কাপ্তাই বড়ইছড়ি ফুটবল একাডেমিতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরী করা হয় আগামীর ফুটবলার

fec-image

পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলার ক্রীড়া সমৃদ্ধ একটি উপজেলা কাপ্তাই। বিগত ৪০ বছর ধরে জেলা, বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে এখানকার ফুটবলার, ক্রিকেটার, এ্যাথলেটিক্স‘সহ ক্রীড়ার নানা শাখায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে আসছেন এখানকার ক্রীড়াবিদরা।

তারই ধারাবাহিকতায় আগামীর প্রজন্মের কিছু প্রতিভাবান ফুটবলারদের জাতীয় মানের হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৪ সালের গড়ে তোলা হয় কাপ্তাই বড়ইছড়ি ফুটবল একাডেমি।

সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে উপজেলা সদর শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া ছেলেদের।

২০২০ সালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এর রেজিষ্ট্রেশন পাওয়া এই ফুটবল একাডেমিতে বর্তমানে ৪০ জন খেলোয়াড় প্রতিদিন বিকেলে নিয়মিত অনুশীলন করছেন।

সোমবার(১০ আগস্ট) বিকেলে উপজেলা সদর বড়ইছড়ি শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম এ দেখা পায় একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান প্রশিক্ষক চোম্রিন রাখাইন এর সাথে।

তিনি খেলোয়াড়দের নানা কলাকৌশল নিয়ে আলোচনা করছেন এবং শারীরীক ব্যায়াম করাচ্ছেন। কথা হয় তার সাথে এই প্রতিবেদকের।

তিনি জানান, কাপ্তাই হতে জাতীয় মানের খেলোয়াড় তৈরীর লক্ষ্যে সম্পৃর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে তিনি এই মাঠে ছোট হতে বড় বিভিন্ন বয়সী খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন, তারই ফলশ্রুতিতে এই ফুটবল একাডেমির ছাত্র মো. সিয়াম অনুর্ধ্ব১৮ তে ঢাকা রহমতগঞ্জে, অনিল তনচংগ্যা ঢাকা পাইনিয়ারে, মো. সাইম রহমান অনুর্ধ্ব ১৮ তে ঢাকা সাইফ স্পোটিং ক্লাবে এবং মো. হাসান রাংগামাটি জেলা অনুর্ধ্ব ১৮ দলে খেলে নিজেদের ক্রীড়ানৈপূর্ন দেখিয়ে দর্শকের প্রশংসা অর্জন করে এসেছেন।

তিনি জানান, এই একাডেমির অনেকে অনুর্ধ্ব ১৭ তে বিভিন্ন জায়গায় খেলে আসছেন।

এই একাডেমির ছাত্র কাপ্তাই কর্ণফুলি সরকারি কলেজের ছাত্র মো. রেজাউল করিম আশিক, বড়ইছড়ি কর্নফুলি নুরুল হুদা কাদেরী উচ্চ বিদ্যালয়ের হ্রুদয় ধর, মো. জমির, বড়ইছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিবু দাশ, চুচিমং মারমা জানান, তাদের প্রশিক্ষক চোম্রিন দাদা আমাদের বিনা পারিশ্রমে প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছেন।

তিনি আমাদেরকে নিজের অর্থ দিয়ে জার্সি, বল, বুট‘সহ নানা ক্রীড়া সামগ্রী কিনে দিয়েছেন।

তারা জানান, প্রথম বিভাগ লীগ, জাতীয় লীগ এবং জাতীয় টিমে খেলার তাদের স্বপ্ন। এই সব খেলোয়াড়রা উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা সহ প্রশাসন এবং ক্রীড়ামোদী বিত্তবানদের সহায়তা কামনা করছেন, যাতে তারা ক্রীড়া সামগ্রী সহ আর্থিক সহায়তা পেতে পারেন।

একাডেমির সভাপতি উপজেলা ক্রীড়া সংস্হার নির্বাহী সদস্য আব্দুল হাই খোকন জানান, একসময় কাপ্তাইয়ের খেলোয়াড়েরা দেশের ফুটবল অঙ্গনে দাপিয়ে বেড়াত। নামকরা বেশকিছু ফুটবল খেলোয়াড়দের কারনে কাপ্তাই উপজেলাকে আলাদা ভাবে চিনতো সবাই। হারিয়ে যাওয়া গৌরব পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যেই আমরা ফুটবল নিয়ে একদম ভীন্ন আঙ্গিকে বয়স ভিত্তিক কোচিং দিয়ে তৃণমুল পর্যায় থেকে ফুটবলার তৈরির চেষ্টা করছি।

বতর্মানে শুধু ছেলেদের নিয়েই একাডেমির কার্যক্রম চলছে, আমরা পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করে আমাদের মেয়েদেরকেও কোচিংয়ের আওতায় আনার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।

আমরা দরিদ্র, ছিন্নমূল প্রতিভাবানদের নিয়েও কাজ করছি। আমরা দেশের স্বনামধন্য ফুটবলারদের মাধ্যমে কোচিং দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিভাবানদের তুলে আনার চেষ্টা করছি।

সর্বোপরি বর্তমানে একাডেমির সকল খেলোয়াড়, কোচ, পরিচালক এবং কাপ্তাই উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা’র আন্তরিক সহযোগিতায় একাডেমির প্রশিক্ষণ এগিয়ে চলছে।

সরকারের সহযোগিতা পেলে আমরা দেশের ফুটবলের মানোন্নয়নে গতিশীল ভুমিকা রাখতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

তিনি কৃতজ্ঞতা জানান, এই একাডেমির প্রধান কোচ চোম্রিন রাইখাইন এর প্রতি। যিনি তার মেধা, আন্তরিকতা দিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন।

কাপ্তাই উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বির্দশন বড়ুয়া, যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুব হাসান বাবু জানান, বড়ইছড়ি ফুটবল একাডেমির এই কার্যক্রম প্রশংসনীয়।

কাপ্তাই হতে তৃণমূল পর্যায়ে খেলোয়াড় তৈরীতে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তাদের এই কার্যক্রমে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা সবসময় পাশে থাকবেন।

কাপ্তাই বড়ইছড়ি ফুটবল একাডেমি যাতে আগামীতে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আরও ভূমিকা রাখতে পারে ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট সকলে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কাপ্তাই, ক্রীড়া, ফুটবল
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন