কাউখালীতে সকরকারী কর্মকর্তাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা: তিন যুবলীগ কর্মী আটক
অপহরণ ও চাঁদাবাজী মামলার আসামীকে ৫১ ধারায় গ্রেপ্তার! বিকেলে জামিনে মুক্ত
কাউখালী (রাঙ্গামাটি) প্রতিনিধি:
রাঙ্গামাটির কাউখালীর বেতবুনিয়া ভূউপগ্রহ কেন্দ্রের উপসহকারী প্রকৌশলীকে অপহরণপূর্বক দু’লক্ষ টাকা মুক্তিপন আদায়ের চেষ্টাকালে তিন যুবলীগ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনী। ২৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে উপজেলা সদর থেকে আধা কিলোমিটার দূরে কাউখালী কলেজের পেছনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে।
এদিকে অপহরণ ও চাঁদাবাজীর সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও কাউখালী থানা পুলিশ অভিযুক্তদের ৫১ ধারায় গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করেছে। এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ভূউপগ্রহ কেন্দ্রের উপসহকারী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান (৫০) দীর্ঘ ৬/৭ বৎসর পূর্বে কাউখালী কলেজ সংলগ্ন স্থানীয় জনৈক আজম সওদাগরের কাছ থেকে তিন একর পাহাড় খরিদ করে বাউকুল বাগান সৃজন করে আসছিল। বাগান সৃজন করার পর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আনোয়ারা বেগম (৪৫) নামের স্থানীয় এক অসহায় মহিলাকে কেয়ারটেকার হিসেবে নিয়োগ দেন। সপ্তাহে একদিন ঐ কর্মকর্তা কাউখালীতে সৃজিত বাগান দেখতে আসেন। দীর্ঘদিন যাবৎ একটি চক্র তার কাছে লিখিত পত্রের মাধ্যমে চাঁদা দাবী করে আসছিল।
২৮ ডিসেম্বর রাতে হাবিবুর রহমান রুটিন মাফিক বাগা দেখতে আসে এবং রাতে তার খামার বাড়ীতে থেকে যান। রাত এগারটার সময় যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন শামীম, যুবলীগ কর্মী সাবু, বাহাদুর, জীবন ও রাহুল মজুমদারের নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের একটি গ্র“প হাবিবুর রহমানের খামার বাড়ী ঘেরাও করে। এসময় দেলোয়ার হোসেন শামীম, বাহাদুর, জীবন ও রাহুল মজুমদার খামার বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করে বাগানের মালিক হাবিবুর রহমান ও কেয়ারটেকার আনোয়ারা বেগমকে মারধর করে একটি কক্ষে আটকে রাখে বাইরে তালা লাগিয়ে দেয়। ঘরের বাহির থেকে ঐ সরকারী কর্মকর্তাকে বলা হয় দুলক্ষ টাকা চাঁদা না দিলে নারী নির্যাতনের মামলায় জড়িয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হবে।
রাত সাড়ে এগারটার সময় কেয়ারটেকার আনোয়ারা বেগম তার ভাই হাসমতকে মোবাইলে বিষয়টি জানায় এবং হাসমত দ্রুত কাউখালী আর্মি ক্যাম্পকে খবর দেয়। খবর পেয়ে কাউখালী থানা পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর যৌথ একটি দল কাউখালী কলেজের পেছনে হাবিবুর রহমানের খামার ঘেরাও করে ঘটনাস্থল থেকে খামারের মালিক হাবিবুর রহমান ও অপহরণকারী দলের সদস্য যুবলীগ কর্মী বাহাদুর, জীবন, রাহুল মজুমদারকে আটক করলেও বাকীরা সবাই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। চিহ্নিত এসব ক্যাডারদের আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে তাদের ছাড়ানোর জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে ফোন আসতে থাকে।
এসময় কাউখালী থানা পুলিশ এসব ক্যাডারদের বাচাঁতে বিভিন্ন ধরণের ছলচাতুরী শুরু করে। রাতভর অনেক চেষ্টা তদবীর করেও থানা থেকে তাদেরকে ছাড়াতে না পেরে সকাল বেলা হাজির হন কাউখালী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন। তিনি কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ নিলু কান্তি বড়ুয়াকে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধান করা হবে জানিয়ে তাদের কর্মীদের ছেড়ে দিতে উপর্যপূরী চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। চাপের মূখে ওসি নিলু কান্তি বড়ুয়া কিছুক্ষণ পর পর আইন বই খুলে কোন ধারা দিলে এসব ক্যাডারদের বাঁচানো যাবে তা খুঁজতে থাকেন।
অপহরণের চেষ্টাপুর্বক দু’লক্ষ টাকা চাঁদা আদায়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত কাউখালী থানা পুলিশ আসামীদের ছেড়ে না দিয়ে ৫১ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের আদালতে প্রেরণ করে। মামলায় দুর্বল ধারার কারণে বিকাল ৩টার মধ্যেই আসামীরা জামিনে বেরিয়ে আসে।