দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজ ছাত্রাবাস: নামে তালপুকুর কাজে ঘটি ডোবে না

12099_564364476993373_1299279142_n

দীঘিনালা প্রতিনিধি:

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির  দীঘিনালা উপজেলার একটি মাত্র কলেজ, দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজ। ১৯৮৪ সালে উপজেলার লারমা স্কয়ার সংলগ্ন মনোরম পরিবেশে কলেজটি স্থাপন করা হয়। এই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার
ছাত্র-ছাত্রীরা প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক লেভেলের পড়াশুনা শেষ করে উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি লেভেলে পড়ার জন্য ভর্তি হয় এই কলেজটিতে।

উপজেলার অনেক দুর্গম এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশুনা করতে আসে। এমন কিছু এলাকার শিক্ষার্থী আছে যাদের প্রতিদিন ২০-২৫ কিলোমিটার রাস্তা যাতায়াত করতে হয়। এসব কিছু চিন্তা করে দীঘিনালার থেকে দেড় কিলোমিটার সামনে জামতলী এলাকায় একটি কলেজ ছাত্রাবাস স্থাপন করা হয়। খাগড়াছড়ি আসনের তৎকালীন সাংসদ ওয়াদুদ ভূইয়া এবং জেলা পরিষদের যৌথ উদ্যোগে ২০০২ সালের মার্চ মাসে এই ছাত্রাবাসটি নির্মাণ করা হয়।

ছাত্রদের বসবাসের সকল সুযোগ সুবিধার কথা চিন্তা করে নির্মিত হয়েছিলো দীঘিনালা কলেজ ছাত্রাবাস। ছাত্রদের থাকা এবং পড়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিলো একটি আধুনিক ভবন,খাওয়া-দাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছিলো একটি
কিচেন, বাথরুম, গোসলখানা এবং শিক্ষকদের জন্য আরেকটি ভবন।

প্রায় কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এই ছাত্রাবাস এখন আর বসবাস উপযোগী নেই। কারণ প্রথম থেকেই এই ছাত্রাবাস ছাত্রদের জন্য ব্যবহার করতে উৎসাহী করা হয়নি। অনেক ছাত্র এখন জানেই না যে, তাদের কলেজে একটি ছাত্রাবাস আছে। বর্তমানে এখানে ছাত্রদের পরিবর্তে থাকছে কিছু স্থানীয় পাহাড়ি পরিবার। কথা হল তাদের সাথে, বলল- নির্মাণের পর থেকেই এভাবে পরে থাকতে দেখে তারা থাকছে। শিক্ষকদের জন্য গড়ে তোলা ভবনটি দখল করে দোকান দিচ্ছেন আরেকটি উপজাতি পরিবার।

চরম অব্যাবস্থাপনা, গাফলতি ও দায়িত্বহীনতার জন্য শিক্ষার্থীরা এই ছাত্রাবাসটির সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে ও হচ্ছে। প্রায় সকল সুযোগ-সুবিধা সহকারে ছাত্রাবাসটি নির্মিত হলেও, প্রথম থেকেই ছিল বিদ্যুৎ সমস্যা।
বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার কারনে পানি ও জ্বালানি সংকট সৃষ্টি হওয়ায় ছাত্রাবাসটির সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে পারেনি ছাত্ররা। তাই প্রথম দিকে দুই-একজন ছাত্র থাকলেও, পরবর্তীতে কেউ আর ছাত্রাবাসটিতে থাকার উৎসাহ দেখায়নি।

এই ব্যাপারে দীঘিনালা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা চরম অব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করে জানান, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে। দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মন্টু বিকাশ চাকমার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সাথে অনেকবার আলোচনা করা হয়েছে এবং আগামি অর্থ বছরেই এর সংস্কারসহ যাবতীয় কাজ করা হবে।

দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজের বেশ কয়েকজন ছাত্র তাদের অসন্তুষ্টি ও আক্ষেপের কথা জানান এ প্রতিনিধিকে। এর মধ্যে আশিষ ত্রিপুরা বলেন, “আমরা অনেক দূর থেকে এই কলেজে পড়ালেখা করতে আসি। একটি ছাত্রাবাস থাকলে আমাদের জন্য এত অসুবিধা হতো না। অন্য কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ছাত্রাবাস না থাকার দরুণ অনেক কষ্ট করে। আর আমাদের ছাত্রাবাস থেকেও কষ্ট করতে হচ্ছে।

এলাকাবাসীর কন্ঠেও ক্ষোভের সুর। তারা জানালেন, এত বছর ধরে এই সম্পদটি অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে। এর ব্যবহার করার কোন উদ্যোগ সরকার ও কলেজ প্রশাসন কেন গ্রহন করছে না তা তাদের বোধগম্য নয়।

তবুও সরকার, জেলা পরিষদ ও কলেজ কতৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে কোটি টাকার
ছাত্রাবাসটি আবার ব্যাবহার উপযোগী হবে, এই আশাবাদ সকলের।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন