নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ঐতিহাসিক জয় বাংলাদেশের, জয়ের নায়ক তানজিম সাকিব

fec-image

নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আজ ন্যাপিয়ারে তৃতীয় একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে স্বাগতিক দলকে ৯ উইকেটে পরাজিত করেছে টাইগাররা। নিউজিল্যান্ডকে মাত্র ৯৮ রানে গুঁড়িয়ে দেয়ার পর বাংলাদেশ ১৫.১ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৯৯ রান করে জয় তুলে নেয়। নাজমুল হক শান্ত ৫১ রান করে অপরাজিত থাকেন। এই প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদের মাটিতেই একদিনের ক্রিকেট জয় পেল বাংলাদেশ। আর সেটা পেল একতরফা ম্যাচে। অবশ্য প্রথম দুটি ম্যাচে জয়ের সুবাদে সিরিজটি নিউজিল্যান্ডই জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়ানোই শুধু নয়, ইতিহাস গড়ার হাতছানিও ছিল এ ম্যাচ!

ছোট রান তাড়ায় সৌম্য সরকার আর এনামুল হক বিজয় আত্মবিশ্বাসী শুরু করেন। তবে তারা ১৫ রান তোলার পর সৌম্যকে ফিরতে হয় চোখে কিছু একটা পড়ে সমস্যা হওয়ায়। ৪ রান করে উঠে যান সৌম্য।

এরপর মারমুখী ব্যাটিং শুরু করেন বিজয় আর নাজমুল হোসেন শান্ত। ৫০ বলের জুটিতে ৬৯ রান তুলে তারা জয় বলতে গেলে নিশ্চিত করে ফেলেন। জয় থেকে ১৫ রান দূরে থাকতে খোঁচা মেরে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়ে আসেন বিজয়। ৩৩ বলে ৩৭ রানের ইনিংসে ৭টি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি।

অধিনায়ক শান্ত জয়সূচক রান নেওয়ার পাশাপাশি ফিফটিও পূরণ করেন। ৪২ বলে ৮ চারের সাহায্যে ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ১ রানে অপরাজিত ছিলেন লিটন দাস।

বোলাররাই জেতার অর্ধেক কাজ সেরে রেখেছিলেন। তানজিম সাকিব, শরিফুল ইসলাম, সৌম্য সরকারদের তোপে ৩১.৪ ওভারে ৯৮ রানেই গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটিই তাদের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড।

নেপিয়ারে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টস জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।

তানজিম সাকিবের। তবে আজ (শনিবার) নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে শুরুটা দারুণ করেন তানজিম সাকিব।

সাফল্য পেতে বেশি সময় লাগেনি। কিউই ইনিংসের চতুর্থ ওভারের শেষ বলে তিনি সাজঘরে ফেরান রাচিন রাবিন্দ্রকে। ধারাবাহিকভাবে ভালো বল করে তানজিম সাকিব বিভ্রান্ত করেন নিউজিল্যান্ড ওপেনারকে।

সাকিবের মিডলে পিচ করা বলে ব্যাট ছুঁইয়ে রাচিন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে ধরা পড়েন ১২ বলে ৮ করে। ১৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।

এরপর অষ্টম ওভারে সাকিবের বাউন্সে পুল করতে গিয়ে মিসটাইমিংয়ে মিডঅনে দাঁড়ানো শান্তর হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেন হেনরি নিকোলস (১২ বলে ১)। ২২ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড। তানজিম সাকিব নিজের প্রথম স্পেলে ৫ ওভারে ১ মেইডেনসহ মাত্র ৯ রান দিয়ে নেন দুটি উইকেট।

তৃতীয় উইকেটে বিপদ কাটানোর চেষ্টা করেন টম ল্যাথাম আর উইল ইয়ং। তবে ৫৫ বলে তাদের ৩৬ রানের জুটিটি ১৭তম ওভারে এসে ভেঙে দেন শরিফুল ইসলাম। সেট হওয়া কিউই অধিনায়ক টম লাথাম ডিফেন্ড করতে গিয়েও স্টাম্প বাঁচাতে পারেননি। বোল্ড হয়ে ফেরেন ৩৪ বলে ২১ করে।

নিজের পরের দুই ওভারে আরও দুই উইকেট তুলে নেন শরিফুল। ১৯তম ওভারে আরেক সেট ব্যাটার ইয়ংকে ফেরান বাঁহাতি এই পেসার।গালিতে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ধরা পড়েন ইয়ং। ৪৩ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ২৬ রান।

২১তম ওভারে শরিফুলের শিকার মার্ক চ্যাপম্যান। ২ রান করে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন কিউই ব্যাটার। ২৩তম ওভারে আবার তানজিম সাকিবকে আক্রমণে ফেরান শান্ত। এবার প্রথম বলেই উইকেট। টম ব্লান্ডেল (১৭ বলে ৪) ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দেন মিরাজের হাতে। ৭০ রানে ৬ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।

স্বীকৃত ব্যাটারের মধ্যে ছিলেন কেবল জর্জ ক্লার্কসন। তবে উইকেট ধরে রাখতে চেয়েও পারেননি তিনি। পার্টটাইমার সৌম্য সরকারের বলে ইনসাইডেজ হয়ে বোল্ড হন এই ব্যাটার, ২৩ বলে তিনি করেন ১৬ রান।

ক্লার্কসনকে তুলে নেওয়ার পর কিউইদের লেজটা ছেঁটে দিয়েছেন সৌম্যই। শেষ উইকেটের তিনটিই নেন এই অলরাউন্ডার। মোস্তাফিজুর নেন শেষ উইকেটটি।

শরিফুল ৭ ওভারে ২২ রান দিয়ে নেন ৩টি উইকেট। সমান ওভারে ১৪ রানে ৩ উইকেট তানজিম হাসান সাকিবের। সৌম্য সরকার ৬ ওভারে ১৮ রান খরচায় নেন ৩টি।

ইতিহাসগড়া এই জয়ের নায়ক তানজিম হাসান সাকিব।
ইতিহাসগড়া এই জয়ের নায়ক তানজিম হাসান সাকিব। কিউইদের তাদেরই মাঠে শুরুতেই কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন এই পেসার।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭.২ ওভারে মাত্র ২২ রান তুলতেই ২ উইকেট হারায় কিউইরা। দুটি উইকেটই নেন তানজিম সাকিব।

প্রথম ৫ ওভারের স্পেলে ১ মেইডেনসহ মাত্র ৯ রান দিয়ে দুটি উইকেট নেন সাকিব। তাতেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে কিউইরা। এরপর দ্বিতীয় স্পেলে বল হাতে নিয়ে প্রথম বলেই অধিনায়ককে উইকেট উপহার দেন তানজিম।

সবমিলিয়ে তার বোলিং ফিগার ছিল রীতিমত নজরকাড়া: ৭-২-১৪-৩! এমন বোলিংয়ের পর ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতেছেন ২৩ বছর বয়সী পেসার।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন