কাজুবাদাম চাষ দেখতে ১৬ কর্মকর্তার বিদেশ সফর

fec-image

পার্বত্য অঞ্চলের তিন জেলায় কাজুবাদাম ও কফি চাষ করতে চায় কৃষি বিভাগ। এজন্য ২ হাজার বাগান করার করার চিন্তা রয়েছে। প্রতিটির আকার হবে ১ একর। এজন্য নেওয়া হচ্ছে আলাদা প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় ১৬ জন কর্মকর্তা ব্রাজিল, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, চিলি, মালয়েশিয়া সফর করে জ্ঞান অর্জন করে আসবেন। এদের জন্য রাখা হয়েছে মোটা অঙ্কের বরাদ্দ। আর দেশের ভেতরে ২ হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তবে প্রকল্প নেওয়ার আগে করা হয়নি যথাযথ সমীক্ষা। ফলে উৎপাদিত কফি প্রক্রিয়াজাত করে কীভাবে, কোথায় রপ্তানি করা হবে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবনার ওপর গত সপ্তাহে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভার কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, ২ হাজার বাগানের মধ্যে ১২শটিতে কাজুবাদাম ও ৮শটিতে কফি চাষ করা হবে। প্রশিক্ষিত করা হবে স্থানীয় চাষিদের। এর আগে কাজুবাদাম ও কফির উন্নত চারা সংগ্রহ করা হবে। এ সব চারা বড় করার জন্য প্রতি বছর সার এবং বালাইনাশকও বিনামূল্যে সরবরাহ দেওয়া হবে। এছাড়া কফি প্রক্রিয়াজাত করতে বসানো হবে যন্ত্রপাতি ও মেশিন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, রাঙ্গামাটি অঞ্চলে এর আগে কফি চাষ অনেক সম্প্রসারিত হয়েছিল। বাজারজাতকরণ ও প্রক্রিয়াজাতের ব্যবস্থা না থাকায় এবং প্রযুক্তির অভাবে কৃষককে এসব গাছ কেটে ফেলতে হয়েছে। এখন যথাযথ প্রক্রিয়া গ্রহণ ছাড়া এই প্রকল্প নেওয়া কতটুকু ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্প প্রস্তাব করা হলেও কাজুবাদাম এবং কফি রপ্তানি কীভাবে ও কোন দেশে করা হবে তার কোনো তথ্য জানানো হয়নি। এছাড়া প্রকল্প কতটুকু সফল হবে তা নিয়েও যথাযথ সমীক্ষা করা হয়নি। প্রকল্পের আওতায় কফি ও কাজুবাদামের বাগান থেকে মধু চাষ করার চিন্তা ছিল। যেটি বাস্তবসম্মত নয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২৩ জন লোকবল প্রয়োজন রয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ে সম্মতি নেই।

পিইসি সভায় বলা হয়, কৃষকদের বৃক্ষ রোপণ ও পরিচর্যা করার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, এতে প্রতিজন কৃষক ১৫০০ টাকা করে পারেন। এছাড়া ২০০ জন উদ্যোক্তা পাবেন প্রশিক্ষণসহ ৭ হাজার করে টাকা। কিন্তু প্রশিক্ষণের বিষয় কী কী, কত ব্যাচে হবে, কারা কারা অংশ নেবেন, কারা প্রশিক্ষক হবেন এ সব তথ্য বিস্তারিত বলা হয়নি। প্রকল্পের আওতায় সব মিলিয়ে ২ হাজার কৃষককে ৬ ধরণের প্রশিক্ষণ দিতে প্রস্তাব করা হয়েছিল। এজন্য প্রতিটি প্রশিক্ষণে আলাদা আলাদা বরাদ্দও রাখা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন এর মধ্যে দুটি প্রশিক্ষণ বাদ দেওয়ার কথা বলেছে। কৃষি বিভাগ থেকে ১০ জন কর্মকর্তাকে বিদেশি প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৫০ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশন নিজেদের কর্মকর্তার নাম যোগ করে এর সংখ্যা বাড়িয়ে ১৬ জন করার পরামর্শ দিয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৫৪ লাখ টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, বর্তমানে চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলায় সর্বমোট ৫৮৩ হেক্টর জমিতে কাজুবাদাম ও ২০০ একর জমিতে কফি চাষ হচ্ছে। এসব জায়গার উৎপাদিত কাজুবাদাম দেশের বাজার ছাড়িয়ে বিদেশেও যাচ্ছে। এতে প্রতি বছর ৩০ কোটি টাকার মতো কাজুবাদাম রপ্তানি হয়। কিন্তু উৎপাদিত কফি কীভাবে প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত বা রপ্তানি করা হবে সেটা কারও জানা নেই। যে পরিমাণ কফি বর্তমানে উৎপাদিত হয়, তার বাজারমূল্য ৩ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পল্লী সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য মো. জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, দেশে ইতিমধ্যে কফি ও কাজুবাদামের চাষ হচ্ছে। এখন প্রয়োজন উন্নত প্রযুক্তি ও বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা। আলোচ্য প্রকল্পের মাধ্যমে এই নতুন দুই ফসলে চাষাবাদ বাড়ানো ও প্রয়োজনীয় কারিগরি দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করবে কৃষি বিভাগ। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। ২০২১ সাল নাগাদ এটি বাস্তবায়ন করতে চায় তারা।

সূত্র: দেশ রুপান্তর

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন