খাগড়াছড়িতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দু’দিন ব্যাপী ১০ম কেন্দ্রীয় সম্মেলন শুরু

OLYMPUS DIGITAL CAMERA

প্রেস বিজ্ঞপ্তি :

‘আসুন, সমাজে নৈতিক অবক্ষয়, অপসংস্কৃতি ও প্রতিক্রিয়াশীলতা রোধে বলিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল নারী নেতৃত্ব গড়ে তুলি’ এই শ্লোগানে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী সমাজের অগ্রগামী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দু’দিন ব্যাপী ১০ম কেন্দ্রীয় সম্মেলন সোমবার খাগড়াছড়িতে শুরু হয়েছে।

সকাল ১০টায় খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভরস্থ ঠিকাদার সমিতি ভবনের হলরুমে সম্মেলনের উদ্বোধনী সভা অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের মধ্যে দিয়ে এ সম্মেলন শেষ হবে। সম্মেলনের উদ্বোধনী সভায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি কণিকা দেওয়ানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর কেন্দ্রীয় নেতা সচিব চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অংগ্য মারমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি থুইক্যচিং মারমা প্রমুখ।

সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মাদ্রী চাকমা ও পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক রীনা দেওয়ান। সভা শুরুর আগে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কর্মী ডেইজী চাকমা। শোক প্রস্তাব পাঠের পর শহীদদের সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সম্মেলনের উদ্বোধনী সভায় বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত নারী ধর্ষণ, হত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে। গত শুক্রবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উ প্রু নামে এক স্কুল শিক্ষিকাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে, সেনা-বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনের নামে চলছে ভূমি বেদখলের মহোৎসব।

সম্প্রতি দীঘিনালায় জমি অধিগ্রহণের নামে রাতের আঁধারে বিজিবি কর্তৃক পাহাড়িদের জায়গা বেদখল করা হয়েছে। বান্দরবানে হাজার হাজার একর ভূমি সেনা বিজিবি হেডকোয়ার্টারের নামে অধিগ্রহণের পাঁয়তারা চলছে। নাইক্ষ্যংছড়িতে রাবার বাগানসহ বিভিন্ন বাগান সৃজনের নামে ভূমি দস্যুরা পাহাড়িদের উচ্ছেদ করছে, জায়গা-জমি বেদখলের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়াও পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন চটকদারি উন্নয়নের নামে সরকার পাহাড়ি জনগণকে নিজ বাস্তুভিটা হতে উচ্ছেদ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

বক্তারা আরো বলেন, সরকার একদিকে পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়ার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সংখ্যালঘু জাতিসমূহকে বিলীন করে দিতে চাইছে, অন্যদিকে র‌্যাব মোতায়েনের মাধ্যমে সমতলের ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামেও খুন-খারাবি আমদানি করে পাহাড়িদের উপর নিপীড়ন-নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধির চক্রান্ত করছে। এর বিরুদ্ধে নারী-পুরুষ সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। সরকারের সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণের ১৮ বছর অতিক্রান্ত হলেও সরকার এখনো তার কোন খোঁজ দিতে পারেনি। আইনের আওতায় আনা হয়নি চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস ও তার দোসরদের। উপরন্তু সরকার-সেনাবাহিনী বিভিন্ন অজুহাতে অপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বক্তারা কল্পনা অপহরণের সঠিক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ ও চিহ্নিত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান। বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্র-যুব-নারী সমাজকে নৈতিক অবক্ষয় ও অধঃপতনের জন্য শাসকগোষ্ঠি বিভিন্ন ছলচাতুরি অব্যাহত রেখেছে। তাই সমাজের নৈতিক অবক্ষয়, অপসংস্কৃতি ও প্রতিক্রিয়াশীলতারোধে বলিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল নারী নেতৃত্বের কোন বিকল্প নেই। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, খুনসহ সকল প্রকার নিপীড়ন-নির্যাতন ও অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে নারীদেরকে প্রতিবাদ প্রতিরোধে গর্জে উঠার আহ্বান জানান বক্তারা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন