বাল্য বিবাহ: মাটিরাঙ্গায় ১৩ বছরের কিশোরীর সাথে ৬০ বছরের বৃদ্ধের অসম বিয়ে

দুই মাসে একই গ্রামে পাঁচ বাল্য বিবাহ

71020_03-10-13_biye-copy

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

খাগাছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চলছে বাল্য বিবাহের মহোৎসব। উপজেলার বিভিন্ন জনপদে প্রতিদিনই চলছে কোন না কোন গ্রামে স্কুলের অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরীর বিয়ে।

পিতা-মাতার দারিদ্রতার সুযোগে এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ কর্তা ব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে বাল্য বিবাহ আয়োজন করলেও প্রশাসনের কোন ভুমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বাল্য বিবাহের ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে মাটিরাঙ্গা উপজেলার উত্তরের ইউনিয়নগুলো। খোজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রতিদিনই ঘটছে বাল্যবিবাহের মতো অপরাধ।

মাটিরাঙ্গায় বাল্য বিবাহের সর্বশেষ শিকার হয়েছে মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন বেলছড়ি ইউনিয়নের আমবাগান গ্রামের দরিদ্র ফরিদ মিয়া‘র ১৩ বছরের কিশোরী স্কুল পড়–য়া কুলসুমা আকতার। মাটিরাঙ্গা উপজেলার খেদাছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর এ শিক্ষার্থীর অসম বিয়ে হয়েছে ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার উত্তর মন্দিয়া গ্রামের আসকর বাড়ীর ষাটোর্ধ মো: মনির হোসেন এর সঙ্গে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় মুখরোচক আলোচনা চললেও প্রভাবশালীদের ভয়ে মুখ খুলছেনা সাধারন মানুষ।

এ বিষয়ে সরেজমিনে খোজ নিয়ে জানা গেছে, কুলসুমা‘র বাবা ফরিদ মিয়া‘র দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে কুলসুমা আকতারকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয় কুলসুমার নানা ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার উত্তর মন্দিয়া গ্রামের ২৮ বছর পাকিস্তান প্রবাসী মো: মনির হোসেন। সম্প্রতি কুলসুমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসা মনির হোসেন এর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে সুঠাম দেহের অধিকারী ১৩ বছরের কিশোরী স্কুল পড়ুয়া কুলসুমা আকতারের দিকে। তার দেয়া আর্থিক লোভে নিজের মেয়েকে তার সাথে বিয়ে দেয়ার সিদ্দান্ত নেয় কুলসুমা‘র মা-বাবা। বিষয়টি স্থানীয় সমাজপতিদের জানালে তারা বিয়েতে আপত্তি করেন। সমাজপতিদের আপত্তির মুখে গত ৩জুন খাগড়াছড়ি জেলা সদরে গিয়ে স্থানীয় নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ের কার্য্য সম্পন্ন করেন তারা। বিয়ের পরপরই কিশোরী নববধু কুলসুমা আকতার-কে ফেনীর ছাগলনাইয়ার নিজ বাড়িতে নিয়ে যান বৃদ্ধ বর মো: মনির হোসেন। বর্তমানে তারা সেখানেই ঘর-সংসার করছে বলে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে।

এবিষয়ে কুলসুমার মা আনোয়ারা বেগম প্রথমে বিয়ের কথা অস্বীকার করলেও পরে নিজের মামা মো: মনির হোসেনের সঙ্গে কিশোরী কুলসুমার অসম বিয়ের কথা স্বীকার করে অনেকটা ক্ষোভের সাথেই বলেন, আমরা গরীব মানুষ। তাই আমাদের দোষ ধরতে সবাই আসে। কিন্তু বড়লোকদের আরো ছোট মেয়ে বিয়ে দিলেও কোন দোষ হয়না। তবে তিনি এ বিয়ের জন্য তার দারিদ্রতাকে দায়ী করে বলেন, আমরা মেয়ের সুখের কথা ভেবেছি।

এদিকে আমবাগান এলাকায় খোজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই মাসে একই গ্রামে পাঁচটি বাল্য বিবাহের ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যেকটি বিয়ের সাথেই কোন না কোন ভাবে প্রভাবশালীরা জড়িত রয়েছে। জানা গেছে গত দুই মাসের ব্যাবধানে একই গ্রামের গ্রীস ফেরত আবদুস ছাত্তারের মেয়ে রিনা আকতার, মো: মোস্তফা মিয়ার মেয়ে মোসা: পুতুল আকতার, নছর উদ্দিনের মেয়ে এবং নায়েব আলীর মেয়ে বাল্য বিবাহের শিকার হয়। যাদের প্রত্যেকেরই বয়স ১৪ বছরের নীচে এবং সকলেই খেদাছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী।

এবিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হলেও সংশ্লিষ্ট নিকাহ রেজিষ্টারের ব্যবহৃত মুঠোফোনে সংযোগ না পাওয়ায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

শুধু কিশোরীরাই বাল্য বিবাহের শিকার হচ্ছেনা সাথে সাথে যৌতুকের বলিও হচ্ছে অনেক অসহায় পিতা-মাতা। অপর দিকে বাল্য বিবাহ জনিত কারণে কলহের সৃষ্টির জের ধরে অনেক কিশোরী আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে বলেও জানা যায়। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হর হামেসাই বাল্য বিবাহ ও যৌতুকের শিকার হচ্ছে অনেক কিশোর-কিশোরী।

১৮ বছরের নীচে কন্যা সন্তান বিয়ে দেয়া এবং ২১ বছরের কম বয়সী ছেলেদের বিয়ে করানো দেশের প্রচলিত আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। তবুও বাল্য বিবাহের মহোৎসব চলছে মাটিরাঙ্গা উপজেলায়। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কেটে পড়েন এমন অভিযোগ রয়েছে সচেতন মহল থেকে। তাদের অভিযোগ বিবাহ রেজিষ্টার কাজীরা টু’পাইস কামানোর জন্যই এহেন অনিয়ম করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় চেতন মহল এ ধরনের কর্মকান্ডে জরুরী ভিত্তিতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পার্বত্যনিউজ, বাল্য বিবাহ, মাটিরাঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন