পরিবারের সবাইকে হারিয়ে শোক সাগরে প্রবাসী রোকেন বড়ুয়া

fec-image

শৈশবে বাবাকে হারানোর বেদনা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এমন এক ট্রাজেডির সম্মুখিন হবে জীবনে কল্পনাও করেনি কুয়েত প্রবাসী রোকেন বড়ুয়া। ষাটোর্ধ মা সখি বড়ুয়া, স্ত্রী মিলা বড়ুয়া এবং প্রিয়পুত্র রবিন বড়ুয়াকে নিয়ে সুন্দর সুখের সংসার সাজিয়েছিল। কিন্তু সেই সুখ যে এক রাতেই নি:শেষ করে দিল ঘাতক দুর্বৃত্তরা। তাদের কি এমন অপরাধ ছিল, কি ছিল আমার ৫ বছরের অবুঝ শিশুটির অপরাধ?

খবর পেয়ে প্রিয়জনদের শেষ দেখাটুকু দেখতে এসে হাসপাতালের মর্গ থেকে বাড়ি ফেরার পথে কাঁদতে কাঁদতে কথা গুলো বলছিল রোকেন বড়ুয়া।  ওই সময় রোকেন বলেন, জীবনে উপকার ছাড়া কারো ক্ষতি করিনি। ঘাতক যদি আমার জীবনের অর্জিত সমস্ত সম্পদ দাবি করে প্রিয় স্বজনদের বাঁচিয়ে রাখতো একটুও কষ্ট লাগত না। শেষ বার কুয়েত যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। শুধুমাত্র ব্যবসা বাণিজ্যের হিসেবটা চুকিয়ে আসার জন্য যাওয়া। তিনি বলেন, এই জীবনে যা আয় করেছি তা দিয়ে পুরো জীবন স্বাচ্ছন্দ্যে চলে যেত।

স্বজনহারা রোকেন বড়ুয়া দেশে ফিরেও নিজের সখের বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেনি। হত্যাকান্ডের আলামত রক্ষার্থে এক তলা পাকা বিল্ডিংয়ের মুল দরজায় তালা লাগিয়ে রেখেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কেননা, বাড়ির তিন রুমে ঘাতকরা চালিয়েছে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। বাড়িতে স্ত্রী-পুত্র, মা না থাকলেও মেঝেতে স্বজনদের রক্তের দাগ লেগে আছে। তার প্রিয় বাড়িটি যেন শ্মশানে পরিণত হয়েছে। ফলে এখন থাকতে হচ্ছে অন্যের বাড়িতে।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টায় হত্যাকান্ডের বিষয়টি জানাজানি হলেও তদন্তের স্বার্থে ওই দিন সন্ধ্যা ৬টায় নিহতদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এদিকে হত্যাকান্ডে জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে। কেননা, ঘটনার তিনদিন অতিবাহিত হলেও রহস্যের জট খুলতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে বলার মতো কোন তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন।

এ প্রসঙ্গে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আবুল মনসুর বলেন, হত্যাকান্ডে জড়িত অপরাধীকে শনাক্ত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। তদন্তের কাজটি শূণ্য থেকে শুরু করতে হয়েছে। আশা করি শিগগিরই শতভাগে পৌঁছাব এবং অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবো। ঘটনার পর থেকেই কেবল উখিয়ার পুলিশ প্রশাসন নয় ডিআইজিসহ একাধিক তদন্ত সংস্থা ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে। এমনকি পুলিশের আইজিও সার্বক্ষণিক খোঁজ নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।

স্বজনহারা রোকন বড়ুয়া জানান, এ ঘটনার সঙ্গে নিকটাআত্নীয়দের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। তাদের ব্যাপারে প্রশাসনকে তথ্য দিয়েছি।

ঘটনার পর থেকে আচরণবিধি এবং নানা কারণে সন্দেহের তীর শতভাগ শিপু বড়ুয়া’র স্ত্রী রিপু বড়ুয়া’র দিকে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের দায়িত্বশীল এবং স্থানীয়রা। তবে নিহত ৪ জনের মধ্যে সনি বড়ুয়া খোদ তার মেয়ে হওয়ায় বিষয়টা কিছুটা ম্লান হয়ে যায়। সর্বশেষ এই হত্যাকান্ডের পিছনে রিপু’র হাত রয়েছে বলে বিশ্বস্থসুত্রে জানা গেছে।

পুলিশের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে আসা ফরেনসিক এক্সপার্ট টিম ঘটনাস্থলে যে পায়ের ছাপগুলো পেয়েছে, তা একজনের এবং পরিশ্রমী মানুষের। সেখান থেকে ধারণা করা হচ্ছে, চারজনের হত্যাকারী একজন হওয়ার সম্ভাবনাই খুব বেশি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, উখিয়া থানার তদন্ত ওসি নুরুল ইসলাম মজুমদার জানান, হত্যাকান্ডের সাথে কারা জড়িত তা এখনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি এবং কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তবে পুলিশ হত্যাকান্ডের উদঘাটনের ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন