নাইক্ষ্যংছড়ির আলোচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা তোফায়েল গ্রেফতার

2 copy

নুরুল আলম সাঈদ, নাইক্ষ্যংছড়ি:
বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার আলোচিত উপজেলা চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমদ দীর্ঘ ১ বছর ৩ মাস পলাতক থাকার পর অবশেষে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে গ্রেফতার হয়েছে । রামুর বৌদ্ধ মন্দির হামলার মূল পরিকল্পনাকারী অভিযোগে তোফায়েলকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানায় ।

জানা যায়, গতকাল ২৮ নভেম্বর সকাল ১১.০০ ঘটিকায় তোফাইল আহমদ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কার্যালয়ে উপস্থিত হন । এর পর দুপুর ১২.০০ টায় নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম পিপি.এম সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে উপস্থিত হন । থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম আসার সংবাদে তোফায়েল পালাতে চেষ্টা করে । তোফাইল ওসি রফিককে আড়াল করে পালিয়ে যেতে চায় । কিন্তু ওসি সামনে এগিয়ে গিয়ে তোফায়েলকে বগল আগলে ধরেন । ধরার পর তিনি ওসিকে সালাম দিয়ে বলেন, আমি উপজেলা চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমদ । ওসি জবাবে, ঠিক আছে ভিতরে আসেন বলে উপজেলা চেয়ারম্যানের রুমে নিয়ে আটকে রাখেন । এসময় সে ১৮ নভেম্বর বিভিন্ন মামলায় হাইকোর্টের জামিন আদেশ আছে পুলিশ কর্মকর্তাদের জানান।

আধ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার  তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার ডিবির অফিসার ইনচার্জ মনজুরুল আলম ,কক্সবাজার টুরিষ্ট পুলিশের অফিসার ইনচার্জ জাকির হোসেন মাহমুদ, রামু থানার অফিসার ইনচার্জ অপ্পেলা রাজু নাহা ,নাইক্ষ্যংছড়ির অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম পিপি.এম এর নেতৃত্বে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে গ্রেফতার করে কক্সবাজার ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ।

বিশাল এ অভিযানের সময় রামু, নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজার ডিবি ও পুলিশের ১১টি পিকাপ, মাইক্রো নিরাপত্তায় ও নজরদারীতে ছিল । এরমধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ির প্রবেশ মূখে কাউয়ার কূপ এলাকায় ১টি, হাসপাতাল গেইটে ১টি, বাজার এলাকায় ১টি, উপজেলা পরিষদ এলাকায় বাকী গাড়িগুলি পুলিশ ফোর্স নিয়ে অবস্থান করে । জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুর ১ .০০ ঘটিকায় তোফায়েলকে গ্রেফতার করে কক্সবাজার ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম পিপিএম জানান, রামুর বৌদ্ধ মন্দির হামলার মামলায় তোফায়েল আহমদকে গ্রেফতার করা হয়েছে । পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশেই তাকে গ্রেফতার করা হয় । নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ জামিল বলেন, সকালে তিনি আমার অফিসে এসে আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন । এবং আমি সকালে উপজেলা পরিষদের অনুষ্ঠিত হওয়া বিজয় দিবসের প্রস্তুতি সভায় তাকে অংশ গ্রহণ না করতে অনুরোধ করি এবং বান্দরবান জেলা প্রশাসক ও নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জকে তোফায়েল আহমদ আসার খবর জানায় । তিনি আরও জানান, তোফাইল রামু থানার দায়ের করা বৌদ্ধ মন্দির হামলার ৩৯/২০১২-মামলার সন্দেহভাজন আসামী । তিনি ওই মামলা থেকে গত সপ্তাহে ২৪ দিনের জন্য আগাম জামিন নিয়েছেন এমন একটি কাগজ আমাকে দেখান ।

তোফায়েল আহমদের পারিবারিক সূত্রের দাবি, রাজনৈতিক প্রতি হিংসার শিকার হয়েছেন তোফাইল আহমদ। রামুর বৌদ্ধ বিহারে অগ্নি সংযোগ ও বৌদ্ধ পল্লীতে হামলা ঘটনায় তাকে উদ্দেশ্য মূলক তাকে আসামি করা হয়েছে। ১৮ নভেম্বর বিভিন্ন মামলায় হাইকোর্টের জামিন আদেশ রয়েছে।

এদিকে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান তোফাইল আহমদ দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়  উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হামিদা চৌধুরীকে । পরে তাকে অপসারণ করা হয়। অপসারিত হওয়ার পর গত ১৩ জুন সকাল ১১ ঘটিকায় অপসারিত তোফাইল আহমদের স্ত্রী জেসমিন আক্তার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দরখাস্তের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত বাস ভবনের চাবি বুঝিয়ে দিয়ে বাসভবন ত্যাগ করেন । তবে গত ২০ জুন উক্ত বহিষ্কারাদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট।

উল্লেখ্য, বিগত ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কালো রাত্রিতে কক্সবাজার জেলার রামু, টেকনাফ, উখিয়া, কক্সবাজার সদরের বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলা, ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায় একদল দুর্বৃত্ত । ফেসবুকে একটি কোরআন অবমাননার ছবি ট্যাগ করাকে কেন্দ্র করে এ হামলার ঘটনা ঘটে । এ সময় রামুর বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে আগুন দিয়ে লুটপাট চালানো হয় । রামু থানায় দায়েরকৃত মামলায় আসামী করা হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা তোফায়েল আহমদকে । ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিল  নাইক্ষ্যংছড়ির এই উপজেলা চেয়ারম্যান । ঘটনার  পর দেড় মাস পলাতক থাকার পর গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের মঞ্চে বীরর্দপে উপস্থিত হয়ে, সালাম গ্রহণ শেষে পূনরায় পালিয়ে যান । ঐ দিন পুলিশ-র‌্যাব ও ডিবি তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে আটক করতে পারে নাই । এছাড়া তার বাসায় তিন দফায় শতাধিক পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি নিয়ে অভিযান চালিয়ে আটক করতে ব্যর্থ হন ।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন