তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন

fec-image

ঢাকাসহ দেশের পাঁচ বিভাগ এবং দুই জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। যা অব্যাহত থাকবে আরো কয়েকদিন। আবার এই সময়ের মধ্যে তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে।

এমন অবস্থায় কড়া রোদ, উষ্ণ বাতাস আর তীব্র দাবদাহে বিপর্যস্ত রাজধানীসহ সারা দেশের জনজীবন। বিশেষ করে যারা জীবন-জীবিকার তাগিদে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন তাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে ভ্যাপসা গরম আর তীব্র দাবদাহের। বেশি বিপাকে পড়েছেন রিকশাচালক, হকার, আর নিম্ন আয়ের মানুষজন। এই গরমে পেটের দায়ে বাধ্য হয়েই রোদ-গরম উপেক্ষা করে কাজ করতে হচ্ছে তাদের।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কমলাপুর, মতিঝিল, শাহবাগ, নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রিকশাচালক ও অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষজন ছায়াযুক্ত স্থানে বসে একটু প্রশান্তি খোঁজার চেষ্টা করছেন। যারা রাস্তায়-ফুটপাতে বসে চা-পান বিক্রি করেন তারাও রোদের তীব্রতা থেকে বাঁচতে মাথায় ছাতা নিয়ে বা উপরে ব্যানার দিয়ে সামিয়ানা টানিয়েছেন। আর রিকশাচালকরা যাত্রী পেলেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বের হচ্ছেন। গরমের কারণ দেখিয়ে ভাড়াও চাইছেন বেশি। হকারদের অনেককেই মাথায় গামছা দিয়ে ঘুরতে দেখা গেছে। খাঁ-খাঁ রোদে মহাসড়কগুলোতে সাধারণ মানুষের উপস্থিতিও ছিল অনেক কম।

কমলাপুর রেলস্টেশনের বাইরে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় থাকা রিকশাচালক পলাশ মিয়া বলেন, মামা— এমন রোদ আর গরম জীবনে দেখি নাই। বারবার গলা শুকিয়ে যায়। সকাল থেকে কয়েক লিটার পানি খাইছি। রোদে শরীরের সব পানি শুষে নেয়। একটা ট্রিপ মারার পর বিশ্রাম নিতে হচ্ছে। এভাবে বেশিক্ষণ কাজ করতে পারবো না। এখন গ্যারেজে চলে যাব। আবার রোদ কমলে বিকেলে কিংবা সন্ধ্যার দিকে বের হবো।

সুজন হাওলাদার নামের আরেক রিকশাচালক বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই অনেক গরম। একটু বৃষ্টি হলে শান্তি লাগতো। আর আজকে সকাল থেকে রোদের তীব্রতা অনেক বেশি। সঙ্গে অনেক গরমও লাগছে। তারপরও এই রোদের মধ্যে কাজ করছি। ঘরে বসে থাকলে তো আর পেটে ভাত পড়বে না।

তাপপ্রবাহে কষ্টে পড়েছেন মোটরসাইকেল রাইডশেয়ারিং করে জীবিকা নির্বাহ করেন এমন অনেকেই। বেশ কয়েকজন জানালেন, প্রচণ্ড রোদের কারণে মানুষজন এখন মোটরসাইকেলে যেতে আগ্রহী নয়। সেজন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও কোনো ট্রিপ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার রোদেও কষ্ট করতে হচ্ছে।

হাসিববিল্লাহ নামের এক মোটরসাইকেল চালক বলেন, সকাল থেকে মাত্র দুটি ট্রিপ পেয়েছি। একটি পান্থপথ থেকে মতিঝিল আরেকটি মতিঝিল থেকে নিউমার্কেট। প্রচণ্ড রোদ আর গরম মানুষ বাইকে চড়তে চাচ্ছে না। আমরা নিজেরাই দুর্বল হয়ে গেছি। সন্ধ্যার পরে বের হওয়া ছাড়া উপায় নেই। এই রোদে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাব নিশ্চিত।

অপরদিকে সহসাই এমন পরিবেশ স্বাভাবিক হবে না বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম।

তিনি জানান, ঢাকা, রংপুর, নীলফামারী জেলা এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চলমান এই তাপপ্রবাহ আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে।

তাপমাত্রার অবস্থা সম্পর্কে তিনি জানান, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

তবে আগামীকাল রংপুর, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা, ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন