দূর্গম ডাকভাঙ্গা-মৈষকুম গ্রামে করোনার টিকা নিবন্ধন ক্যাম্প

fec-image

চারিদিকে নদী ও পাহাড় ঘেরা দৃষ্টিনন্দন গ্রাম ডাকভাঙ্গা। দেখতে নয়নাভিরাম হলেও উন্নয়নের ছোঁয়া বঞ্চিত গ্রামবাসীর দূর্ভোগের সীমা নেই। নদী পারাপারের জন্য নেই সেতু। গ্রামের কোথাও দেখা মিলবে না পাকা সড়কের। নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। নেটওয়ার্ক না থাকায় আধুনিক যুগে মানুষের নিত্য সঙ্গী মুফোঠোনও এ গ্রামে অচল। চলমান বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ সম্পর্কেও এ গ্রামের মানুষ ছিলো অসচেতন। কক্সবাজারের রামু উপজেলার এমনই দুটি পিছিয়ে পড়া গ্রাম ডাকভাঙ্গা ও মৈষকুম। অবহেলিত এ দুটি গ্রামের বাসিন্দারা করোনা ভাইরাস প্রতিষেধক টিকা বিনামূল্যে নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছেন।

জানা গেছে, পিছিয়ে জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ডাকভাঙ্গা বাংলাদেশ’। এ উদ্যোগের ফলে টিকা পেতে দূর্ভোগ আর উৎকন্ঠার অবসান হচ্ছে ২ গ্রামের বাসিন্দাদের। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে করোনাভাইরাস টিকার বিনামূল্যে নিবন্ধন ক্যাম্প আয়োজন করা হয়েছে। ১৬ আগস্ট শুরু হওয়ায় এ ক্যাম্প চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের দূর্গম পাহাড়ি জনপদ ডাকভাঙ্গা ও কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের মৈষকুম গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা এ কর্মসূচির ফলে টিকা পাওয়ার সুযোগ পাবে।

কাউয়ারখোপ মৈষকুম ওসমান সরওয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়স্থ ডাকভাঙ্গা বাংলাদেশ এর এরিয়া অফিসে সোমবার (১৬ আগস্ট) সকালে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন-ডাকভাঙ্গা বাংলাদেশ এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মোঃ জুয়েল তালুকদার। এসময় ডাকভাঙ্গা বাংলাদেশ এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা এনাম রেজা খান, মৈষকুম ওসমান সরওয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহ সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য আবদুস শুক্কুর, ডাকভাঙ্গা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সলিম উল্লাহ, মৈষকুম ওসমান সরওয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ডাকভাঙ্গা বাংলাদেশ এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মোঃ জুয়েল তালুকদার জানিয়েছেন- দূর্গম ও সুবিধা বঞ্চিত জনপদ ডাকভাঙ্গা ও মৈষকুম গ্রামের বাসিন্দারা মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনার কারণে করোনাভাইরাসের টিকার নিবন্ধন করতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছিলো। তাই গ্রামবাসীকে অনলাইনে সুরক্ষা এ্যাপসের মাধ্যমে বিনামূল্যে করোনা ভাইরাসের টিকা’র নিবন্ধন করার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে ডাকভাঙ্গা বাংলাদেশ। এ কর্মসূচির আওতায় গত ৩দিনে ডাকভাঙ্গা ও মৈষকুম গ্রামের তিন শতাধিক নারী-পুরুষের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি আরো জানান, এ দুটি গ্রামে ডাকভাঙ্গা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ‘লিটল ডক্টর’ টিম রয়েছে। এসব টিম এখানকার পাহাড়ী জনপদে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গ্রামবাসীকে করোনাভাইরাস রোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে। যা সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে।

রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া জানান- অবহেলিত এসব গ্রামের অধিকাংশ মানুষের স্মার্ট ফোন নেই। এ কারণে সুরক্ষা এ্যাপসের মাধ্যমে টিকা নিবন্ধন করার সুযোগ এখানকার লোকজনের নেই বললেই চলে। তাই ডাকভাঙ্গা বাংলাদেশ কর্তৃক এসব গ্রামের জনসাধারণকে বিনামূল্যে টিকা নিবন্ধন করে দেয়াটা মানবিক ও সময়োপযোগি উদ্যোগ। এরফলে সুবিধা বঞ্চিত মানুষ যেমন উপকৃত হবে, তেমনি স্বাস্থ্য বিভাগ তথা দেশও উপকৃত হবে। তিনি প্রত্যেক নিবন্ধনকারী ব্যক্তিকে নিজ নিজ মোবাইল ফোন নাম্বার সহ দেয়ার জন্য আয়োজকদের প্রতি অনুরোধ জানান।

মৈষকুম ওসমান সরওয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহ সভাপতি, সাবেক ইউপি সদস্য আবদুস শুক্কুর জানান-রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের মৈষকুম এবং কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ডাকভাঙ্গা গ্রামে ডাকভাঙ্গা বাংলাদেশ নামে একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠিত দুটি বেরসকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। এরফলে গ্রাম দুটিতে দরিদ্র-সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা মানসম্মত শিক্ষা অর্জনের সুযোগ পাচ্ছে। এখন এ সংগঠনের উদ্যোগে এলাকার লোকজনকে করোনা ভাইরাসের টিকার নিবন্ধন করা হচ্ছে। না হলে লোকজন টিকা নিতে চরম দূর্ভোগের শিকার হতো। কারণ ডাকভাঙ্গা গ্রামে বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক নেই। মৈষকুম গ্রামেও রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা। একারণে এলাকাবাসী ডাকভাঙ্গা বাংলাদেশ এর এমন মহৎ উদ্যোগে আনন্দিত।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন