টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কোটি টাকার লবণ, চাষীরা হতাশ

পেকুয়া প্রতিনিধি:
টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কোটি টাকার লবণ। ফলে হতাশ হয়ে পড়েছে পেকুয়ার সাধারণ লবণ চাষীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় পেকুয়া উপজেলার টইটং শীলখালী এবং বারবাকিয়া ইউনিয়ন ছাড়া বাকী ৪টি ইউনিয়ন পেকুয়া সদরের আংশিক, রাজাখালী, মগনামা, উজানটিয়ায় প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও মৌসুমের শুরুতে চাষীরা লবণ উৎপাদন কাজ শুরু করে। লবণ উৎপাদনের শেষ হতে প্রায় এক মাস আগেই টানা বৃষ্টিপাত শুরু হয়। ফলে ভারী বর্ষণে লন্ড ভন্ড হয়ে পানিতে ভেসে গেছে হাজার হাজার একর লবণের মাঠ।

এতে লবণ চাষীরা কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। টানা ভারী বৃষ্টি শুরু হলে লবণের মাঠগুলোতে পানি থৈ থৈ হয়ে যায়। উপজেলার পেকুয়া সদর, মগনামা, রাজাখালী, উজানটিয়া ইউনিয়নের হাজার হাজার একর লবণের মাঠ পানিতে প্লাবিত হয়ে তলিয়ে যায়।

গত বছর লবণের চড়া দাম পাওয়ায় পেকুয়ার কৃষকরা আরো বেশি লবণ চাষের দিকে ঝুকে পড়ছিল। গত বছর প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিকটন লবণ উৎপাদন করলেও চলতি মৌসুমে উপজেলার পেকুয়া সদর, মগনামা, রাজাখালী, উজানটিয়া ইউনিয়নে গত বছর লবণের চদা দাম পাওয়ায় অনেকে লোভের বশীভুত হয়েই লবণ চাষীরা আরো বেশী লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যে চাষাবাদ শুরু করেছিল। হঠাৎ ভারী বৃষ্টি লবণ চার্ষীদের সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে।

এদিকে উজানটিয়া এলাকার করিমদাদ জানান ঋণ নিয়ে ৮০ শতক জমি বর্গা নিয়ে লবণ চাষ করেছিলাম, বৃষ্টির কারণে আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমি এখন ঋণের টাকা কিভাবে পরিশোধ করব?

স্থানীয় চার্ষীরা জানান, হঠাৎ বৃষ্টি হবে তা আমরা বুঝতে পারিনি। মাঠে মজুদ করা লবণগুলো রক্ষা করা যায়নি। এবার লোকসান নিয়ে বাড়ী ফেরা ছাড়া আর কোন পথ নেই। এ ছাড়াও তিনদিনের ভারী বর্ষণে পেকুয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে বোরো চাষের ফসলি জমি, বসতিসহ দুইটি ইটভাটা সম্পুর্ণ তলিয়ে গেছে।

টইটং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি ছড়ার ঢলের পানি লোকালয়ে নেমে আসায় ওই ইউনিয়ন ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ওই দুই ইউনিয়নের প্রায় ৭০০ একর ফসলি জমির বোরো ক্ষেত, তিন শতাধিক বসতি ঢলের পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হয়েছে।

এছাড়াও বারবাকিয়া কাদিমাকাটা এলাকার হাজী মৃত কবির আহমদের পুত্র শাহাবুদ্দীনের মালিকানাধীন টইটংয়ের সোনাইছড়ি এলাকায় অবস্থিত এমপিএম ইটভাটা ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাডীয়াখালী এলাকায় কবির আহমদের পুত্র মহসিনের মালিকানাধীন এসবিএম ইটভাটা ঢলের পানিতে সম্পুর্ণ তলিয়ে গেছে।

এমপিএম ইটভাটার মালিক শাহাবুদ্দীন বলেন, আমার ইটভাটা সোনাইছড়ি ছড়ার মুখে অবস্থিত হওয়ায় বানের পানি সম্পুর্ণ আমার ইটভাটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে আমার ইটভাটার চুল্লির আগুন নিভে যাওয়াসহ প্রায় ২০ লক্ষ কাচা ইট বিনষ্ট হয়েছে। এই প্লাবনে আমার প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এসবিএম ইটভাটার মালিক মহসিন বলেন, আমার ইটভাটা প্লাবিত হয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

টইটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সোনাইছড়ি ছড়া দিয়ে পাহাড়ী ঢলের পানি নেমে এসে টইটং ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের একাংশ তলিয়ে গেছে। পাহাড়ি এলাকায় চাষাবাদের জন্য দেয়া গোদা (বাঁধ) ভেঙ্গে এই প্লাবন হয়েছে। বৃষ্টি কমলে ছড়ায় পুণঃরায় গোধা দিয়ে ঢলের পানি লোকালয়ে আসাতে না পারে মত ব্যবস্থা করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন