ভূমি অধিগ্রহণের টাকার কুমির শ্রীঘরে!

fec-image

শুক্রবার (১ জুলাই) সাপ্তাহিক ছুটির দিন। প্রতি বারের মতো বিমানে করে বাড়ির পথে রওনা দেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএও) শাখার সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান। সঙ্গে ব্যাগে নেন ২৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকা। বিশাল অংকের এই টাকাসহ কক্সবাজার বিমানবন্দর হয়ে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছেন। প্রবেশ পথে স্ক্যানার ও নিরাপত্তাকর্মী থাকার পরও কিভাবে তিনি তা পার হলেন, সেটা ভিন্ন কথা।

তবু সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে পিছু নেয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার টিম। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে ধরা পড়লেন সার্ভেয়ার আতিক। বাড়ি যাওয়া হলো না এই টাকার কুমিরের। ঢাকা থেকে বিমানে করে কক্সবাজার নিয়ে আসা হয়। রাতেই তাকে সদর মডেল থানায় হস্তান্তর করে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আমিন আল পারভেজ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। যা সাধারণ ডায়েরি হিসেবে লিপিবদ্ধ করে সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শনিবার (২ জুলাই) বিকালে তাকে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। শুনানি শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক আসাদ উদ্দিন মোহাম্মদ আসিফ।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) লিখিত অভিযোগসহ শুক্রবার রাতে সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানকে থানায় সোপর্দ করেন। আইন মতে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। যা দুর্নীতি দমন কমিশনারের কক্সবাজার সম্মিলিত কার্যালয়ে পাঠানো হয়। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে তারা।

অন্যদিকে সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান এডিসি মো. আমিন আল পারভেজ।

তিনি জানিয়েছেন, ফৌজদারি মামলার পাশাপাশি সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি কিভাবে, কোথা থেকে এতো টাকা পেলেন এবং তা ঢাকায় কেন নিয়ে গেছেন, সব বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

কক্সবাজার বিমানবন্দর সূত্র জানায়, আতিকুর রহমান সকাল নয়টার দিকে বিমানবন্দরে প্রবেশ করেন। তাঁর ব্যাগ স্ক্যান করলে বিপুল পরিমাণ টাকার স্তূপ দেখা যায়। সকাল পৌনে ১০টার ফ্লাইটে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। ঘণ্টাখানেক পর ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছালে তল্লাশিতে তাঁর ব্যাগভর্তি টাকা পাওয়া যায়। বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে আটক করেন। পরে আতিকুরের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে বিকেল সাড়ে চারটার একটি ফ্লাইটে তাঁকে কক্সবাজারে ফেরত পাঠানো হয়। বিমানবন্দর থেকে আতিককে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আতিকুর রহমানের বাড়ি সিরাজগঞ্জে বলে জানা গেছে। তিনিসহ তিনজন সার্ভেয়ার মহেশখালীতে সরকারের প্রায় ১৫টি প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন। ভূমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে জমির মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ বাবদ আতিকুর ওই অর্থ নিয়েছেন বলে সন্দেহ করছেন সংশ্লিষ্টজনেরা।

কক্সবাজারে সরকারে ৩ লাখ কোটি টাকার ৭২টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তিনটি তদন্তে ভূমি অধিগ্রহণে মোট ৭৮ কোটি টাকা দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়।

২০২০ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে র‌্যাব কক্সবাজার শহরের তারাবনিয়ার ছড়া সার্ভেয়ার ফেরদৌসের বাসায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৭ লাখ টাকা জব্দ করে। এছাড়া বাহারছড়া এলাকায় সার্ভেয়ার ফরিদের বাসায় অভিযান চালিয়ে ৬০ লাখ ৮০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। এব্যাপারে দায়ের করা মামলার তদন্ত করে দুদক।

এ দুর্নীতির তদন্তে নেতৃত্ব দেওয়া দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে প্রথমে বদলি এবং পরে গত ফেব্রুয়ারি মাসে চাকরিচ্যুত করা হয়।

এদিকে, কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দুদকের অভিযানের পর অনেকটা চুপসে গিয়েছিল দালালচক্র। সম্প্রতি তারা আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পুরাতন দালালদের পাশাপাশি নতুন দালাল সৃষ্টি হয়েছে। টাকা ছাড়া অধিগ্রহণ ফাইল নড়ে না। অতি কৌশলে চলছে কমিশন বাণিজ্য। অধিগ্রহণ শাখায় জিম্মি আবেদনকারীরা। কমিশন বাণিজ্যের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি চায় ভুক্তভোগীরা।

 

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, সার্ভেয়ার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন