কাউখালীতে টানা বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, পাহাড় ধসে নিহত ১, আহত ২

Kawkhali Rangamati Rin News- 1

আরিফুল হক মাহবুব, কাউখালী প্রতিনিধি:
টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটির কাউখালীতে কৃষি, বসতঘর ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। পাহাড় ধসে সখি রানী চাকমা (৩৫) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন।

বুধবার মধ্য রাতে উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের দুর্গম চেলাছড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধ্বসের কারণে আরও অন্তত দুইজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল করিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানায়, টানা বৃষ্টিতে কাউখালীর বিভিন্ন পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। বুধবার উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের চেলাছড়া গ্রামের সখি রানী চাকমা (৩৫) নিজ বাড়ীতে অবস্থান করছিল। মধ্য রাতে পাহাড় ধসে একটি বিশাল গাছসহ তার বাড়ীর উপর আচড়ে পড়লে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এছাড়া পাহাড় ধসে উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের বেতছড়ি গ্রামের জুলেখা বেগম (২৫), বেতবুনিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম মনাইপাড়ার পাইসিনু মারমা (২৮) গুরুতর আহত হয়েছেন। এদের একজনকে কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও অপরজনকে চট্টগ্রাম মেডেকিলে কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে।

এছাড়া সপ্তাহব্যাপী চলা বৃষ্টির কারণে উপজেলার বেতবুনিয়া, কলমপতি, ঘাড়ার অন্তত ৪২ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে পাঁচ শতাধীক পরিবার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে উপজেলা বেতবুনিয়া ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের রাস্তাঘাট, কালভার্ট ও অনেক মৎস্য প্রজেক্ট পাহাড়ী ঢলে বিলীন হয়েছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চার ইউনিয়নে ১৫০ হেক্টর জমির আউশ জুম কম বেশি ক্ষতি হয়েছে। ৩৫ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন সবজি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েগেছে। এছাড়া প্রায় ৯ হেক্টর জমির আদা ও হলুদ পঁচে গেছে। এতে অনেক কৃষক সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে।

কাউখালী কৃষি অফিসের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ সিরাজুল মোস্তফা জানান, ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য জানতে আমাদের অফিসাররা মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন। বিস্তারিত জানতে দু’একদিন সময় লাগবে।

চলমান বৃষ্টিতে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা তচনছ হয়ে গেছে। পাহাড় ধস ও পাহাড়ী ঢলের কারণে এখানকার প্রায়ই রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। ছোট ছোট অনেক কালভার্ট ভেঙে গেছে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে দৈনিক শত শত যানবাহন চলাচল করছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার বিষয়ে জানতে উপজেলা এলজিইডি অফিসে গিয়ে কোন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কমল বরণ সাহা জানান, চার ইউনিয়নে প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, অব্যাহত বৃষ্টির কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৮টি বড় মৎস্য প্রজেক্ট বিলীন হয়েছে গেছে। এতে প্রায় বিশ লক্ষাধীক টাকার ক্ষতি হয়েছে জানানো হয়েছে।

বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানিয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান চৌচামং চৌধুরী। তিনি জানান, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী পরিবারগুলিকে ঐসব স্থান থেকে সরে যাওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক মাইকিং করা হয়েছে। এধরণের পরিবেশে আশ্রয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার স্কুল গুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও যে কোন দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ত্রাণ সহায়তা দিতে ত্রাণ শাখা খোলা রাখা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন