দুর্দান্ত জয়ে আবারো শীর্ষে উঠে গেল আর্সেনাল

fec-image

প্রিমিয়ার লিগে ব্রেন্টফোর্ডের মাঠে রোববার ৩-০ গোলে জিতেছে আর্সেনাল। গোল তিনটি করেছেন উইলিয়াম সালিবা, গ্যাব্রিয়েল জেসুস ও ফাবিও ভিয়েইরা।

টানা পাঁচ জয় দিয়ে লিগ মৌসুম শুরু করার পর শেষ ম্যাচে ম্যানেচস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে হেরে মাটিতে নেমেছিল আর্সেনাল। তবে সেই হারের চাপকে পরের ম্যাচেই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিল এমিরেটসের দলটি। ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেয় আর্সেনাল। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত তারা।

সে যাত্রায় না পারলেও আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকা আর্সেনাল ১৭তম মিনিটে এগিয়ে যায়। বুকায়ো সাকার দারুণ এক কর্নারে হেডে ব্রেন্টফোর্ডের জালে বল জড়িয়ে আর্সেনালকে প্রথম লিড এনে দেন ফরাসি ডিফেন্ডার উইলিয়াম সাবিলা। লিগে এই ডিফেন্ডারের এটি দ্বিতীয় গোল।

গোলের পর আরও ধারালো হয়ে ওঠে আর্সেনাল আক্রমণভাগ। স্বাগতিক ব্রেন্টফোর্ডের নাভিশ্বাস তুলে ব্যবধান দ্বিগুন করতে আর্সেনালের সময় লাগে মাত্র ১১মিনিট। গ্রালিট শাকার কাছ থেকে বল পেয়ে মার্কারকে ফাঁকি দিয়ে দারুণ এক হেডে বল জালে পাঠান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড গ্যাব্রিয়েল জেসুস।

ম্যাচে জেসুসের গোলের মুহূর্তটা ছিল বিশেষ! কারন গোল করার পর আর্সেনালের এই ফরোয়ার্ড নিজের স্বভাবসুলভ ‘ফোন কল’ উদযাপন এর পাশাপাশি ‘কর্নার ফ্ল্যাগ’ এর সামনে গিয়ে নেচে উদযাপন করেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। এ গোলের উদযাপন দিয়েই যে তিনি জাতীয় দল সতীর্থ ভিনিসিয়ুসের পাশে দাঁড়ালেন। এবং গোলটি তিনি উৎসর্গ করলেন রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে।

সাম্প্রতিক সময়ে গোল উদযাপন নিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আছেন ভিনিসিয়ুস। কদিন আগে গোলের পর তাঁর নেচে উদযাপনকে বানরের সঙ্গে তুলনা করেন স্পেনের ফুটবল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (এইএএফ) প্রধান পেদ্রো ব্রাভো। পরে অবশ্য ক্ষমাও চান ব্রাভো। তিনি দাবি করেন, তার মন্তব্যটি ছিল কেবল ‘রূপক অর্থে।’

কিন্তু তার এমন বর্ণবাদী মন্তব্যের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে ফুটবল দুনিয়া। ভিনিসিয়ুসের সমর্থনে তার পাশে দাঁড়ান ক্লাব, জাতীয় দলের সতীর্থ, এমনকি অন্য দলের খেলোয়াড়রাও। বিশেষ করে পেলে-নেইমারসহ ব্রাজিলের বর্তমান ও সাবেক অনেক তারকা ভিনির পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর উদযাপনকে সমর্থন করেন। ভিনিকে সমর্থন এবং বর্ণবাদী আচরণের প্রতিবাদের ধারাবাহিকতাতেই এবার গোলের পর তাঁর মতো করে উদযাপন করলেন জেসুস। ম্যাচ শেষে উদ্যাপন নিয়ে জেসুস বলেছেন, ‘এই উদযাপন আমার বন্ধু ভিনির জন্য।’

দুই গোলে এগিয়ে থাকা আর্সেনালের পারফরম্যান্স ছিল দারুণ গোছানো। বিরতির আগে আর কোনো গোল না পেলেও আর্সেনালের দাপটেই শেষ হয় প্রথমার্ধ।

বিরতির পর আক্রমণের ধারা থেকে সরে আসেনি আর্সেনাল। ব্যবধান ৩-০ করতেও ৪ মিনিটের বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি তাদের। দারুণ ফিনিশিংয়ে ব্যবধান ৩-০ করেন ফাবিও ভিয়েইরা। এই গোলেরও যোগানদাতা ইংলিশ উইঙ্গার বুকায়ো সাকা। প্রিমিয়ার লিগে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেই আর্সেনালের হয়ে প্রিমিয়ার লিগের অভিষেক গোল পেয়ে গেলেন পর্তুগিজ মিডফিল্ডার ফাবিও ভিয়েইরা।

একের পর এক গোল হজম করে ম্যাচের মোমেন্টামও ততক্ষণে হারিয়ে ফেলে ব্রেন্টফোর্ড। অন্যদিকে বলের দখল রেখে দাপট দেখিয়ে একের পর এক সুযোগ তৈরি করতে থাকে আর্সেনাল। ব্রেন্টফোর্ড গোলরক্ষক বাধা হয়ে না দাঁড়ালে জয়ের ব্যবধানটা আরও বড় করতে পারত মিকেল আর্তেতার দল।

ম্যাচের ফল নিয়ে তখন কোনো সংশয় ছিল না। চার মিনিট যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে ফাবিও ভিয়েইরার বদলি হিসেবে মাঠে নামলেন ইথান নওয়ানেরি। সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসের পাতায় নাম উঠে গেল আর্সেনালের তরুণ এই মিডফিল্ডারের। প্রিমিয়ার লিগে ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে অভিষেক হয় মাত্র ১৫ বছর বয়সী নওয়ানেরির। একসঙ্গে নাম লেখান তিন তিনটি রেকর্ডে।

প্রিমিয়ার লিগে আর্সেনালের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় এখন নওয়ানেরি; ১৫ বছর ১৮১ দিন বয়সে ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগে মাঠে নামলেন তিনি। এতদিন আর্সেনালের কম বয়সী খেলোয়াড়ের রেকর্ডটি ছিল জ্যাক উইলশেয়ারের, ১৬ বছর ২৫৬ দিন।

প্রিমিয়ার লিগের ১৬ বছরের কম বয়সী প্রথম খেলোয়াড়ও নওয়ানেরি, আগের সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলারের রেকর্ড ছিল লিভারপুলের হার্ভে এলিয়টের। ২০১৯ সালের মে মাসে ফুলহ্যামের বিপক্ষে প্রিমিয়ার লিগে তার অভিষেক হয়েছিল ১৬ বছর ৩০ দিন বয়সে।

এমিরেটস স্টেডিয়ামের দলটির হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড়ের আগের রেকর্ডটা ছিল সেস ফাব্রেগাসের। ২০০৩ সালে লিগ কাপে তিনি খেলতে নেমেছিলেন ১৬ বছর ১৭৭ দিন বয়সে।

সবগুলো রেকর্ডই নিজের করে নিলেন ২০০৭ সালে জন্ম নেওয়া নওয়ানেরি। নাইজেরিয়ান বাবা-মায়ের সন্তান এই ফুটবলার ৯ বছর বয়সে যোগ দেন আর্সেনালের একাডেমিতে। খেলেন তাদের বয়সভিত্তিক দলে। এই মাসে প্রথমবার মূল দলে ডাক পান তিনি। এবার হয়ে গেল স্বপ্নের অভিষেক।

৩-০ গোলের এ জয়েই ম্যানচেস্টার সিটিকে সরিয়ে আবার শীর্ষস্থানের দখল নিল আর্সেনাল। ৭ ম্যাচে ৬ জয় ও ১ হারে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে আর্সেনাল। আর সমান ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট করে নিয়ে পরের দুটি স্থানে ম্যানচেস্টার সিটি ও টটেনহ্যাম হটস্পার।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আর্সেনাল, খেলা, ফুটবল
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন