খতিয়ানভুক্ত জমির মালিককে দখলদার সাজিয়ে মামলা

fec-image

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, কারো ব্যক্তিগত জায়গাতেও সরকার চাইলে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে।

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী সংলগ্ন খতিয়ানভুক্ত জমির মালিককে ‘দখলদার’ সাজিয়ে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

তবে পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, জমির মালিকানা নিয়ে তারা মামলা করেনি। প্যারাবন কর্তন ও জলাশয় ভরাটের অভিযোগে তাদের মামলা।

সম্প্রতি কক্সবাজার কক্সবাজার সদর মডেল থানায় পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়েরকৃত ৩৭/৩৯২ নং মামলার প্রধান আসামি মোহাম্মদ ইউছুফ। তিনি মহেশখালীর চরপাড়ার মৃত জালাল আহমেদের ছেলে এবং কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী।

নিজের ক্রয়কৃত খতিয়ানভুক্ত জমিতে দখলদার সাজিয়ে মিথ্যা মামলা করার অভিযোগ তুলেছেন মোহাম্মদ ইউছুফ।

তিনি বলেন, আমি বাঁকখালীর কোন জায়গার দখলদার নই। প্যারাবন কাটিনি। জলাধার ভরাট করিনি। খতিয়ানভুক্ত জমি ক্রয় করেছি। খাজনা, দাখিলাসহ সব আপডেট রয়েছে। যথানিয়মে সরকারের রাজস্ব জমা করেছি। তথাপিও একটি পক্ষ আমাকে দখলদার সাজিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে একে একে তিনটি মিথ্যা মামলা দিয়েছে। মামলাগুলো হলো, জিআর ৭১০/২১, ১০৮/২২ ও ৩৯২/২২। একই অভিযোগে এ মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। ফৌজদারী কার্যবিধি অনুসারে একই বিষয়ে একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হতে পারে না। অথচ আমার বেলায় হয়েছে উল্টো। এতে স্পষ্ট প্রমাণিত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী মোহাম্মদ ইউছুফ গণমাধ্যমকে বলেন, কক্সবাজার জেলাধীন খুরুশকুল মৌজার ব্যক্তিমালিকানাধীন আরএস ৮২৭ নং খতিয়ান হতে বিগত ৮/৭/১৯৪৬ ইং সনের রেজিস্ট্রিযুক্ত ২৩৪৬ নং পাট্টামূলে খরিদ মালিক সোলতান আহমদ। তার নামে এমআর ৭৯৫ নং খতিয়ান, তুলনামূলক বিএস ২২৮১ নং খতিয়ান এবং খাজনার দাখিলা চূড়ান্ত প্রচার আছে। উপরোক্ত আরএস খতিয়ানের আরএস ৯৬১৫, ৯৬১৬ নং দাগের জমির শ্রেণি বালুচর, এম.আর.আর, জরিপেও বালুচর এবং তৎ তুলনামূলক বিএস ১৫২৪৪, ১৫২৪৫ নং দাগাদির জমির শ্রেণি নাল হয়। সুলতান আহমদ মৃত্যুর পরে তৎ স্বত্ব তার পুত্র কন্যাগণ প্রাপ্ত। পুত্র কন্যাগণের নামে নামজারী বিএস ৬৮১৬ ও ৬৮১৭ সং খতিয়ান চূড়ান্ত প্রচারিত আছে। উপরোক্ত নামজারী বিএস খতিয়ানাদির আন্দরে সুলতান আহমদের কন্যা ছালেহা বেগম হতে বিগত ২২/০৯/২১ ইং তারিখের ৩৯৭৮ নং দলিল মূলে ১০ শতক, সোলতান আহমদের অপর কন্যা সাকেরা বেগমের নিকট হতে খরিদা মালিক তৎ কন্যা মোবাশ্বেরা বেগম হতে ০৪ শতক, সৃজিত বিএস ১১৮৬৮ নং খতিয়ানের মালিক মোরশেদ আলম হতে ০৩ শতক, জনৈক হাফেজ নুরুল আলম হতে ০৮ শতক জমি আমি এডভোকেট মো. ইউসুফ খরিদ করি। সেখানে পাকাঘরবাড়ী উপলক্ষে বিএস ১৫২৪৪ এবং বিএস ১৫২৪৫ নং দাগে ভোগ দখলে আছি।

সোলতান আহমদের পুত্র মো. আমিন হতে বিভিন্ন তারিখের কবলামূলে ২০ শতক জমি রোকন উদ্দিনের নামে নামজারী বিএস ১১৮০৬ নং খতিয়ান চূড়ান্ত প্রচার আছে। রোকন উদ্দিন ঘরবাড়ি উপলক্ষে দখলে আছে।

খুরুশকুল মৌজার বিএস ১৭০৯ নং খতিয়ানের বিএস রায়ত মোখলেছুর রহমান মরণে দৌহিত্র আবদুল রহিম, শামসুন্নাহার, সায়েরা বেগম, খালেদা বেগম বিগত ২৪/০৩/১৪ ইং সনের রেজিস্ট্রিযুক্ত ১১৪৩ নং দলিল মূলে ২১ শতক জমি শাহিনা আক্তার ও মায়মুনা আক্তারকে বিক্রয় করে। শাহিনা আক্তারের নামে সৃজিত বিএস ৭৬৮৫ নং খতিয়ান চূড়ান্ত প্রচার আছে। শাহিনা আক্তার হতে বিগত ১০/১০/২১ ইং সনের রেজিষ্ট্রিযুক্ত ৪৩৪৭ নং দলিল মূলে ১০.৫০ শতক জমি এস.এম. কফিল উদ্দিন ও ওমর ফারুক ক্রয় করে। তাদের নামে সৃজিত বিএস ১২৪৩৭ নং খতিয়ান চুড়ান্ত প্রচার আছে। উক্ত খতিয়ানের বিএস ১৫৪১৪ নং দাগের জমির শ্রেণি কাঠি এবং উক্ত জমিতে এস.এম. কফিল উদ্দিন ও ওমর ফারুক দখলে আছেন।

উপরোক্ত খতিয়ানাদির সন সন খাজানার দাখিলা অদ্যাবধি চূড়ান্ত প্রচার আছে। উপরোক্ত খতিয়ানাদির জমি কখনো খাল কিংবা নদী ছিলনা এবং উক্ত খতিয়ানির জমি কখনো নদী সী-কন্তি কিংবা পয়স্থি হয় নাই এবং সন সন খাজনার দাখিলা চুড়ান্ত আছে। অদ্যাবধি খতিয়ানের মালিক এবং খরিদা মালিকগণের সঙ্গে সরকারের রাজাপ্রজার সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। জমির খাজনা গ্রহণ করে সরকারি সংস্থা জমা দিয়েছেন এসিল্যান্ড। দাখিলামূলে খরিদা মানিকগণ জমি ক্রয়ের জন্য জেলা প্রশাসক থেকে পূর্বে অনুমোদনও নিয়েছেন। সেই অনুপাতে রেজিস্ট্রি দলিল সম্পাদন এবং দলিল হতে সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব গ্রহণ করেছেন। সুতরাং এই জমিকে খাল, নদী বা সংরক্ষিত বলে সংবাদ, মামলা দেয়ার কোনো অর্থ হয় না। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই নয়।

মোঃ ইউছুফ বলেন, ইতোপূর্বে ১০৯ জনকে বাঁকখালী নদীর ‘দখলদার’ হিসেবে তালিকা প্রকাশ করে জেলা প্রশাসন। ওই তালিকায় আমার নাম নাই।

জানা গেছে, প্যারাবন কর্তনের অভিযোগে এনফোর্সমেন্ট মামলা নং-১৬/২২ (কক্সবাজার) ওপর গত ২৮ মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামে শুনানি হয়। এরপর ৭ এপ্রিল তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেন পরিচালক মুফিদুল আলম।
যেখানে বাঁকখালী নদীর আর.এস. ও বি.এস. সিট মোতাবেক অবৈধ দখলদার কী পরিমাণ রয়েছে এবং কারা দখল করেছে, সেই সঙ্গে প্যারাবনের সীমানা চিহ্নিত করার নির্দেশনা ছিল।

মো. ইউছুফ অভিযোগ করে বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিচালকের নির্দেশনা এখনো বাস্তবায়ন করেনি। উল্টো বিনা নোটিশে আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। যেটি সম্পূর্ণ স্ববিরোধী এবং অন্যায় আচরণ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপ-পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, জলাশয় ভরাট ও প্যারাবন কর্তনের অভিযোগে আমরা মামলা করেছি। জমির মালিকানা দেখবে জেলা প্রশাসন।

একই বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, কারো ব্যক্তিগত জায়গাতেও সরকার চাইলে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। বাঁকখালীর তীরবর্তী জমিকে কেন্দ্র করে আইন শৃঙ্খলা অবনতি হচ্ছে। আপাতত যেভাবে আছে সেভাবে থাকবে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোন পক্ষ কাজ করতে পারবে না।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, মামলা, মালিক
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন