‘পাইথুই অং মারমা ভেঙ্গে দিয়েছে আমাদের বাড়িঘর: রাত কাটাচ্ছি খোলা আকাশের নিচে’

untitled-155

রাঙামাটি প্রতিনিধি:

রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার উপজাতীয় প্রভাবশালী পাইথুই অং মারমা কর্তৃক হামলা চালিয়ে বাঙ্গালী পরিবারের বসতভিটা ভেঙ্গে দেওয়া ও ঘটনা পরবর্তী মামলায় দ্রুত আসামীদের গ্রেফতারের দাবিতে রাঙামাটিতে মানববন্ধন করেছে  ভুক্তভোগী কুলসুমার পরিবার। মানববন্ধনটি সোমবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। ভুক্তভোগী পরিবার মানববন্ধনে অভিযোগ করে বলেন, ‘সন্ত্রাসী পাইথুই অং মারমা ভেঙ্গে দিয়েছে আমাদের বাড়িঘর। এরপর থেকে আমরা খোলা আকাশের নিচেই রাত কাটাচ্ছি।’

মানববন্ধনে ভুক্তভোগী পরিবার আরও বলেন, ‘কাউখালী উপজেলার কলমবতি ৯নং ওয়ার্ডে বহু বছর ধরে জীবনযাপন করে আসছি আমরা। অথচ গত ১৬ অক্টোবর শনিবার দুপুরে উপজাতীয় সন্ত্রাসী পাইথুই অং মারমার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী আমাদের ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে দিয়ে আমাদের নানা ধরনের হুমকি দিয়ে আমাদের বসত ভিটা থেকে উচ্ছেদ করে দেয়। আজ ৮ দিন ধরে আমাদের কোন বাসস্থান না থাকায় আমরা রাস্তায় রাস্তায়  খোলা আকাশের নিচে  মানববেতর জীবন যাপন করছি।’

এছাড়াও ‘সন্ত্রাসী পাইথুই অং মারমাকে আইনের আওতায় এনে আমাদের বসত ভিটা আমাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি’ জানান  এ ভুক্তভোগী অসহায় কুলসুমার পরিবার।

উল্লেখ্য, এর কিছুদিনে আগে ঘটনার পরপর  সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের আদর্শগ্রাম এলাকার বাসিন্দা স্বামীহারা কুলসুমা তার দখলে থাকা খাস জমিতে অন্তত ৪০ বছর যাবৎ বসবাস করে আসছেন।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অসহায় কুলসুমার জমির উপর নজর পড়ে এলাকার প্রভাবশালী ইটভাটার মালিক পাইথুই অং মারমা (পার্থিব বাবু) সহ এলাকার আরও অন্যান্য কিছু ভূমি লোভীদের। ইটভাটার মাটি সংগ্রহ ও উক্ত জায়গায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য পার্থিব বাবু তার বাহিনী দিয়ে বসতঘরের জায়গাটি দখলে নিতে চেষ্টা চালায়। পুরো জায়গা দখলে নিতে না পারলেও ইতিমধ্যে কুলসুমার অনেক জায়গা তারা দখল করে নিয়েছে।

১৬ অক্টোবর কুলসুমার ৫০ ফুট লম্বা বসতঘরটি এক্কেবারে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। আর সেই ঘরের এককোণে বসে বিলাপ করছের কুলসুমা ও তার সন্তানরা। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কুলসুমা এগিয়ে জানান, তিন ছেলে, দুই মেয়ে ও পূত্রবধূসহ নাতিকে নিয়ে বসবাস করে আসছেন তিনি। বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি ধামকি দেওয়ার পর অবশেষে মামলা দিয়ে হয়রানী করে অর্থনৈতিকভাবে তার পরিবারকে চরম ক্ষতির সম্মুখিন করা হচ্ছে।

এতো কিছুর পরও না পেরে সর্বশেষ মামলা দিয়ে এবং মারধর করে আহত করা হয়, কুলসুমা ও তার মেয়েসহ দুই ছেলেকে। এতে করে তারা মামলায় জামিনের জন্য রাঙামাটির আদালতে গেলে, রোববার দুপুরে সন্ত্রাসীরা এসে ধারালোর অস্ত্রের আঘাতে খুটিগুলো কেটে মাটিতে লুটিয়ে দেয় বৃদ্ধার একমাত্র বসতঘরটি।

এসময় লুটপাট করা হয় তার মূল্যবান জিনিসপত্র। পরে একই দিন সন্ধ্যায় কাউখালী থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে সেখানেও মামলা নিতে গড়িমসি করা হয় পুলিশ। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, স্থানীয় এক নেতার মধ্যস্থতায় স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিয়ে মিমাংসা করা হবে।

এদিকে ঘটনার পর থেকে শশুর বাড়ি থেকে বেড়াতে আসা মেয়ে, ছেলের বউ নাতি-নাতনিসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীব যাপন করছে ষাটোর্দ্ধ কুলসুমা। কান্নাজড়িত কন্ঠে কুলসুমা বেগম জানান, পাথিব বাবু স্থানীয় আঞ্চলিক দলের নেতা। তার অনেক প্রভাব রয়েছে।

চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ’র সাথে রয়েছে তার বিশেষ সখ্যতা। সেই কারণে তার প্রভাবে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কাউখালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শেষ মেষ মঙ্গলবার ভূক্তভোগিদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ নেয়। মামলার নাম্বার হলো- ৭ তারিখ: ১৮/১০/২০১৬ইং।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত পাথিব বাবুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এসবই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এছাড়া উক্ত জায়গাটি তার দাদার সম্পত্তি বলেও দাবি করেন তিনি। তাহলে কিভাবে ৪০ বছর ধরে উক্ত জায়গায় কুলসুমা বসবাস করছেন এমন প্রশ্নের কোন উত্তর তিনি দিতে পারেনি তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন