উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের মুক্তিপণ দিয়ে ৫দিন পর ছাড়া পেয়েছে ফটিকছড়িতে অপহৃত ৩ বনক

মুক্তি

রামগড় প্রতিনিধি:

ফটিকছড়িতে গত বুধবার (১৪ জানুয়ারি)পাহাড়ি সন্ত্রাসীর হাতে অপহৃত তিন বনশ্রমিক এজাহার মিয়া (৪৫), হোসেন বলি (৪৬) ও আইয়ুব বলী (৪২) অপহরণের চারদিন পর গতকাল রবিবার মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন । রবিবার সন্ধ্যার পর তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। স্থানীয় ইউপি মেম্বার মো: ইউনুছ এ তিন বন শ্রমিককে অপহরণকারীরা ছেড়ে দেয়ার সত্যত্যা নিশ্চিত করেছেন। কত টাকার মুক্তিপণ দেয়া হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে ঐ ইউপি সদস্য জানাতে পারেননি।

তিনি জানান, সুস্থ অবস্থায় তারা বাড়িঘরে ফিরে এসেছে বলে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শুনেছেন। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, রবিবার দুপুর পর্যন্ত দাবীকৃত মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা নিয়ে অপহরণকারীদের দরকষাকষি চলছিল। অপহৃতের দরিদ্র অসহায় তিন পরিবারের পক্ষ থেকে তিন লাখ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল অপহরণকারী উপজাতীয় সন্ত্রাসী গ্র“পটিকে ।

সূত্র জানায়, মুক্তিপণ এবং অপহরণের বিষয়ে কাউকে কিছু জানালে মেরে ফেলার হুমকি,দেয়া হয়েছে অপহৃতদের। ফলে সংবাদিক বা অন্য কারো সাথেই এ ব্যাপারে কোন কথা বলছেন না অপহৃতদের পরিবার । গতকাল রবিবার নানুপুর ইউনিয়নের গামারীতলা গ্রামে অপহৃত এজাহার মিঞার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি।

এক গ্রামবাসী জানান, অপহৃত স্বামীকে ছাড়িয়ে আনতে পরিবারের লোকজন দিশেহারা হয়ে সারাদিন এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছিলেন। এলাকার মেম্বার,চেয়ারম্যান,সর্দার সবার দ্বারেদ্বারে হন্যে হয়ে ঘুরেছে অপহৃতদের স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজনরা। অপহরণের ব্যাপারে কোন কথাই বলতে রাজী নয় পরিবারের লোকজন কিংবা গ্রামবাসী।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী জানান, অপহরণকারীদের ব্যাপারে কেউ কিছু বললে সে তাদের টার্গেটে পড়ে যাবে। আর একবার টার্গেটে পড়লে তার বাঁচার সুযোগ নাই। তাই কেউ মুখ খুলে না। তিনি আরও জানান, কিছু বাঙ্গালি লোক ঐ পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের দালাল হিসাবে কাজ করে। মুক্তিপণ ও চাঁদাবাজির টাকার কিছু ভাগ দেয়া হয় দালালদের।

গত বুধবার তিন বন শ্রমিক পাহাড়ি সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে অপহরণের ঘটনার পর থেকে গামারীতলা ও ঢালকাটা গ্রামসহ আশেপাশের পাড়াগুলোতে আতংক ছড়িয়ে পড়েছিল। খিরাম এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে ইউপিডিএফ ব্যবসায়ী আহমদ ছাপাকে অপহরণ করে। নানুপুর ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ ওসমান গনি বাবু বলেন, স্থানীয় কিছু বাঙ্গালি দালালের সহায়তায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা এ এলাকাতে অপহরণ ও চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে ।

তিনি জানান, গত বছর এপ্রিল মাসে তারা ইউনুচ নামের এক বাঁশ ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর হত্যা করে। অপহরনের দুইদিন পর লাশ পাওয়া যায় ব্যবসায়ী ইউনুচের। গত ডিসম্বের মাসে অপহৃত ব্যবসায়ী আহমদ ছাফা মুক্তিপণের বিনিময়ে একমাস পর ছাড়া পান তিনি। গত বছর ২০ মে পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্র“পটি এক চাঁদের গাড়ি চালককে গাড়িসহ অপহরণ করে ৪ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। ক্ষুদ্ধ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, খিরামে একটি অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প থাকলেও তারা কিংবা ফটিকছড়ি থানা পুলিশ এসব পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্র“পের বিরুদ্ধে কোন এ্যাকশন নিচ্ছে না। লক্ষ্মীছড়ি সীমান্তের ফটিকছড়ির দুর্গম ঐ এলাকাটি দীর্ঘদিন থেকে ইউপিডিএফের নিয়ন্ত্রত বলে জানাগেছে।

ঐ এলাকার একাধিক সুত্র জানায়, ইউপিডিএফ’র বার্মাছড়ি(লক্ষ্মীছড়ি থানাধীন) এলাকার এরিয়া কমান্ডারের নেতৃত্বে ফটিকছড়ির দুর্গম ঐ এলাকায় অপহরণ ,হত্যা ও চাঁদাবাজির কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে । সূত্র জানায়, ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্র“টিই মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে দরিদ্র তিন বন শ্রমিককে অপহরণ করেছিল।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন