পাঁচ বছরেও চালু হয়নি দীঘিনালার পানি শোধনাগার প্রকল্প: চুরি হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি

Pani shodhonagar pic

দিদারুল আলম রাফি, উপজেলা প্রতিনিধি, দীঘিনালা:

খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পানি শোধনাগার কেন্দ্র ৫ বছরেও চালু হয়নি। ফলে উপজেলার প্রায় ২০,০০০ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে সুপেয় ও বিশুদ্ধ পানি থেকে। উপরন্তু নদীনালার পানি ব্যবহার করে নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ইতোমধ্যে পরিত্যাক্ত শোধনাগারটির অনেক মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে শোধনাগার চালু করা নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিভাগ ও বিদ্যুৎ বিভাগ দোষ চাপাচ্ছে একে অপরের ঘাড়ে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালের দীঘিনালা উপজেলা সদরে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ও প্রায় ২ লক্ষ গ্যালন পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন শোধনাগারটি নির্মাণ ২০০৩ সালে শুরু হয়ে শেষ হয় ২০০৯ সালে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ার অজুহাতে এখনও শোধনাগারটি চালু করেনি। দীঘিনালা উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম সরকার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘শোধনাগারটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার কারনেই যত সমস্যা’। শোধনাগার রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরির বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন।

খাগড়াছিড়ি জেলা শহর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জনবহুল দীঘিনালা উপজেলায় ভৌগোলিক কারনে পানযোগ্য পানির উৎস দুষ্প্রাপ্য। বিষয়টি অনুধাবন করে খাগড়াছড়ির তৎকালীন এমপি ওয়াদুদ ভূইয়া সরকারী উদ্যোগে এই শোধনাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফলে ২০০৩ সালে এর নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু ব্যয়বহুল এই স্থাপনার নির্মাণ কাজ ২০০৯ সালে শেষ হলেও, এটি আজও কোনো উপকারে আসছে না এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষের। বরঞ্চ রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে ক্রমেই নষ্ট হচ্ছে এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। অথচ, বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হলে পানিকষ্ট থেকে মুক্তি পাবে বহু মানুষ।

তৎকালীন এমপি ও পার্বত্য চটগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াদুদ ভূইয়ার কাছে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে এর জন্য পরবর্তি সরকারসমূহের অযত্ন ও অবহেলাকে দায়ী করেন। তিনি আরও বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে এই প্রকল্পের জন্য অর্থ ছাড় করিয়েছিলাম। আমাদের সময়েই এই প্রকল্পের কাজ প্রায় সমাপ্ত হয়ে এসেছিল। কিন্তু মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় প্রকল্পটি চালু করে যেতে পারিনি। এই ব্যয়বহুল প্রকল্প চালু করার ক্ষেত্রে পরবর্তিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের এই ধরণের উদাসীনতা আসলেই অগ্রহণযোগ্য’। পরবর্তি নেতারা মানুষের প্রতি ন্যুনতম দরদ ও দায়িত্ববোধ অনুভব করলে, এই প্রকল্পটির সুফল অনেক আগেই মানুষ পেত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 এই পানি শোধনাগারের পাহারাদার মং থোয়াই মারমার স্ত্রী কোলোরানী বলেন, বিএনপির আমলে এই পানি শোধনাগারটি স্থাপন করা হলেও পরবর্তি সরকার আসার পর এটি এভাবেই পড়ে আছে। চালু না হওয়ার কারণে শোধনাগারের বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটারের তার চুরি হয়ে গেছে।

দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলুল জাহিদ পাভেল ‘পার্বত্যনিউজকে’ জানান, পানি শোধনাগার কেন্দ্র চালু করার ব্যপারে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে জনস্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। তবে উপজেলায় বিদ্যুৎ সমস্যা এবং লো-ভোল্টেজের কারণে শোধনাগারটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ (বিদ্যুৎ উন্নয়ন বৌর্ড) এর আবাসিক প্রকৌশল কর্মকর্তা যত্ন মানিক চাকমা লো ভোল্টেজ ও বিদ্যুৎ সমস্যার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দীঘিনালার পানি শোধনাগার কেন্দ্র স্থাপন সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ সরবরাহের আবেদনের ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরন করা হয়নি। তাই বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে সমস্যা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন