নাইক্ষ্যংছড়িতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ ঠেকাতে মাঠে কৃষি কর্মকর্তারা

fec-image

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে বাদামী গাছ ফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণে ধান ক্ষেত ঝলসে যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর থেকে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন। কৃষি কর্মকর্তারা প্রত্যেকটা এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে কৃষকদের হাতে কলমে পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচার পদ্ধতি শিখিয়ে দিচ্ছেন।

মঙ্গলকার (২৯ অক্টোবর) সকাল থেকে বাইশারী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস ও উদ্ভিদ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল আলম, মোঃ ইয়াছিন ও শহিদুল আলম পোকার আক্রমণে ধান ক্ষেত পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য স্বচক্ষে দেখেন। এ সময় কিভাবে পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়, তা হাতে কলমে কৃষকদের শিখিয়ে দেন।

কৃষক ক্যাভাই মার্মা জানান, তিনি ৪০ শতক জমিতে ধান চাষ করেছেন। কিন্তু ধানের শীষ বের হওয়ার সাথে সাথেই হঠাৎ করে রোগ দেখা দেয়। প্রথমে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক ছিটিয়েছেন তিনি। তারপরও কোন সুফল পাননি।

মধ্যম বাইশারী এলাকার বাসিন্দা কৃষক নুরুল আজিম জানান- তিনি ৩০ শতক জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমন কোন রকমেই তিনি বুঝতে পারেননি। হঠাৎ ধানের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাল হয়ে সব ধান জলসে গেছে। বর্তমানে ধান সবে মাত্র শীষ বের হওয়ার পথে। এ অবস্থায় পুরো ধানক্ষেত আস্তে আস্তে ঝলসে গেছে।

কৃষক মনিরুল হক জানান, ১ একর জমিতে তিনি ধান-৫২ ও হাইব্রীট ধান রোপন করেছেন। ফলনও ভাল হয়েছে। কিন্তু শীষ বের হওয়ার পর থেকে পোকার আক্রমন দেখতে পেয়ে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী কিটনাশক ছিটিয়ে কোন রকমে রক্ষা পেয়েছেন। তারপরও তিনি আতংকে রয়েছেন। কারণ হিসেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমার জমিতে কিটনাশক প্রয়োগ করলেও আশপাশের কৃষকরা তাদের জমিতে কিটনাশক প্রয়োগ না করায় আবারো পোকার আক্রমণের শিকার হতে পারে।

কৃষক আবুল হাশেম জানান, এক বিঘা জমিতে চাষাবাদে ব্যয় দাঁড়ায় দশ হাজার টাকা। একদিকে ধানের নায্য মুল্য নেই। লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমান বেশি হওয়ায় বাধ্য হয়েই পোকার আক্রমণ ঠেকাতে কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করিনি।

স্থানীয়রা জানান- এ বছরের মত ধানের রোগ বালাই আার দেখি নাই। সরজমিনে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায় ধান খুব ভাল হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ পোকার আক্রমণে সব শেষ। কৃষি কর্মকর্তারা ধানক্ষেত বাঁচাতে তাদের চেষ্টার কমতি না রাখলেও পোকার আক্রমন থেকে ধান ক্ষেত রক্ষা করতে পারেননি।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস বলেন- চলতি বছরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩ শত ৩৪ হেক্টর জমি। সে অনুযায়ী উক্ত লক্ষ্যমাত্রায় রোপা আমন আবাদ করা হয়েছে। হঠাৎ করে উপজেলার কয়েকটি জায়গায় বাদামী গাছ ফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণে কিছু কিছু ধানক্ষেত নষ্ট হয়েছে। মঙ্গলবার সরেজমিনে পরিদর্শন করে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠন ও কৃষকদের সচেতনতা মূলক সভাসহ নানা প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তিনি। আশা করছি কৃষকেরা সচেতন হলে পোকা দমন সম্ভব হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ, গণমাধ্যম, পোকার আক্রমণ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন