তাইন্দং-এ হামলার প্রতিবাদে দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজধানী সিউলে বিক্ষোভ

Buddhist NGO Activist delivers solidaity speech

পার্বত্য নিউজ রিপোর্ট:
দক্ষিণ কোরিয়ায় বসবাসরত পাহাড়িরা গতকাল ১৯ আগস্ট সোমবার তাইন্দং-এ হামলার প্রতিবাদে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে এক বিক্ষোভের আয়োজন করেছে। জুম্ম পিপল্স নেটওয়ার্ক-কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়ার মানবাধিকার ও সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর সহযোগিতায় প্রেস কনফারেন্সের নামে এ বিক্ষোভের আয়োজন করে।

এ সময় জেপিএনকে-র নেতাকর্মীরা বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যানার প্রদর্শন করে ও শ্লোগান দেয়। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় সব কটি টিভি চ্যানেল ও মিডিয়ার প্রতিনিধিরা এই বিক্ষোভ কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন বলে ইউপিডিএফ কর্তৃক সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বার্তায় দাবী করা হয়।

বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন জেপিএনকের সাধারণ সম্পাদক ছোট চাকমা, সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা রনেল চাকমা, এডভোকেটস ফর পাবলিক ইন্টারেস্ট ল-এর সভাপতি কিম জং চল (Kim Jong Chol), স্বনামধন্য বুড্ডিস্ট উন্নয়ন এনজিও সংগঠন লোটাস ওয়ার্ড এর পরিচালক মিস মিন জং হি (Min Jong Hee) ও জেপিএনকের সদস্য ধীমান ত্রিপুরা।

পরে তারা বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয়। সঙ্গীতা চাকমা, পার্ক ইয়ং সান ও এটর্নি কিম জং চল(Park Yeong Sun and Attorney Kim Jong Chol) দূতাবাসের কর্মকর্তার হাতে স্মারকলিপিটি তুলে দেন। তার আগে স্মারকলিপির ইংরেজী বয়ান পড়ে শোনান জেপিএনকের সহসভাপতি রত্নকীর্তি চাকমা ও কোরিয়ান ভাষায় পড়ে শোনান চুন হো ন্যাম(Chun Ho Nam)| জেপিএনকেসহ বিশটি সংগঠন ওপেন লেটার নামে উক্ত স্মারকলিপিটি অনুমোদন করে।

স্মারকলিপিতে তাইন্দং হামলাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়, ‘এই হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। একজন বাঙালিকে অপহরণের গুজব শুনে সেটলাররা এই আক্রমণ শুরু করে। এ বিষয়ে অবগত থাকা সত্বেও বিজিবি ও পুলিশ জুম্মদের রক্ষার জন্য আগাম কোন ব্যবস্থা নেয়নি, যদিও তারা এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, এই হামলা ছিল মাটিরাঙ্গা এলাকায় ২০১৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত জুম্ম জনগণের উপর পঞ্চম হামলা ‘

স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, ‘এ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশন্যাল, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ মানবাধিকার রিপোর্ট ২০১২ এবং অন্যান্য নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো স্বীকার করেছে যে, ‘১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির আগে জুম্মদের উপর ১৩ বার সংগঠিত সাম্প্রদায়িক হামলা বা গণহত্যা সংঘটিত হয় এবং চুক্তির পর ছোট বড় অসংখ্য হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সব ঘটনায় হাজার হাজার জুম্ম নিহত ও তাদের শত শত ঘরবাড়ি পুড়ে যায়।

আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, বাংলাদেশ সরকার ও আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ করতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে, যদিও তারা এ বিষয়ে অবগত যে, জুম্ম ও অজুম্মদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সাম্প্রদায়িক সংঘাতে পরিণত হতে পারে। হামলাকারীদের কাউকে শাস্তি দেয়া হয়নি। অপরাধীদের দায়মুক্তির সংস্কৃতি বাংলাদেশে এমন এক কাঠামোগত সমস্যার সৃষ্টি করেছে, যা অপরাধীদেরকে বিনা বিচারে পার পেতে ও অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে সাহায্য করে।’

স্মারক লিপির শেষে তারা চার দফা দাবি উত্থাপন করেন। এগুলো হলো:  অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের উপর সহিংসতা বন্ধের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ; সাম্প্রদায়িক হামলার সাথে জড়িতদের শাস্তি দেয়া ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া; পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা ও বাঙালি সেটলারদেরকে সরিয়ে এনে সমতলে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসন করা; এবং জাতিসংঘের আদিবাসী অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ও পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগেণর আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের স্বীকৃতি প্রদান করা।
 
যেসব সংগঠন স্মারকলিপিটি অনুমোদন করে সেগুলো হলো: Jumma People’s Network-Korea(JPNK), Buddhist Solidarity for Reform(BSR), Engaged Buddhist Monks and Nuns Association in Korea), Gimpo Immigrant Center, Maha Council for Supporting Migrants, Imagination For International Solidarity, Advocate for Public Interest Law(APIL), People’s Solidarity for Participatory Democracy(PSPD), Buddhist Coalition for Economic Justice, Eco-Buddha, Indramang, The Good Friends, The Korean monks group for clean sangga, Korea Youth Buddhist Association, Human Asia, Share The World , Buddhist Academy, Korea Institute For Religious Freedom, Gyujassi Church, The refuge PNAN.

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন