চকরিয়ায় টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ১২’শ একর জমির পাকা বোরো ধান: হতাশায় কৃষক
চকরিয়া প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের চকরিয়ায় কৃষকের ভাগ্যেন্নয়ের জন্য যে রাবার ড্যাম ধান ও সবজি চাষাবাদ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে সে ড্যামের কারণেই ক্ষতির মুখে পড়েছে এখন চাষিরা। বৈরী আবহাওয়া ও টানা চারদিনের বর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে দুটি বিলের ১২’শ একর জমির পাকা বোরো ধান এখন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে কৃষকের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম ভাবে হতাশা।
উপজেলার হারবাংয়ের বড়বিল ও কাকারা ইউনিয়নের নলবিলা এলাকায় বিপুল পরিমাণ জমির পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে থাকায় কয়েক হাজার কৃষক পরিবারে চরম হতাশায় ভর করছে। বাঘগুজারা রাবার ড্যামের রাবার নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তাদের আমলে নিয়ে দ্রুতসময়ে মেরামত করতে মাটির তৈরি বাঁধ দেয়ায় সোনাইছড়ি ও হারবাং ছড়া খালের পানি নিচের দিকে নামতে না পারায় হারবাং বড়বিলের পানির নিচে তলিয়ে গেছে প্রায় ৭’শত একর জমির বোরো পাকা ধান।
অপরদিকে সরকারি বরাদ্ধ পাওয়া সত্বেও বাইশ্যারছড়া খাল সঠিকভাবে খনন না করার ফলে কাকারা নলবিলা বিলে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে প্রায় ৫’শত একর জমির পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।পানির নিচে তলিয়ে থাকা বোরো ধান কাঁটতে না পারায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে শনিবার সন্ধ্যায় কৃষক সমাবেশ করেছে ক্ষতিগ্রস্তরা।
হারবাং ইউনিয়নের ডেবলতলি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষক মো. কামাল উদ্দিন ও জাফর আলম বলেন, আমরা ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে বোরো চাষ করেছি। কিন্তু রাবার ড্যাম মেরামত করতে মাটির তৈরি বাঁধ নির্মাণের ফলে মাতামুহুরী নদী ও ছড়াখাল দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানি আটকে জমিয়ে থাকায় আমাদের কয়েক হাজার কৃষকের অন্তত ৭’শত একর জমির বোরো পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে আছে। বর্তমানে এ ধান কাঁটতে না পারায় সুদে নেয়া টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো তা বুঝতে পারছিনা।
রবিবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরেদেখা যায়, টানা বৃষ্টির ফলে বিভিন্ন জায়গায় চকরিয়ার ১২’শ একর জমির পাকা বোরো ধান পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে। জমে থাকা পানি যাওয়ার জন্য কোন পথ নেই। ক্ষেতের ফসলি ধান পানির নিচে ডুবে রয়েছে। চাষীরা পানির নিচে ডুবে যাওয়া পাকা ধান কাঁটার চেষ্টা করলেও পানির কারণে তা কাঁটতে পারছেনা।
সিংহভাগ পাকা ফসলি ধান নষ্ট হওয়ায় ফসল হারিয়ে হাহাকার করছেন কৃষকরা। অনেক কৃষক রয়েছেন যাদের পরিবার সারা বছরের সংসার খরচ চলে ধান বিক্রির টাকায়। তারাও পরিবার পরিজন নিয়ে রয়েছেন চরম ভাবে দুঃশ্চিন্তায়। হারবাং ইউনিয়নের বেলতলি, ডেইঙ্গাকাটা, পহরচাঁদা, কালাসিকদার পাড়া, গোদারপাড়া, মছনিয়াকাটা, নোয়াপাড়া এলাকার বিলে প্রায় ৭’শ একর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে চলতি বছর।
কৃষক খালেদ হোসেন পিটু বলেন, আমি এ বছর জমি চাষ করেছি ঋণ করে। সব ফসলতো পানিতে তলিয়ে গেছে। কীভাবে সংসার চালাবো, আর কীভাবেই বা ঋণের টাকা শোধ করবো সে চিন্তায় আছি। তিনি আরও বলেন, শীত মৌসুমের সময় যদি বাঘগুজারা রাবার ড্যামটি মেরামত করা যেতো,তাহলে এ দুর্ভোগে পড়তে হতো না কৃষকদের।কিন্তু ড্যামের কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় বৃষ্টির পানিতে জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৭শত একর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। কিন্তু কাল বৈশাখীর সৃষ্ট কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ফসলি জমিতে পানি জমে থাকার কারণে বোরো পাকা ধান পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. দিদারুল আলম বলেন, বেশ কয়েকটি বাঁধ কেটে দেয়া হয়েছে। বাঘগুজারা বাঁধ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের
নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাবিবুর রহমান কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাঘগুজারা রাবার ড্যামটি মেরামত কাজ চলছে। তাই রাবার ড্যামের পাশে মাটির বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বৃষ্টি শুরু হলে বাঁধের একপাশে ছোট করে কাটা হয়েছে। অধিক পরিমাণ পানি আটকে গেলে জনস্বার্থে বাঁধ কেটে দেয়া হবে।