পর্যটকে জমজমাট কক্সবাজার

fec-image

ঈদের ছুটিতে আড়াই লাখ পর্যটক এখন কক্সবাজারে। সমুদ্রসৈকত ছাড়াও বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকেরা। ঈদের প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিন পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ১০ মে পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১০ লাখ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আজ বুধবার সকালে সৈকতের সুগন্ধা, সিগাল, লাবণী ও কলাতলী পয়েন্টে লাখের মতো পর্যটক ছিলেন। বিকেলের দিকে সৈকতের এসব পয়েন্টে আরও লাখের মতো পর্যটক ভিড় জমান। ট্যুরিস্ট পুলিশ, লাইফগার্ড ও হোটেল মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, ঈদের দ্বিতীয় দিনে সৈকতের চার কিলোমিটারে নেমেছেন অন্তত দুই লাখ পর্যটক। গতকাল মঙ্গলবার ৫০ হাজারের মতো পর্যটক সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে গোসলে নামেন।

সাগর উত্তাল থাকায় লাইফগার্ডের কর্মীরা পর্যটকদের হাঁটুপানির বাইরে না যাওয়ার জন্য সকালে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। বেলা ১১টার দিকে সুগন্ধা পয়েন্টে প্রচারণা চালাচ্ছেন সি সেফ নামের বেসরকারি একটি লাইফগার্ড প্রতিষ্ঠানের আটজন কর্মী। সবার গায়ে হলুদ রঙের শার্ট। লাইফগার্ডের কর্মীরা বাঁশি বাজিয়ে, কাউকে কোমরসমান পানিতে নেমে তুলে আনছেন।

সি সেফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল। ঢেউগুলো আগের তুলনায় বড় হয়েছে। সাগরের কয়েকটি স্থানে গুপ্তখালের সৃষ্টি হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে গোসলে নামতে নিষেধ করে বালুচরে লাল নিশানা টাঙানো হচ্ছে, কিন্তু সেদিকে কারও নজর নেই। এত বিপুলসংখ্যক পর্যটক সামাল দিতে ৩০ জন লাইফগার্ড কর্মীকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

প্রচণ্ড গরমে অস্থির পর্যটকদের বালুচরে খাওয়ার পানি সরবরাহ, অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। ভিড়ের মধ্যে কারও শিশুসন্তান হারিয়ে গেলে খুঁজে বের করা, ঝুঁকিমুক্ত গোসল ও দর্শনীয় স্থানগুলোতে নিরাপদ ভ্রমণের বিষয়ে সচেতন করছে পুলিশ। পর্যটকদের অভিযোগ জানানোর জন্য সৈকতে পৃথক সাতটি তথ্যকেন্দ্র ও পর্যবেক্ষণকেন্দ্র খুলেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। এ ছাড়া পর্যটকদের হয়রানি রোধসহ নানা বিষয় দেখভালের জন্য জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পৃথক চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে আছেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, ঈদের প্রথম দুই দিনে সৈকত ভ্রমণে এসেছেন আড়াই লাখের বেশি পর্যটক। সৈকত ভ্রমণের পাশাপাশি পর্যটকেরা টেকনাফ, উখিয়া, রামু, চকরিয়া ও মহেশখালীর বিনোদনকেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থানগুলোতে যাচ্ছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশের দুই শতাধিক সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন বলে তিনি জানান।

ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ঈদের সাত দিনের ছুটিতে ১০ লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটবে। ইতিমধ্যে পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউসের ৯৭ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছে।

সকাল থেকে দেখা গেছে, সৈকতে ভ্রমণের পাশাপাশি পর্যটকেরা ছুটছেন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, দারিয়ানগর পর্যটনপল্লি, হিমছড়ি ঝরনা, পাথুরে সৈকত ইনানী ও পাটুয়ারটেক, টেকনাফ সমুদ্রসৈকত, মাথিন কূপ, নাফ নদীর মিয়ানমার সীমান্ত, রামুর বৌদ্ধপল্লি ও চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক দেখতে। বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে অনেকে ছুটছেন মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির ও সোনাদিয়াতে।

পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়ে সৈকত ও আশপাশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাঙাভাব ফিরে এসেছে, জমেছে ব্যবসা-বাণিজ্য। এবার পর্যটন খাতে ঈদের ছুটির সাত দিনে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার ব্যবসার আশা করছেন তাঁরা।

কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় ঢুকে খাবারের মান যাচাই করছে। তিনি বলেন, খাবারের মূল্যতালিকা টেবিলে রাখার নির্দেশনা আছে। মূল্যতালিকা দেখেই খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, অন্যান্যবারের তুলনায় এবার পর্যটকদের নিরাপত্তা ও হয়রানির বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কোনো রকমের হয়রানি হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

সূত্র: প্রথমআলো

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন