নানা সমস্যায় জর্জরিত পানছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

HOS PIC

শাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি প্রতিনিধি:

নানা সমস্যায় জর্জরিত জেলার পানছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। দেখা গেছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের দেয়ালগুলো বর্ষার পানিতে ভিজে বিবর্ণ হয়ে শ্যাওলার সবুজ রং ধরেছে। মেনটেইন্যান্স বিভাগের হরিলুটের কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেয়ালগুলোর এই বেহাল দশা বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকের অভিযোগ।

মেনটেইন্যান্স বিভাগের কাজ চলাকালে কোন ধরনের তদারকি না থাকা নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নিজেদের মনগড়া মত দীর্ঘ বছর যাবত নামে মাত্র কাজ করে উচ্চ পদস্থদের ম্যানেজ করে এই হরিলুট হচ্ছে বলে অনেকের ক্ষোভ।

এদিকে পানছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অতি মূল্যবান এক্সরে মেশিনটি দীর্ঘ বছর অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে বলে জানা গেছে। লো-ভোল্টেজের গ্যাড়াকলে নাকি দীর্ঘ বছর এর কার্যক্রম বন্ধ। অথচ স্বাস্থ্য বিভাগের নিজস্ব জেনারেটর, নিজস্ব ইলেট্রিশিয়ান ও নিজস্ব ট্রান্সফরমার থাকা সত্বেও লো-ভোল্টেজকে দায়ী করা বুমেরাং বলে ভুক্তভোগীদের দাবী।

উন্নত চিকিৎসা ইউনিট না থাকায় ঠিকমত চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেন না পানছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডেন্টাল সার্জন ডা: রূপসী চাকমা। সরেজমিনে দেখা যায়, ডা. রূপসী চাকমার অফিস কক্ষে একখানা চেয়ার আর একটি টেবিল। নেই কোন ডেন্টাল চেয়ার। লক্ষ লক্ষ টাকা মূল্যের এক্সরে মেশিন অকেজো অবস্থায় ফেলে রাখলেও একটি ডেন্টাল চেয়ারের ব্যাপারে এই বিভাগের কোন মাথা ব্যাথা নেই। অথচ দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসা ছোট ছোট বাচ্চাদের এক হাতে টর্চ মেরে অন্য হাতে চিকিৎসা দিচ্ছেন ডা: রূপসী। তার সাথে আলাপকালে কোন ক্ষোভ প্রকাশ না করলেও শুধু বললেন একটি ডেন্টাল চেয়ার হলে নিজের মন মতো করে চিকিৎসা দেয়া যেত।

দীর্ঘ বছর আগে ডা. শহীদ তালুকদার ও ডা. জয়া চাকমার আগমনে পানছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা ছিল জেলার সেরা। তাদের বদলীর পর থেকেই অপারেশন থিয়েটারের যন্ত্রপাতিতে ধরেছে মরিচা আর অপারেশন থিয়েটার হয়েছে ভুতুড়ে ঘর। এদিকে সার্জারী ও জ্ঞাইনী বিভাগে কোন ডাক্তার না থাকায় ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে যোগদানকারী জুনিয়র কনসালটেন্ট এ্যানস্থেসিয়া ডা: শরীফ মো: গাউসুল আকবর কাটাচ্ছে অলস সময় । সার্জারী ও জ্ঞাইনী বিভাগে ডাক্তার ছাড়া একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট এ্যানস্থেসিয়া অত্র কমপ্লেক্সে দেওয়ার যুক্তিকতা খুজে পাচ্ছেন না অনেকেই।

এসব ব্যাপারে পানছড়ি থানা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মো: নাসির উদ্দিনের সাথে আলাপকালে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে হলে এখানে ও.টি ইউনিট, ডেন্টাল ইউনিট, এক্সরে মেশিন চালু ও লো-ভোল্টেজ সমস্যা সমাধান করা অবশ্যই প্রয়োজন। এসব সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে তিনি উপরস্থ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন বলে জানান।

প্রত্যন্ত সীমান্ত ঘেঁষা পানছড়ি উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের লোকসংখ্যা প্রায় তেষট্টি হাজার। এখানে বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও বেশীর ভাগই অকার্যকর। দীর্ঘ পাহাড়ী পথ পাড়ি দিয়ে খেঁটে খাওয়া পরিবারের আবাল-বৃদ্ধ -বনিতাদের চিকিৎসা সেবার শেষ ঠিকানা পানছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। শেষ ঠিকানায় এসে যদি ঠিকমত গাইনী সেবা, এক্সরে ও সার্জারীসহ বিভিন্ন সেবা না পাওয়া মানে তীরে এসে তরী ডুবা। চিকিৎসা সেবা ঘরে ঘরে পৌছে দিতে সরকারের কড়া নির্দেশনা থাকলেও পানছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে ডাক্তার সংকটসহ ও নানাবিধ সমস্যা। উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা একটু সু-নজর দিলে এসব সমস্যা সমাধান করা কোন ব্যাপার নয় অভিজ্ঞ মহলের ধারনা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন