করোনার কারণে করুণ পরিস্থিতি: পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান

fec-image

বিশ্বব্যাপী এখন আতংকের নাম নোবেল করোনাভাইরাস। মহামারি করোনাভাইরাস যখন পুরো বিশ্বকে থমকে দিয়ে গেছে তেমনি ব্যতিক্রম নই বাংলাদেশও। জনমনে আতংক ছড়িয়ে এক করুণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আর এই পরিস্থিতিতে সারাদেশে চলছে লকডাউন তার মাঝে দেখা দিয়েছে কর্মহীন পরিবারের খাদ্যসঙ্কট।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী করোনার কারণে তার ইউনিয়ন বাসীর করুণ পরিস্থিতি তুলে ধরে তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট দিয়েছে। তার লেখাটি হুবহু নিম্নে দেওয়া হলো-

করোনা ও রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে গ্রামে যাওয়া তেমন হয়না। আমি যায় মানুষকে সমাজিক দুরুত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিতে মানুষ জড়ো হয় অভাবের তাড়নায় সুখের দুখের দুটি কথা বলতে। তেমন আজ রাতে বালুখালীতে লকডাউন কৃত ব্যক্তিদের খবরা খবর নেওয়ার জন্য গেলে বালুখালী পশ্চিম পাড়ার কয়েকজন প্রবীন ব্যক্তির সাথে দেখা হয়। তারা সবাই একযোগে দাবি করেন বালুখালী পশ্চিম পাড়ায় বর্তমানে প্রায় ২০/২৫টি বাড়ীতে খাদ্য অভাব দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি তারা একবেলা খাবার জোগাড় করতে পারছেনা। আর যাদের চাউল আছে তাদের আবার তরি তরকারীর অভাব। প্রতিটি বাড়ি গ্যাস না থাকায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। বিভিন্ন এনজিও সংস্থা কিছু কিছু বাড়ীতে প্রায় ৬ মাস যাবৎ ফ্রি গ্যাস দিত। তাও বর্তমানে বন্ধ করে দিয়েছে এতে সকল পরিবার জ্বালানী সঙ্কটে পরেছে। তাদের দাবি হচ্ছে তাদেরকে বিগত ৬ মাস গ্যাস নাদিলেও তারা কোন রকম চলতে পারত। এখন এই করোন পরিস্তিতে গ্যাস দেওয়া বন্ধ করা মানে তাদেরকে অনাহারে মারা। উপস্তিত সকলের দাবি আর যদি এভাবে ৪/৫ দিন লকডাউন থাকে তা হলে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মরতে হবেনা বরং অনাহারে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে মর্মে দাবি করেন।

সবাই সরকারি সাহায্যের কোটা বাড়ানোর জোর দাবীসহ আমরা চেয়ারম্যান মেম্বারের প্রতি স্থানীয় জনসাধারনের প্রচুর ক্ষোভ আছে বলেও জানান। কারণ তারা মনে করে সরকার স্থানীয়দের জন্য প্রচুর ত্রাণ সামগ্রী দিলেও আমরা চেয়ারম্যান মেম্বার উক্ত ত্রাণ আত্মসাত করি বলে ৭০% মানুষের ধারনা বলে প্রবীন মুরব্বীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে আমি জনরোষানলে পড়ার সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হলে আমি চলে আসি। সবাই আমাকে এত কিছু বলার পরও আমার একটুও রাগ উঠে নাই। কারণ আমি তাদের মধ্যে অভাবের প্রতিচ্ছবি দেখেছি। আসার পর থেকে প্রায় ২ ঘন্টা চিন্তা করার পর এই লিখাটুকু লিখতে বাদ্যহলাম।

এখন সবচাইতে বড় চিন্তা হচ্ছে আমরা তো সরকারি ত্রাণ বিতরণ করি ওই সব অনাহারী মানুষরা কি আমাদের দ্বারা বিতরণ কৃত সরকারি ত্রাণ সামগ্রী পাবে? সে সাথে আবার অন্য প্রশ্ন এইতো সোমবারে আমরা ত্রাণ দিব পালংখালী ইউনিয়নে ১৫০ জন ব্যক্তিকে। সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বালুখালী ১নং ওয়ার্ডে উপকার ভোগি মাত্র ১৫ জন। আবার তাও মেম্বারের দেওয়া তালিকা থেকে অগ্রাধিতার ভিত্তিতে নেওয়া তৎমধ্যে ওইসব অনাহারী ব্যক্তির নাম নাও পড়তে পারে। সেসব ব্যক্তি যদি বাদ পড়ে আল্লাহকে কি জবাব দেব? সে চিন্তায় ঘুম হারাম হওয়ার উপক্রম দেখা দিচ্ছে।

এখন শুধু একটি গ্রামের চিত্র আমি দেখেছি এই ইউনিয়নে সেরকম আরও ৩৮টি গ্রাম আছে মনে হয় সবগ্রামে এই ধরনের একই চিত্র হবে। হয়তো মানুষ লাজ লজ্জার ভয়ে মুখ খুলে প্রকাশ করতে পারছেনা। তাই আমি অত্র ইউনিয়নের সকল স্তরের জনসাধারনের প্রতি আকুল আবেদন জানাই যার যার বাড়ীর পার্শ্বের হতদরিদ্রদের প্রতি খেয়াল রেখে যার যেমন সামর্থ আছে সে সমর্থ মতে সহায়তা দেওয়ার জন্য। সে সাথে আমরা যারা সরকারি ত্রাণ বিতরণ করার দায়িত্ব পেয়েছি আমাদেরকে একটু জ্ঞান দেওয়া এবং সহায়তা করে যারা আসলে ত্রাণ পাওয়ার উপযুক্ত তারা যাতে তাদের অধিকার হতে বঞ্চিত না হয় সে ব্যবস্থা টুকু করবেন। আমরা যারা সরকারি ত্রাণ বিতরনের দায়িত্বে আছি ওই ত্রাণ আমাদের বিশেষ করে আমি বলব আমার বাপের দেওয়া ত্রাণ নয়। সে ত্রাণ সরকারি ত্রাণ বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের অধিকার আছে উক্ত ত্রাণ আমরা সঠিক ভাবে বিভাজন করছি কিনা দেখার ও সৎপরামর্শ দেওয়ার।

তাই বিনিত অনুরোধ করছি আপনাদের অধিকার আপনারা আদায় করার জন্য আপনার পাশে না খাওয়া মানুষটি যাতে খেতে পারে সে সহায়তা করুন।এটাও অনুরোধ থাকবে কোন ধরনের দুর্নীতির আশ্রয় নেবেননা। যদি শঠামী ও দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করেন তার জবাব আল্লাকে কাল হাশরের ময়দানে দিতে হবে। এই করোনা পরিস্থিতে যাতে সরকারের দেওয়া ত্রাণ সঠিকভাবে বিতরণ হয় সে সহায়তা করুন। আল্লাহ আপনাদের হায়াৎ বৃদ্ধি করবে।সকলের দীর্ঘায়ু কামনা সহ ধন্যবাদ ও কৃকজ্ঞতা জ্ঞাপন করে ইতি টানলাম।

এই লিখাতে নিজের অজান্তে কারো মনে কিঞ্চিৎ পরিমান দুঃখ পেয়ে থাকেন এবং আমার লিখায় ভুল করে থাকি ভুলভ্রান্তি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন