কলাগাছের আঁশের সুতায় তৈরি দৃষ্টিনন্দন শাড়ি

fec-image

বান্দরবানের নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে পার্বত্য এলাকার কলাগাছ থেকে সুতা তৈরি করে বিভিন্ন সৌখিন হস্তশিল্প তৈরির প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এই ধারাবাহিকতায় এবার কলাগাছের সুতা থেকে তৈরি করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন শাড়ি কলাবতী।

বান্দরবানে কলাগাছের আঁশের সুতায় আকর্ষণীয় শাড়ি তৈরি করা হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘কলাবতী সুতি শাড়ি’। এটিই সম্ভবত দেশে কলাগাছের সুতায় তৈরি প্রথম শাড়ি। মৌলভীবাজার থেকে মণিপুরী কারিগর এনে এই শাড়ি তৈরি করিয়েছেন জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তীবরীজি।

এর আগে তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় একই সুতায় ব্যাগ, ঝুড়ি, ফুলদানি, কলমদানিসহ নানা শৌখিন জিনিসপত্র তৈরি করা হয়েছিল। জেলা প্রশাসন ও কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থার তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্পের সাফল্য ও উদ্যোক্তাদের চাহিদার ভিত্তিতে এটি বর্তমানে সদর, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

মণিপুরী কারিগর রাধাবতী দেবী বলেন, জীবনে অনেক রকমের শাড়ি তৈরি করেছি। কিন্তু কলা গাছের আঁশের সুতায় প্রথম শাড়ি তৈরি করলাম। জেলা প্রশাসকের আমন্ত্রণে মৌলভীবাজার থেকে বান্দরবান এসেছিলাম শাড়ি তৈরির চ্যালেঞ্জ নিয়ে। পরীক্ষামূলকভাবে ১৫ দিনের চেষ্টায় একটি শাড়ি তৈরি করতে পেরেছি। পাতলা আঁশের সুতায় কাপড় বোনা সত্যিই কষ্টসাধ্য। একটা সময় মনে হয়েছিল সম্ভব নয়, কিন্তু শেষপর্যন্ত সফলভাবে শাড়ি তৈরি করতে পেরে আমি ভীষণ খুশি।

তিনি বলেন, ১২ মার্চ মৌলভীবাজার থেকে আমিসহ দুজন বান্দরবান এসেছিলাম। প্রথমদিকে আঁশ থেকে সুতা তৈরি করা, সুতাগুলো প্রক্রিয়া করাসহ জিনিসপত্র গোছাতেই ৮ দিন লেগে যায়। শাড়ির কাপড় বুনতে সময় লেগেছে ৭ দিন। আগামীতে সব জিনিসপত্র ঠিকঠাক থাকলে একদিনেই মেশিনে একসঙ্গে তিনটি শাড়ি তৈরি করা যাবে। ধাপে ধাপে এ সংখ্যা বাড়বে। সাধারণ একটা শাড়ি বুনতে পাঁচশ গ্রাম সুতা লাগলেও কলাগাছের আঁশের সুতায় প্রথম শাড়িটি বুনতে এক কেজির মতো সুতা লেগেছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগী বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইং সাইং উ বলেন, পাহাড়ের নারীদের কর্মসংস্থান তৈরি ও দারিদ্র্য নিরসনে কলাগাছের আঁশ থেকে সুতা তৈরি এবং কলাগাছের সুতায় ব্যাগ, ঝুড়ি, ফুলদানি, কলমদানি, ফাইল ফোল্ডার, পাপসসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র তৈরির কাজ শুরু করি। পাহাড়ের নারীদের এ কাজে প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয়। কলাগাছের সুতায় শাড়ি তৈরি এ প্রকল্পের বড় সফলতা। পরীক্ষামূলকভাবে সফলতা পাওয়ায় টেকসই এবং গুণগতমান ঠিক রেখে শিল্পটি সম্প্রসারণ করা গেলে এ অঞ্চলে প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তীবরীজি বলেন, স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে কলাগাছের আঁশের সুতায় বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র তৈরি করা হয়। দেখতে সুন্দর ও পরিবেশবান্ধব এসব জিনিস তৈরিতে পাহাড়ের চারশ নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুতা প্রতি কেজি ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তৈরি করা জিনিসপত্রগুলোও ‘ব্র্যান্ডিং বান্দরবান’-এর মাধ্যমে নীলাচল পর্যটন স্পটসহ স্থানীয় হাটবাজারগুলোতে পর্যটকদের মাঝে বিক্রি করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জেলা প্রশাসক আরও জানান, আমাদের নারীরা এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বুক ফোল্ডার, টেবিল মেট, পাপোশ, শো পিচ, কানের দুল, কলম দানিসহ বিভিন্ন পরিবেশ বান্ধব হস্তশিল্প তৈরি করছে আর এগুলো ভালো দামে বিক্রিও হচ্ছে। কলাগাছের সুতা থেকে একটি দৃষ্টিনন্দন শাড়ি তৈরি করতে পেরেছি যা অত্যন্ত সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়েছে, সেই শাড়ির নাম দেয়া হয়েছে ‘কলাবতী’।

তিনি বলেন, এ প্রকল্পের বড় সফলতা হলো-পরীক্ষামূলকভাবে কলাগাছের আঁশের সুতায় শাড়ি তৈরি। বর্তমানে মানসম্মত পণ্য তৈরি, টেকসই শিল্প হিসাবে গড়ে তুলতে উন্নতমানের মেশিনসহ কারিগরি সহায়তায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গবেষণা কার্যক্রম চালাচ্ছে।

নিউজটি ভিডিওতে দেখুন:

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন