পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়েছে।