টানা বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, বান্দরবান-রাঙামাটি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ: পাহাড় ধসের আশঙ্কা
স্টাফ রিপোর্টার:
তিন দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবান শহরের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বালাঘাটায় পুলু পাড়া বেইলি ব্রিজ তলিয়ে যাওয়ায় সোমবার রাত থেকে বান্দরবানের সঙ্গে রাঙ্গামাটির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
প্রশাসন ও স্থানীয়রা জানায়, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে বান্দরবান পৌর এলাকার আর্মী পাড়া, শেরে বাংলা নগর, ইসলামপুর, মেম্বারপাড়া, বালাঘাটা,কালাঘাটাসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে নিম্নাঞ্চল প্লবিত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যাদুর্গত কয়েক শতাধিক মানুষ জেলা শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের ঈদ আনন্দ যেন বিশাদগারে পরিণত হতে যাচ্ছে।
জেলা শাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।
এদিকে ভারি ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানের সাঙ্গ ও মাতামুহরী নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লামা ও আলীকদমে যেকোন সময় বন্যার আশংঙ্খা রয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর তীরবর্তী লোকজনেরা নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছেন।
এদিকে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শহরের ইসলামপুর, লাঙ্গিপাড়া, হাফেজ ঘোনা, কালাঘাটা, বনরুপা, ক্যাচিং ঘাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েক শতাধিক পরিবার পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি নির্মাণ করায় বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় পাহাড় ধ্বস ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে।
এছাড়া বান্দরবানের লামা, আজিজনগর, ফাসিয়াখালী, ফাইতং, গজালিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম এসব এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে নতুন নতুন বসতি বেড়ে যাওয়ায় পাহাড় ধসের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। মাথাগোঁজার ঠাঁই হিসেবে পাহাড় কেঁটে ও বৃক্ষ নিধন করে জেলার বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিত ভাবে বসতবাড়ী গড়ে তুলেছে হাজার হাজার পরিবার
ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের মতে, বেঁচে থাকার তাগিদে দীর্ঘদিন যাবৎ ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ে বসবাস করে আসছেন তারা। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম আসলে প্রশাসনের মুখ থেকে আশার বাণী ছাড়া তারা আর কিছুই পাচ্ছেন না। বৃষ্টি শুরু হলে লোকজনকে মাইকিং করে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া এবং কাগজে কলমে পুনর্বাসন করা হয়। কিন্তু বাস্তব কাজে কর্মে কিছুই নেই।
জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক ও পৌর মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম বেবী বলেন, পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে বসবাসকারী লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। প্লাবিত নিম্নাঞ্চলের মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোলা আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে সরকারি সূত্রমতে, পাহাড় ধসে ২০০৬ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বান্দরবান সদর, রোয়াংছড়ি, লামা, ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় নারী শিশুসহ ৭২ জন লোক নিহত হয়েছে। দ্রুত পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরিয়ে না নিলে পাহাড় ধসে বড় ধরনের প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।