চকরিয়ায় লবণমাঠ ও চিংড়িজমি দখলে নিতে ১৮ মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় লিখিত নালিশ

fec-image

চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের মেধাকচ্ছপিয়া মৌজার ছড়াঘোনা ও মাস্টারঘোনা এলাকায় জমি বংশ পরস্পরায় ভোগদখলীয় ১১৪ পরিবারের মালিকানাধীন ১৮৩ দশমিক ৩৮ একর লবণ ও চিংড়ি লবণজমি জরবদখল নিতে এবার দখলবাজ চক্র নতুন মিশনে নেমেছে। নিজেদের জমি থেকে মালিকপক্ষের লোকজনকে উচ্ছেদ করার মিশন হিসেবে ইতোমধ্যে চক্রের অন্যতম হোতা মোহাম্মদ নিজাম নামের একজন বাদি হয়ে চকরিয়া থানায় ৯৯ জন নারী-পুরুষকে আসামি করে একটি নালিশী অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগটিতে জীবিতদের পাশাপাশি অন্তত ১৮ জন মৃত ব্যক্তিকেও বিবাদি করা হয়েছে।

অভিযোগটির বাদি মোহাম্মদ নিজাম বাঁশখালী উপজেলার পুইছড়ি এলাকার মরহুম ফৌজুল কবির চৌধুরীর ছেলে। তিনি বর্তমানে চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের মেধাকচ্ছপিয়াস্থ আলীম উদ্দিন ওয়াকফ এস্টেট ভবনে থাকেন। অপরদিকে বিবাদি করা ৯৯ জন নারী-পুরুষের বাড়ি চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নে এবং বিভিন্ন এলাকায়। বিবাদিপক্ষের সবাই জমি মালিকপক্ষ তথা ১১৪ পরিবারের অংশিদার। বাদির অভিযোগটি আমলে নিয়ে চকরিয়া থানার ওসি তদন্তের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন ওসি তদন্তকে।

বিবাদির তালিকায় থাকা মৃত ব্যক্তিরা হলেন খুটাখালী মেধাকচ্ছপিয়ার আবদুল জলিলের ছেলে মৃত মোহাম্মদ ইব্রাহিম, আলী আহমদের ছেলে মৃত আবুল কাশেম, হাবিবুর রহমানের ছেলে মৃত নুরুল হক, তাঁর ভাই মৃত সামসুল আলম, আলী আহমদের ছেলে মৃত নুরুল আলম, ফজর রহমানের ছেলে মৃত আইয়ুব আলী, হাজি বদিউজ্জমানের ছেলে মৃত সামসুল হুদা, ফুলছড়ির আবদুল হামিদের ছেলে মৃত ছৈয়দ আহমদ, আবদু ছমদের ছেলে মৃত আলী আহমদ, মেধাকচ্ছপিয়ার সফর মুল্লুকের ছেলে মৃত জাফর আহমদ, তাঁর ভাই মৃত নবী হোছাইন, খুটাখালীর রাহামত আলীর ছেলে মৃত মোহাম্মদ ইসহাক, মোহাম্মদ ইসহাকের ছেলে মৃত মো. মোক্তার, হাসমত আলীর ছেলে মৃত ফজল করিম, হাজী মাস্টার মোজাফ্ফর আহমদের ছেলে মৃত মৌলভী নিয়াজ উল্লাহ, হাজী নজির আহমদের ছেলে মৃত মৌং আবুল বশর, কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাও এলাকার হাজী মৌং তোফাইল আহমদের ছেলে মৃত মৌং জসিম উল্লাহ ও মেধাকচ্ছপিয়ার বদিউর রহমানের ছেলে মৃত নুরুল আমিন।

থানায় দায়েরকৃত অভিযোগটিতে বাদি মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের মেধাকচ্ছপিয়া মৌজার ছড়াঘোনা ও মাস্টারঘোনা এলাকার ১১৪ পরিবারের মালিকানাধীন ১৮২ একর লবণ ও চিংড়ি লবণজমি আলীমউদ্দিন ওয়াকফ এস্টেটের দাবি করলেও ইতোপুর্বে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদনে অসত্য প্রমাণিত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ১১৪ পরিবারের লোকজন। তাদের দাবি, উল্লেখিত ১৮৩ দশমিক ৩৮ একর লবণ ও চিংড়িজমি ক্রয়সূত্রে ও অনেকে পৈত্রিকভাবে মালিকানাধীন বংশ পরস্পরায় তাদের ভোগদখলীয় সম্পত্তি।

ভুক্তভোগী ১১৪ পরিবারের জমি মালিক পক্ষের অংশিদার সামরুব বেগম চৌধুরী, নুরুল ইসলাম হেলালী, আক্তার আহমদ মেম্বার, মমতাজুল হক, সফিউল আলম, মোক্তার আহমদ মাষ্টার, ডা.নুরুল আবছার, মৌলভী আবু হুরাইরা, মোহাম্মদ আলম ও নুরুল হকসহ অনেকে অভিযোগে জানান, খুটাখালী ইউনিয়নের মেধাকচ্ছপিয়া মৌজার বিএস ১৫৬ খতিয়ানের ৫৮একর ৪৯শতক ও বিএস ১৭৬দাগের ১২৫একর ১৯শতকসহ দুই খতিয়ানে মোট ১৮৩ দশমিক ৩৮ একর লবণ ও চিংড়ি জমি। উল্লেখিত জমি ক্রয়সূত্রে ও অনেকে পৈত্রিকভাবে ১১৪ পরিবারের মালিকানাধীন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এসব পরিবার উল্লেখিত জমির বিপরীতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবছর খাজনা (রাজস্ব) পরিশোধ করে বৈধভাবে ভোগদখল করে আসছেন। ইতোমধ্যে অনেকের নামে আলাদা জমাভাগ খতিয়ানও সৃজন হয়েছে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার দপ্তর থেকে।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, বিগত ২০০৯ সালের দিকে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার একটি প্রভাবভালী চক্র রাতারাতি দাপট দেখিয়ে ১১৪ পরিবারের এসব জমি জোরপুর্বক জবরদখল করে নেয়। প্রথমে উল্লেখিত জমি বাঁশখালী উপজেলার পুইছড়ি এলাকার ফৌজুল করিম চৌধুরীর ছেলে সুলতানুল গনি ওরফে লেদু মিয়ার নেতৃত্বে একটি চক্র দখলে নিলেও বর্তমানে বাদি দাবিদার মোহাম্মদ নিজাম ভাড়াটে লোকজন নিয়ে উল্লেখিত লবণ ও চিংড়ি জমি দখলে রেখে বেসুমার লুটপাট চালাচ্ছে। পাশাপাশি অভিযুক্ত চক্রটি প্রায় ৭০ বছর ধরে ওয়াকফ এস্টেটের নামে সরকারি ৫০৬ সরকারি খাসজমি জবরদখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জমি মালিকরা দাবি করেন, অভিযুক্ত ভূমিদস্যুরা তাদের জমি দখলে নেয়ার উল্লেখিত সময়ে তাদের ২০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে দখলবাজ চক্রের সদস্যরা জমি এলাকায় ভাড়াটে দুর্বৃত্তদের জড়ো করে নিত্যদিন অস্ত্রের মহড়া দেয়ায় জমি মালিকরা তাদের জমিতে চাষাবাদে যেতে ভয় পাচ্ছে। এমনকি জমি দখল চেষ্ঠা অব্যাহত রাখতে ১১৪ পরিবারের অংশিদার ৯৯ জন নারী-পুরুষকে আসামি করে থানায় কাল্পনিক অভিযোগ দিয়ে হয়রাণির চেষ্টা করছে। অভিযোগটিতে জমি মালিকপক্ষের অংশিদার মৃত ১৮জন ব্যক্তিকেও আসামি করেছে দখলবাজ চক্রটি। এ অবস্থার কারণে জমি মালিক ১১৪ পরিবারের লোকজন চরম আতঙ্কে রয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবার গুলো জমি উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

জানতে চাইলে অভিযোগটির তদন্ত কর্মকর্তা চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) একেএম সফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, খুটাখালী ইউন্য়িনের মেধাকচ্ছপিয়া মৌজার লবণ ও চিংড়ি জমি নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে দুইটি পক্ষের। মোহাম্মদ নিজাম নামে একজন বাদি হয়ে ৯৯ জনের বিরুদ্ধে করা একটি অভিযোগে বিবাদিপক্ষের অনেক মৃত ব্যক্তিকে আসামি করার কথা বলেছেন বিবাদিপক্ষের লোকজন। সেইজন্য তাদেরকে মৃত সার্টিফিকেট উপস্থাপনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে দুইপক্ষের অভিযোগ নিস্পত্তি করা হবে। সেখানে কোন ধরণের শৈথিল্য হবেনা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন