উপকূল রক্ষা বাঁধ: বিলীন হতে চলেছে ছাত্রলীগ নেতার বসতিসহ শতাধিক বসতবাড়ি

pic

এম.জুবাইদ, পেকুয়া:

কক্সবাজারের পেকুয়া ও সীমান্তবর্তী চট্টগ্রামের বাশঁখালী উপজেলার পুইছড়ি ইউনিয়নে নির্মিত হচ্ছে উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বঙ্গোপসাগরের ছনুয়া নদীর অববাহিকায় জোয়ারের পানি ঠেকাতে সীমান্তবর্তী দক্ষিণ পুইছড়ি এলাকায় এ বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। ১৮ চেইন সুউচ্চ বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এ নির্মাণ কাজ প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়েছে।

তবে কাজের নকশা পরিবর্তন করায় বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত হচ্ছে না। এতে করে বিলীন হতে চলেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এরশাদুর রহমানের গ্রামের পৈত্রিক বসতিসহ ওই এলাকার আরও শতাধিক বসতবাড়ি। ছনুয়া নদীর তীব্র পানির স্রোতে গত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রাম জেলার পুইছড়ি ইউনিয়নের আরবশাহঘোনা এলাকার বিপুল অংশে বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম পাউবোর ৬৪/২ এ ফোল্ডারের বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য চলতি ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে সংশ্লিষ্ট বিভাগ জরুরী ভিত্তিতে সীমান্তবর্তী ওই ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের কাজ শুরু করে।

জানা গেছে, প্রায় ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই কাজের বেড়িবাঁধের মাটি ভরাট কাজ ইতিমধ্যে অর্ধেক সমাপ্ত হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কাজের নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো.মুজিব বেড়িবাঁধের বিধ্বস্ত অংশ বাদ দিয়ে তার সুবিধামত স্থানে নির্মাণ কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। এরই ফলে শঙ্কার মধ্যে পড়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতার ওই বাড়িসহ আশপাশের আরো বহু বসতি।

স্থানীয়রা আরো জানায়, বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জামায়াতের আমীর মো.জহিরুল ইসলাম প্রভাবিত করে ঠিকাদারকে ছাত্রলীগ নেতার বসতবাড়ির সংলগ্ন বেড়িবাঁধের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৮/১০চেইন অংশ মেরামত না করে অধিকতর টেকসই অংশে নির্মাণ কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।

এব্যাপারে স্থানীয় হাজী আলমগীর, শওকত আলম, আজাদুর রহমানসহ অনেকেই জানান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা এরশাদুর রহমানের বসতবাড়ি বরাবর বেড়িবাঁধ নির্মাণ হওয়ার কথা থাকলেও অহেতুক অন্য অজুহাত দেখিয়ে ঠিকাদার ওই স্থানে নির্মাণ কাজ বিরত রেখে টেকসই অংশে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের অংশ থেকেই গেছে।

অপর দিকে পুইছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান চৌধুরী দাবি করেছেন, প্রতিহিংসার বশর্বর্তী হয়ে ছাত্রলীগ নেতার বসতবাড়িসহ গ্রামের ভাঙ্গন প্রতিরোধ না করে কাজের নকশা পরিবর্তন করেছে ঠিকাদার ও উপজেলা চেয়ারম্যান। তিনি আক্ষেপ করে আরো বলেন, দেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কিন্তু আমাদের এখানে সর্বক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বঞ্চিত ও উপেক্ষিত।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে দেখা পেকুয়া-বাঁশখালী সীমান্তের দক্ষিণ পুইছড়ি আরবশাহঘোনায় বেড়িবাঁধ নির্মাণে কাজ চলছে। ছনুয়া নদী ও পেকুয়া উপজেলার ভোলা নদীর অববাহিকায় তীর রক্ষার জন্য সরকার এ বরাদ্ধ দিয়েছেন। পেকুয়ার রাজাখালীর আরবশাহবাজারের ওপারে ছাত্রলীগ নেতা এরশাদুর রহমানের বসতবাড়িসহ দক্ষিণ পুইছড়ি এলাকার প্রায় ২শতাধিক বসতি নদীর করাল গ্রাসের কবলে পড়েছে। ওই অংশে দ্রুত সময়ে বেড়িবাঁধ নির্মিত না হলে চলতি বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে পেকুয়া উপজেলার বিস্তৃত অঞ্চলসহ দক্ষিণ বাশখালীর আরবশাহঘোনা, কেয়ারাখালীসহ একাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।

স্থানীয়রা অবিলম্বে ওই বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। জানতে চাইলে দক্ষিণ পুইছড়ির বাসিন্দা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এরশাদুর রহমান এর সত্যতা স্বীকারে করে বলেছেন, গ্রামের লোকজন বেড়িবাঁধের বিষয়টি আমাকে অবহিত করেছেন। তবে আমার বাড়ির আশপাশের বেড়িবাঁধের করুন দশা থাকলেও শুধু শুধু বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটি আমার পরিবার ও এলাকাবাসীর সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে পাউবোর উপ-সহকারি প্রকৌশলী মনজুরুল হক বলেন, আমি ২ মাস আগে যোগদান করেছি। আমি এ বিষয়ে তেমন কিছু জানি না।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন