খাগড়াছড়িতে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো এক সপ্তাহ ধরে খোলা আকাশের নিচে

05.04

সিনিয়র রিপোর্টার:

সাম্প্রতিক পার্বত্য খাগড়াছড়ির সদর উপজেলা ও মাটিরাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত শতাধিক পরিবার এক সপ্তাহ ধরে ঝড়বৃষ্টির দিনে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। পরিবারগুলো অসহয়ের মত তাকিয়ে আছে সরকার বা এনজিওদের সহায্যের দিগে।

জানা গেছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের ত্রাণ শাখায় বিপুল পরিমাণ খাদ্যশষ্য ও অর্থ মজুদ থাকার পরেও প্রতিষ্ঠানটি মুখিয়ে আছে মন্ত্রণালয়ের দিকে।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৭’শ ৯৮ পরিবার এবং মাটিরাঙ্গা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ২’শ ৫২ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় তৃণমূল জনপ্রতিনিধিরা যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রেরণ না করায় জেলা প্রশাসনও ত্রাণ বিতরণ করতে পারছেন না।

এদিকে সদর উপজেলার রাঙ্গাপানি ছড়া, আলাধন পাড়া, তৈবালাই, সাতভাইয়া পাড়া, বগড়াছড়া, কুমিল্লাটিলা, কমলছড়ি, ঠাকুরড়া, আগবাড়ীসহ মাটিরাঙ্গা উপজেলার বিভন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশীরভাগ মাটির ঘরের ছাউনি উড়ে গেছে। বেড়ার ঘরগুলো উপড়ে গেছে ঘুর্ণিঝড়ে। পাশাপাশি কলা-আম-লিচু’র বাগান এবং ফসলী ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের তিনদিন পরে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাঠ পরিদর্শনে নামলেও এখন পর্যন্ত কোন জনপ্রতিনিধি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাননি।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলাধীন সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত গোলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, ইউনিয়নের বিভিন্ন পাড়া ও গ্রামের কমপক্ষে ১’শ ৮০ পরিবার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু জেলা পরিষদ কিংবা জেলা প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় অধিকাংশ পরিবার এখনও খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছেন।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সব কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও ঘূর্ণিঝড়ের এক সপ্তাহ পরও অনেক পরিবারকে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে।

রাঙ্গাপানি ছড়ার বয়োবৃদ্ধ চিত্তরঞ্জন চাকমা জানান, এ রকম একটি দূর্যোগের পরও জেলা পরিষদ কিংবা প্রশাসনের কোন সহযোগিতা না আসায় তাদের হতবাক করেছে। বগড়াছড়া নতুনপাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা জানান, বেশীরভাগ পরিবার দিনমজুর এবং জুমিয়া। ঘরবাড়ী এবং ফল-ফসল হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা।

সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আশেকুর রহমান জানান, ঘটনার পর পরই সংসদ সদস্য মহোদয় ও জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনের অজুহাতে সময়মতো তালিকা না দেয়ায় ত্রাণ বিতরণের কোন পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য আশুতোষ চাকমা জানান, পরিষদের চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবহিত করেছি। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে সাহায্য চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে পার্বত্য জেলা পরিষদের ত্রাণ শাখায় বিপুল পরিমাণ খাদ্যশষ্য এবং অর্থ থাকার পরও ক্ষতিগ্রস্তদেরকে আপদকালীন সাহায্য না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. নাসির উদ্দিন আহমেদ।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, পরিস্থিতি সামাল দেয়ার প্রস্তুতি প্রশাসনের রয়েছে। ইউনিয়ণ পরিষদ চেয়ারম্যানরা যথা সময়ে সাড়া না দিলেও ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখার পক্ষ থেকে সরেজমিনে এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এবং দু’একদিনের মধ্যেই ত্রাণ বিতরণ শুরু হবে।

খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা জানান, শারীরিকভাবে অসুস্থ্য থাকায় তিনি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনে যেতে পারেননি। তবে সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের টেলিফোনে সার্বক্ষণিক তদারকির মধ্যে রেখেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন