জাপান যে কারণে আমেরিকা ও ইসরাইলকে ভয় পায়?

fec-image

জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিস্ময়করভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সুর মিলিয়ে সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসে হামলার জন্য তেলআবিবের নিন্দা করার পরিবর্তে, বরং ইসরাইলের আগ্রাসনের জবাবে বৈধ অধিকার হিসাবে ইরানের হামলার নিন্দা করেছেন।

এ সংক্রান্ত আলোচনায় আমরা ইরানের ব্যাপারে জাপান সরকারের সাম্প্রতিক চারটি বিস্ময়কর আচরণ ও নীতির বিষয়টি পর্যালোচনা করবো যা কিনা এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এসব আচরণ থেকে জাপান সরকারের মধ্যে আতঙ্ক ও অসততার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। এটি জাপানের মতো একটি মহান ও গৌরবময় জাতির জন্য খারাপ উদাহরণ হয়ে থাকবে। অবাক করার বিষয় হচ্ছে জাপানের মতো ঐতিহ্যবাহী দেশ শিশু হত্যাকারী দখলদার ইসরাইল এবং আধিপত্যকামী যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ে তটস্থ থাকে এবং সরকার নৈতিক সংকটে নিমজ্জিত।

১. সিরিয়ায় ইরানি দূতাবাসে শিশু হত্যাকারী ইসরাইল সরকারের আগ্রাসনের নিন্দা না করা!

গত ১ এপ্রিলে ইসরাইল সিরিয়ায় অবস্থিত ইরান দূতাবাসের কনস্যুলেট ভবনে হামলা চালিয়ে ইরানের শীর্ষ দুজন সামরিক কমান্ডারসহ সাতজনকে শহীদ করেছিল। এ ঘটনায় জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমেরিকার সাথে তাল মিলিয়ে ইসরাইলি ওই পদক্ষেপের নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানায়। অথচ দূতাবাসে ইসরাইলের ওই আগ্রাসন ছিল ইরানের সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। জাপান এমন সময় ইরানের বিরুদ্ধে এই বিস্ময়কর অবস্থান নিল যখন জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রে দূতাবাসে হামলাকে নিন্দনীয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং দক্ষিণ কোরিয়াসহ পাশ্চাত্যের তিনটি দেশ অর্থাৎ আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্স ছাড়া অন্য প্রায় সব দেশ ইরান দূতাবাসে হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

২. ইসরাইলি হামলার জবাবে ইরানের আইনি পদক্ষেপের নিন্দা!

আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, যখন ইরান ইসরাইলের আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার জন্য জাতিসংঘ সনদের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বৈধ অধিকার হিসাবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তখন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োকো কামিকাওয়া বলেছেন, ‘জাপান ইরানের এ পদক্ষেপের নিন্দা জানায়’। অথচ জাতিসংঘের সনদের ৫১ অনুচ্ছেদ অনুসারে, এই সংস্থার কোনো সদস্য দেশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলা হলে ওই দেশটি এই অনুচ্ছেদের অধীনে আত্মরক্ষা করতে পারবে। তার মানে তার আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার থাকবে। এই প্রচেষ্টায় সে যাই করুক না কেন তা নিরাপত্তা পরিষদকে জানাতে হবে। জাতিসংঘের এই অনুচ্ছেদটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় কার্যকর বলে প্রমাণিত।

৩. পারমাণবিক বোমা মেরে জাপানিদের হত্যা ও অপমানের পরও আমেরিকার আইন প্রণেতাকে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে জাপান সরকারের ব্যর্থতা:

জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োকো কামিকাওয়া গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন যে, মার্কিন আইন প্রণেতা টিম ওয়ালবার্গের সাম্প্রতিক বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদ করার ‘কোন প্রয়োজন নেই’ টোকিওর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে আমেরিকার পারমাণবিক বোমা হামলার কথা উল্লেখ করে, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্য টিম ওয়ালবার্গ সম্প্রতি গাজায় পারমাণবিক হামলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি এও বলেছিলেন, ‘আক্রমণটি নাগাসাকি এবং হিরোশিমার মতো হওয়া উচিত। তাড়াতাড়ি শেষ কর!’

৪. লাখ লাখ জাপানিদের হত্যাকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন:

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা আমেরিকায় মার্কিন সেনাদের কবরস্থানে গিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। এরা হচ্ছে সেইসব সৈন্য যারা দুই লাখ ২০ হাজার জাপানিকে এক মুহূর্তের মধ্যে পরমাণু বোমা মেরে তাদেরকে ছাইভস্মে পরিণত করেছিল। মজার বিষয় হল, এরপর তিনি খুশি বোধ করেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার সম্পর্ককে অসামান্য বলে উল্লেখ করেন। তার এ বক্তব্যে মার্কিন প্রতিনিধিরা উল্লসিত হলে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী তাদের বলেছিলেন যে আমেরিকাতে বেড়ে ওঠার জন্য তিনি খুবই গর্ব অনুভব করছেন। কেননা তিনি নিউ ইয়র্ক সিটিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম তিন বছর কাটিয়েছেন এবং তার বাবা একজন মার্কিন সরকারী কর্মচারী ছিলেন।

পরিশেষে বলা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা মিত্রদের মূল উদ্দেশ্য জাপানের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা যাতে তাদের ওপর কোনো নীতি চাপিয়ে দেয়া যায় তা যদি সেদেশের বিরুদ্ধেও যায় কিংবা আন্তর্জাতিক নীতির লঙ্ঘনও হয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আমেরিকা, ইসরায়েল, জাপান
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন